বিশ্বজমিন

বাতের ওষুধে বাঁচতে পারে কোভিড রোগীর জীবন

মানবজমিন ডেস্ক

২০২১-০১-০৯

রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (বাত) নিরাময়ে ব্যবহৃত দুটি ওষুধ— টসিলিজুমাব ও সারিলুমাব— করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) গুরুতরভাবে আক্রান্ত রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। গবেষকরা জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকা প্রতি ১২ জন রোগীর মধ্যে একজনের প্রাণ বাঁচাতে সহায়ক হবে ওষুধ দুটি। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

বৃটেনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) থেকে করোনার চিকিৎসায় টসিলিজুমাব ব্যবহার করা শুরু করবে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস) কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি ৮০০ রোগীর ওপর চালানো এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, টসিলিজুমাব ও সারিলুমাব প্রয়োগে করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি ২৪ শতাংশ হ্রাস পায়। একইসঙ্গে রোগীদের আইসিইউতে থাকার সময়সীমাও কমিয়ে আনে।

বিশ্বের ১৫টি দেশে চালানো এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের অবস্থা উন্নতিতে টসিলিজুমাব ভূমিকা রাখে। তবে পরবর্তীতে অন্যান্য পরীক্ষায় মিশ্র ফলাফল দেখা গেছে ওষুধটির ক্ষেত্রে।

টসিলিজুমাব ও সারিলুমাব উভয়ই আইএল-৬ রিসেপ্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত। ওষুধগুলো প্রোটিনের প্রভাব কমাতে সহায়ক। প্রোটিনের মাত্রা বেশি হলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যধিক সক্রিয় হয়ে পড়ে, যার ফলে শরীরে বিপজ্জনক মাত্রার প্রদাহ দেখা দেয়। অনেক করোনা রোগীর মধ্যে এমনটা দেখা গেছে।

ওষুধ দুটি নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে ১৫টি দেশে ৩ হাজার ৯০০ করোনা রোগীর উপর নতুন এক ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ‘রিম্যাপ-ক্যাপ’ শীর্ষক পরীক্ষাটির ফলাফল এখনো পিয়ার-রিভিউড বা অন্য বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে পরীক্ষিত হয়নি।

গবেষকরা প্রাপ্তবয়স্ক করোনা রোগীদের সাধারণ চিকিৎসা বা আইসিইউতে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টসিলিজুমাব বা স্যারিলুমাবের একটি মিশ্রণ প্রয়োগ করেছেন। তবে প্রাপ্যতার অভাবে সারিলুমাব কম ব্যবহৃত হয়েছে। এভাবে ২১ দিন ধরে রোগীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকরা।

অবশেষে ৬টি দেশের হাসপাতালে ৭৯২ জন রোগীর ফলাফল যাচাই করে দেখা গেছে যে, টসিলিজুমাব ও সারিলুমাব করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়েছে।

ফলাফল অনুযায়ী, হাসপাতালগুলোয় করোনার জন্য নির্ধারিত সাধারণ সেবা পাওয়া রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল ৩৫.৮ শতাংশ (১৪২/৩৯৭)। অন্যদিকে, টসিলিজুমাব ও সারিলুমাবপ্রাপ্ত রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ছিল যথাক্রমে ২৮ শতাংশ (৯৮/৩৫০) ও ২২.২ শতাংশ (১০/৪৫)। উভয় ওষুধ মিলিয়ে হাসপাতালগুলোয় করোনায় মৃত্যুহার দেখা গেছে ২৭.৩ শতাংশ (১০৮/৩৯৫)।  অর্থাৎ ওষুধগুলো ব্যবহারে করোনায় সাধারণ চিকিৎসা প্রাপ্তদের তুলনায় নিশ্চিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমেছে ৮.৫ শতাংশ।

গবেষণাটির শীর্ষ বৃটিশ তদন্তকারী ও ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক অ্যান্থনি গর্ডন বলেন, ১২ জন রোগীকে এই চিকিৎসা দিলে একজনের প্রাণ বাঁচবে।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, টসিলিজুমাব বা সারিলুমাব প্রয়োগে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন। সাধারণ চিকিৎসা প্রাপ্ত রোগীদের তুলনায় ৭ থেকে ১০ দিন আগেই আইসিইউ ছাড়তে পারেন।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও উদীয়মান সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক পিটার হরবি করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধ খুঁজে বের করতে ‘রিকভারি ট্রায়াল’ নামে একটি পরীক্ষা চালাচ্ছেন।

রিম্যাপ-ক্যাপ নিয়ে তিনি বলেন, এ পরীক্ষার ফলাফলগুলো সুখবর। এতদিন কেবল স্টেরয়েড - ডেক্সামেথাসন ও হাইড্রোকর্টিসন ভেন্টিলেটরে থাকা করোনা রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

রিম্যাপ-ক্যাপ পরীক্ষার ৮০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীকে টসিলিজুমাব ও সারিলুমাবের পাশাপাশি ডেক্সামেথাসন বা ভিন্ন কোনো স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে।

হরবি বলেন, রিকভারি ট্রায়ালে দেখা গেছে যে, ডেক্সামেথাসন প্রয়োগে ভেন্টিলেটরে থাকা করোনা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১২ শতাংশ কমে যায়। আর নতুন পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এরসঙ্গে টসিলিজুমাব ও সারিলুমাব প্রয়োগে মৃত্যুর ঝুঁকি আরো ৮ শতাংশ কমছে।

তবে হরবি জানিয়েছেন, ডেক্সামেথাসনের তুলনায় টসিলিজুমাব ও সারিলুমাবের মূল্য অনেক বেশি। যার ফলে কেবল গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রেই ওষুধ দুটি প্রযোজ্য। একজন রোগীকে অন্তত ৭৫০ পাউন্ড মূল্যের টসিলিজুমাব ও ১০০০ পাউন্ড মূল্যের সারিলুমাব দিতে হয়। অন্যদিকে, প্রতি রোগীর জন্য মাত্র ৫ পাউন্ড মূল্যের ডেক্সামেথাসন প্রয়োজন হয় ।

অবশ্য গর্ডন বলেছেন, ওষুধ দুটি প্রয়োগে আইসিইউ’র উপর চাপ কমবে। তিনি জানান, প্রতিদিন আইসিইউতে থাকার খরচ প্রায় ২০০০ পাউন্ডের মতো।

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status