বাংলারজমিন

মানবজমিন-এ সংবাদ প্রকাশ

রাঙ্গামাটিতে সড়ক মেরামতে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে দুদক

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

১৪ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৮:০৪ অপরাহ্ন

রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগ কর্তৃক জেলার ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে সড়ক মেরামতের নামে কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে বহুল প্রচারিত প্রথম শ্রেণির জাতীয় গণমাধ্যম মানবজমিন পত্রিকায় ‘বছর না যেতেই সড়কে ধস’- শিরোনামে গত ১৮ই ডিসেম্বর খবর প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের। উক্ত অনিয়মের বিষয়টি আমলে নিয়ে সরজমিনে তদন্তে নেমেছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাঙ্গামাটিস্থ দুদকের সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জিএম আহসানুল কবিরের নেতৃত্বে এই তদন্তাভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় দুদকের এএসআই নবিউল ইসলাম, রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের সড়ক উপ-বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মসউদুর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান ও শেখ ফতেহ এলাহী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মি. মোহাম্মদ আমিনুল হক (প্রা:) লিমিটেড এর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
দুদক সূত্র জানিয়েছে সম্প্রতি ‘রাঙ্গামাটিতে সড়ক বিভাগের সোয়া কোটি টাকার কাজে বছর না যেতেই ধস’- শিরোনামে স্থানীয়-আঞ্চলিক ও জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদটি দুদক প্রধান কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে সরজমিন তদন্তের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট দেয়ার জন্য দুদকের রাঙ্গামাটি কার্যালয়স্থ এনফোর্সমেন্ট টিমকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনার আলোকে মানবজমিন এর রাঙ্গামাটি জেলার সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক রাঙ্গামাটি সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মানিককে সঙ্গে নিয়ে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উক্ত কাজগুলো বাস্তবায়নাধীন ঘটনাস্থলগুলো সরজমিন পরিদর্শন করা হয়। এ সময় প্রকাশিত খবরের সত্যতাও পেয়েছেন এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যগণ। দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে সরজমিন প্রত্যক্ষকরণের পাশাপাশি আমরা উক্ত কাজগুলোর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখতে সিডিউল ও ইস্টিমেট শিট এর কপি দুদক কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য বলে দেয়া হয়েছে। সবকিছু দেখে তারপর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিপোর্ট দেবেন রাঙ্গামাটি দুদক কর্তৃপক্ষ। উক্ত রিপোর্টের আলোকে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনানুসারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত:  রাঙ্গামাটির ঘাগড়া/চন্দ্রঘোনা/বান্দরবান সড়কে গেল বর্ষা মৌসুমের আগে জরুরি সড়ক মেরামতের নামে সোয়া  কোটি টাকার মেইনটেনেন্স কাজ করা হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই পুরো টাকাগুলো জলে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এই সড়কের অন্তত ৪টি স্পটে সড়ক ধসরোধে অস্থায়ী ধারক দেওয়াল নির্মাণের এই কাজে লোহার পাইপ ব্যবহার করা হলেও সনাতন পদ্ধতির গাছ দ্বারা বল্লি প্যালা সাইডিংয়ের চেয়েও এই কাজ নিন্মমানের হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর মতে জরুরি মেরামতের নামে এই কোটি টাকার পুরোটাই পকেটস্থ করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থসালে রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের উদ্যোগে ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে রাঙ্গামাটির ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বাঙ্গালহালিয়া-বান্দরবান সড়কে কয়েকটি স্থানে এমএস পাইপ প্যালাসাইডিং, বেম্বো প্যালাসাইডিং, আর্থ-ফিলিং, সেন্ডব্যাগ লায়িং কাজের লক্ষ্যে ইজিপি আইডি নং-৪০২৭৯৪, ৪০২৮১০, ৪৩৬৩৭০, ৩৯২৪৫১ এই চারটি কাজের বিপরীতে ২৭০৮৫৫২.৩৯, ৬০১০৫৫৯.৯১, ১১৫৯৭১৬.১৮ ও ৩৭২৯১১৬.৭৩ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয় ঢাকার ঠিকানা ব্যবহারকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মি. মোহাম্মদ আমিনুল হক (প্রা:) লিমিটেডকে। এই প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের লোকজন গত কয়েকমাস আগে উক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করেছেন বলে সরজমিন ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা সড়কে গেলে সেখানকার বাসিন্দাগণ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
কাপ্তাইয়ের কুকিমারা, মুরালিপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাগণ জানিয়েছেন, লোহার ৬ ইঞ্চি মোটা পাইপগুলো কোনো রকম দাঁড় করিয়ে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ কাজ হয়ে গেছে বলে চলে যায়। বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হওয়ার পরেও  লোহার পাইপগুলো ধসে পড়ে। এদিকে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুকিমারা চেকপোস্টের সামনের সড়কেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা ড্রেনসহ সড়কের ওপরের অংশে বেশ লম্বা ফাটল ধরেছে। মুরালিপাড়া এলাকায় স্থাপনের কিছুদিনের মধ্যেই হেলে পড়েছে এমএস পাইপ প্যালাসাইডিং।
সম্প্রতি সরজমিন এই স্পটগুলো পরিদর্শনে জনগণের অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।
এদিকে রাঙ্গামাটির সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই স্থায়ী টেকসই এই একই সড়কগুলোতে আবারো কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। সেকাজগুলো পর্যায়ক্রমে শুরু করা হবে। রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন, আমাদের কাছে উক্ত কাজগুলো নিয়ে অভিযোগ এসেছে। তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত ঠিকাদারের জামানত দেয়া হয়নি। শিগগিরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে এবং যেসব কাজ ঠিকমতো হয়নি সেগুলো আবার করিয়ে নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status