দেশ বিদেশ

অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী-

বাংলাদেশের একমাত্র চাওয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, এটি চ্যালেঞ্জও

কূটনৈতিক রিপোর্টার

৪ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার, ৯:৩৯ অপরাহ্ন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, নতুন বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রেখেছে সরকার। ১লা জানুয়ারি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির দপ্তরের মন্ত্রী থিন সোয়ে সহ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর পাঠানো ‘নিউ ইয়ার গ্রিটিংস’ সংক্রান্ত পত্রে তিনি প্রত্যাবাসনের আবশ্যকতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। মন্ত্রী বলেন, প্রত্যাবাসনই আমাদের অগ্রাধিকার, একই সঙ্গে এটি চ্যালেঞ্জও। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনক্লজ সভাকক্ষে অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই। নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রী থিন সোয়েকে চিঠি লিখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, চিঠিতে তাকে বলেছি, এ বছর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হোক। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, আপনারা (মিয়ানমার) রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দিয়ে ফিরিয়ে নেবেন বলেছেন, প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরির কথাও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কাজেই নববর্ষে আমাদের প্রত্যাশা, আপনারা কথা রাখবেন। অতীতে কথা রেখেছেন। নিজেদের লোকগুলো নিয়ে যান, কাজে লাগবে। আর তাদের ফিরিয়ে না নিলে অশান্তির আশঙ্কা আছে। চীনের মধ্যস্থতায় বেইজিংয়ে প্রস্তাবিত ত্রিদেশীয় বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার বৈঠকটি পিছিয়েছে। কারণ তাদের দেশে নির্বাচন ছিল। দেশটিতে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। এখন চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে (ত্রিপক্ষীয়) নতুন করে বৈঠকে উদ্যোগী হয়েছে। এটি নিয়ে কাজ চলছে। আমরা সবসময় তৈরি, তারা যখন তারিখ দেবে আমরা বৈঠকে বসবো। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, চীনের পাশাপাশি জাপানের কাছ থেকেও বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন বিষয়ে সহযোগিতা আশা করে। তার ভাষ্য ছিল এমনÑ মিয়ানমারে জাপানের অনেক বড় আকারের বিনিয়োগ আছে। তাই তাদের আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করতে অনুরোধ জানিয়েছি। জাপান আমাদের আশ্বস্ত করেছে। মিয়ানমারের ওপরে জাপানের অনেক প্রভাব আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটি চীনের উদ্যোগের বাইরে। তবে জাপানের উদ্যোগের কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি। আমরা বলেছি এবং তারা আমাদের প্রস্তাব পছন্দ করেছে। মন্ত্রী বলেন, চীন ও জাপানের মতো ভারতও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করার আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে চীনের আদলে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে ভারতের মধ্যস্থতা সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিষয়ে ঢাকার অবস্থান কি? তা মন্ত্রী স্পষ্ট করেননি। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত আমাদের বলেছে, তারা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ করবে এবং সহায়তা করবে। তারাও চায় রোহিঙ্গারা ফেরত যাক। ভারত, জাপান, চীনÑ সবাই বাংলাদেশের সঙ্গে একমত যে মিয়ানমারেই সমস্যার সমাধান নিহিত আছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, ভাসানচর নিয়ে বিদেশে মিথ্যা প্রচারণা আছে। বলা হচ্ছে, এটি ভেসে যাবে। কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকে আমরা চরটি দেখভাল করছি। সর্বশেষ আম্ফানেও ভাসানচরের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও মিডিয়াকে সেখানে (ভাসানচরে) নিয়ে যাবো। জাতিসংঘকে আগেও নিয়েছি এবং আরো দল যাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে ভূমিধস হতে পারে। অপরাধপ্রবণতা অনেক বেড়েছে। পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক সমস্যাও তৈরি হয়েছে। যেমন স্থানীয় ব্যক্তিদের মজুরি কমে গেছে। অপরদিকে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। মিয়ানমারের আচরণে খানিক পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মনে হচ্ছে তাদের ব্যবহারে পরিবর্তন হচ্ছে, এটা আমাদের আশাবাদী করেছে। এ জন্য আমরা দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। এমনকি আইনি কাঠামোর মধ্যেও কাজ করছি। যত ব্যবস্থা আছে সব নিয়ে কাজ করছি। মিয়ারমারকে যাচাই-বাছাই করার জন্য ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এরমধ্যে তারা ২৮ হাজার যাচাই-বাছাই করেছে, তারা এ কাজে অত্যন্ত ধীরগতিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যে ফোরামেই আলোচনা হোক না কেন, বাংলাদেশের একমাত্র চাওয়া প্রত্যাবাসন। তিনি বলেন, আমরা চাই- দ্রুত আমাদের ঘাড় থেকে এই বোঝা লাঘব হোক। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা তাদের স্বভূমে ফিরে যাক এবং শান্তিপূর্ণভাবে রাখাইনে বসবাস করুক।

জাতিসংঘের ভোট নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন- বিপক্ষে ভোট বা নীরব থাকা দেশগুলোর ‘কৌশলগত’ সিদ্ধান্ত: এদিকে রোহিঙ্গা প্রশ্নে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সর্বশেষ ভোটাভুটির ফল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, চীনসহ যেসব দেশ ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন বা ভারতসহ যেসব দেশ ভোট প্রদান থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিরত থেকেছে, এটি তাদের কৌশলগত সিদ্ধান্ত। আমরা এ ফলাফল নিয়ে খুশি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ১৩০টি নয় বরং মোট ১৩২টি ভোটে জাতিসংঘে রেজ্যুলেশনটি গৃহীত হয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ওই রেজ্যুলেশন মানা কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এটি মিয়ানমারকে চাপে রাখবে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সাফল্যও বটে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কিত জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ পরিষদ গৃহীত খসড়ায় চীনের পাশাপাশি রাশিয়াও বিরোধিতা করেছে। তারা প্রস্তাবের বিপক্ষে অর্থাৎ মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দিয়েছে। আর বাংলাদেশের বন্ধু ভারত, জাপানসহ ২৬ দেশ ভোট দেয়া থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিরত ছিল। ওই ভোটাভুটি নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। নেটিজেনরা এটাকে সরকারের ব্যর্থতা দাবি করে সমালোচনায় মুখর। কিন্তু ড. মোমেন বিষয়টিকে দেখছেন অন্যভাবে। তার মতে, যেসব দেশ রেজ্যুলেশনের বিরোধিতা করেছে তারা চায় বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করুক। আর ভারত, জাপান, শ্রীলঙ্কা ও সিঙ্গাপুরসহ যে ২৬ দেশ প্রস্তাবটির বিষয়ে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল তাদের বিষয়ে মন্ত্রীর দাবিÑ যারা অ্যাবস্টেইন করেছে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় আরো ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। তাই তাদের প্রতি আমাদের কোনো অসন্তুষ্টি নেই। সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে মিয়ানমারের ওপর তাদের উদ্দেশ্য কাজে লাগাতে জাতিসংঘে তারা নিরপেক্ষ থাকতে চেয়েছিলেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভোটাভুটির আগে ওই সব দেশ ঢাকার সঙ্গে কথা বলেছে। তাই সরকার তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status