অনলাইন

বৃটেনে  করোনা আক্রান্ত শায়েখ আবদুল কাইয়ুম  

সাঈদ চৌধুরী

৬ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ৩:৫৭ অপরাহ্ন

শায়েখ আবদুল কাইয়ুম বৃটেনে একজন প্রখ্যাত ইসলামী পন্ডিত। প্রতি জুমাবারে যার হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য শুনার জন্য এলএমসিতে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। কয়েক হাজার মহিলাও সেখানে সমবেত হন। তিনি ইউরোপের সবচেয়ে বিখ্যাত স্কলারদের একজন। বিভিন্ন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে  নিয়মিত বক্তব্য রাখেন। এই বুজুর্গ আলেম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন জেনে সর্বত্র উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজার হাজার মানুষ তাঁর আরোগ্য কামনা করছেন। 

ইস্ট লন্ডন মসজিদ (ইএলএম) ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের (এলএমসি) ইমাম ও খতিব শায়েখ আবদুল কাইয়ুম অত্যন্ত ধীর ও গম্ভীর কন্ঠে কথা বলেন। পবিত্র কোরআন সামনে রেখে লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা করেন। মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে হাদিসের দলিল সহকারে ব্যাখ্যা করেন। সাহাবায়ে কেরামের আত্মত্যাগ ও দু:সাহসী সংগ্রামের নির্ভুল ঘটনা প্রবাহ বর্ণনা করেন। ইসলামের মৌলিক চেতনা জাগ্রত করতে বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থ থেকে উদাহরণ উপস্থাপন করেন।

 শায়খ আবদুল কাইয়ুম উপমহাদেশে ধর্মের নামে বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট জঞ্জাল ও মিথ্যাচার খন্ডনের জন্য অত্যন্ত নিপুনতার সাথে সঠিক তথ্য তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে অসারের তর্জন গর্জন নেই। গুণহীনের বৃথা আস্ফালন নেই। এই বয়ান শুনে কোন উত্তেজনা দপ করে জ্বলে উঠে না, আবার ফুস করে নিভে যায়না। তাঁর বয়ানে বিস্ময়ভরা আর্তনাদ আছে, কিন্তু বানোয়াট কাহিনী নেই।  প্রতিটি কথা কোরআন-হাদিস থেকে আহরিত মনিমুক্তা খচিত।

এলএমসি‘তে বহু জাতি-গোষ্ঠির মানুষ প্রতিদিন আসেন। সপ্তাহে ৩০/৩৫ হাজার মানুষ এখানে নামাজ আদায় করেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বহু সংগঠন ও সংস্থার কর্ণধার, স্কলার ও প্রতিনিধিত্বশীল জ্ঞানী-গুণী মানুষ এসে ইমাম সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করেন। বৃটেনের সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপি সহ সরকারী কর্মকর্তা ও মূলধারার বুদ্ধিজীবীগন আসেন। মানবাধিকার থেকে শুরু করে জীবন ও জগতের নানা রহস্য নিয়ে গভীর আলোকপাত করেন তারা। শায়েখ আবদুল কাইয়ুম তাঁর প্রজ্ঞা ও বিনয়শীল আচরণে সবাইকে আলিঙ্গন করেন। সবাই তাকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উপকারী ও কল্যাণমিত্র হিসেবে বিবেচনা করেন। আর তিনি ধীরে ধীরে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নীতিমালায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে পরামর্শ প্রদান করেন।

 

ইসলাম ও আধুনিক শিক্ষায় প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী শায়খ আবদুল কাইয়ুম বাংলা, ইংরেজী ও আরবীতে অনর্গল কথা বলেন। তাই বৃটেনে আমাদের নতুন প্রজন্মও তাঁর প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট। ছেলে-বুড়ো সকলেই তাঁর তাফসির শুনেন। সমাজের সকল মহলে তিনি একজন গ্রহণযোগ্য স্কলার। যার বক্তব্যে প্রাণের স্পন্দন আছে। হৃদয় আলোড়িত হয়। অপরাধ থেকে নিস্কৃতি বোধ জাগ্রত হয়। ক্ষমতার লোভ ও লালসায় নিষ্পেষিত মানুষ শান্তির পথ খুঁজে পায়। ফলে বিভিন্ন ধর্মের বহু পন্ডিত জন তাঁর কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।

 বাংলাদেশের চট্টগাম জেলায় জন্ম নেয়া শায়খ আবদুল কাইয়ুম তরুণ বয়সে উচ্চতর শিক্ষার জন্য স্বপরিবারে সৌদী আরব চলে যান। তিনি রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সৌদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে বিএ (অনার্স) এবং টিচিং অ্যারাবিক টু নন অ্যারাবস বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ফ্রান্সের ইউরোপিয়ান কলেজ অব ইসলামিক স্টাডিজ ও ওয়েলসে আরবি ও শরিয়াহ বিষয়ের উপর পড়াশোনা করেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের পন্ডিতদের কাছেও তিনি বেশ কিছুদিন শিক্ষালাভ করেছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জর্ডানের শাইখ আহমদ হাওয়া, যার সান্নিধ্যে থেকে তিনি শাফেঈ ফিকহ্ অধ্যয়ন করেন। সিরিয়ার শাইখ মুনির আল-জাওয়াদ আল-তিউনিসি, যার সান্নিধ্যে থেকে তিঁনি আরবি ব্যাকরণ অধ্যয়ন করেছেন।

 শায়েখ আব্দুল কাইয়ুম বৃটেনে আসার আগে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। স্বপরিবারে বিলেত চলে আসার পর তিনি ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারে ইমাম ও খতিব নিযুক্ত হন। তিনি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইমামস অ্যান্ড রাব্বিস এর একজন সদস্য, যেটি জোসেফ ইন্টারফেইথ (আন্তঃধর্ম) ফাউন্ডেশনের একটি রেজিস্টার্ড সংগঠন। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক ভাবে আলোচিত ডিক্লারেশন অব ইস্তাম্বুল এর পরিবেশবাদী ঘোষণাপত্রের একজন স্বাক্ষরকর্তা। বর্তমানে তিঁনি শায়েখ আকরাম নাদভির সঙ্গে হাদিস এবং ইসলামিক সাইন্সের উপর স্টাডি করছেন।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status