প্রথম পাতা

চীনা ভ্যাকসিন আবার আলোচনায়

স্টাফ রিপোর্টার

৫ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৩৭ অপরাহ্ন

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে বিকল্প পথ খুঁজছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে সরকারের হাতে আছে চীনা কোম্পানি আনুই জিফেইয়ের দেয়া প্রস্তাব। আনুন জিফেইয়ের টিকার নাম আরভিডি-ডিমার। গত ২রা সেপ্টেম্বর চীনের আনুই জিফেই তাদের উদ্ভাবিত টিকা পরীক্ষার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়। বর্তমানে এ প্রস্তাবটি যাচাই- বাছাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে বলে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এর আগে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের টিকার বিষয়ে ইতিবাচক ছিল সরকার। কিন্তু অর্থায়নের জটিলতায় ওই টিকার ট্রায়াল করা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুর রহমান বলেন, চীনের একটি প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ’র সঙ্গে কাজ করছে। আরো একটি প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি’র সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে ভ্যাকসিন যেখান থেকেই আসুক না কেন তা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়ম-নীতিমালা মেনে আসতে হবে। এ রকম আবেদন মন্ত্রণালয়ে এলে মন্ত্রণালয় অবশ্যই তা বিবেচনা করবে। তবে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে হয় না। এটি হয় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। জানা গেছে, চীনের আনুই জিফেই নিজস্ব খরচে টিকার পরীক্ষা চালানোর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। পরীক্ষা সফল হলে বাংলাদেশে টিকার গবেষণা ও উৎপাদনের জন্য আনুন জিফেই কারখানাও করতে পারে। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে পরীক্ষার ক্ষেত্রে কারিগরি দিকগুলো যথাযথভাবে যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রস্তাবটিতে সাড়া দেওয়া যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মত দেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, পরীক্ষার অনুমোদন পেতে আনুই জিফেইকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রস্তাব দিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, আনুই জিফেইকে বেশকিছু শর্ত মেনে বিস্তারিত প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে অন্যতম একটি হলো, আনুই জিফেই যদি পরীক্ষা করতে চায়, তাহলে চীন সরকারকে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিতে হবে।  কোভিড ট্রাকার সূত্রে জানা গেছে, চীনে আনুই জিফেই আরভিডি-ডিমার টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ করেছে। এখন প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশে তৃতীয় ধাপে পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। উজবেকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। তবে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে টিকা উৎপাদনে আগ্রহী নয় প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বে ১৫টি টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। এগুলোর মধ্যে আনুই জিফেইয়ের আরভিডি-ডিমার টিকাটি রয়েছে। বিশ্বে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও মডার্না, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি, চীনের সিনোফার্ম ও ভারতের কোভ্যাক্সিন নামের টিকা অনুমোদন পেয়েছে।
গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, সিরাম ইনস্টিটিউটের ওপর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন রপ্তানিতে কয়েক মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। ফলে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন গতকাল জানিয়েছেন, বাংলাদেশ যথাসময়ে ভারত থেকে  করোনার টিকা পাবে। ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে ভারত ও চীনের সঙ্গে আলোচনা করেছিল বাংলাদেশ। তবে চীনের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। ২০২০ সালের আগস্টেই চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেককে বাংলাদেশে হিউম্যান ট্রায়াল চালানোর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। তবে সরকার ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অর্থায়নে অসম্মতি জানানোয় চুক্তি বাতিল হয়। বাংলাদেশে ট্রায়াল চালানোর জন্য অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছিল চীন। এতে খরচ পড়তো প্রায় ৭০ লাখ ডলার। সিনোভ্যাক জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনে বিলম্ব হওয়ায় অন্য দেশগুলোকে এ সুযোগ দেয়া হয়। সিনোভ্যাক ও সিনোফার্মের ভ্যাকসিন সহ বিশ্বে ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে চীন। সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের গবেষণার ফলাফল উন্মুক্ত থাকায় এ ভ্যাকসিনটি আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদন ও সরবরাহের সম্ভাবনা অনেক বেশি। ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল ও চিলি সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন কিনছে। সিঙ্গাপুর সিনোভ্যাকসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগাম ভ্যাকসিন ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চীনা ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের আবেদন করবে হাঙ্গেরি। গত বছরের জুলাই থেকেই চীনের সামনের সারির কর্মী ও অধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (সিএনবিজি) জানিয়েছিল, ২০২১ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে সিনোভ্যাক।
সিনোভ্যাক একটি বিবৃতিতে জানায়, প্রতিষ্ঠানটি লক্ষ্যমাত্রা বার্ষিক ৩০ কোটি ডোজ উৎপাদন এবং ২০২০ সালের শেষ নাগাদ দ্বিতীয় চালানের উৎপাদন শুরু করা। বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬০ কোটিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানায় সংস্থাটি। চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের তৈরি ভ্যাকসিন ইতিমধ্যেই চীনে পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন পেয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনেও সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status