এক্সক্লুসিভ
তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় (পর্ব-৪১)
কাজল ঘোষ
৩ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ৮:০৪ অপরাহ্ন
ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমরা অনেক ঘটনা শুনেছি যা কোনোভাবেই বুদ্ধিবৃত্তিক বা একাডেমিক সমস্যা ছিল না। ব্যাংকের এই ঘটনাগুলো ছিল মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাড়ির মালিকদের একটি গোলটেবিল বৈঠকে আমি এক নারীকে ১৯৯৭ সালে তার সঞ্চয় দিয়ে কেনা বাড়িটি নিয়ে গৌরবের কথা বলতে শুনেছি। সেই বাড়িটির ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময়ের এক মাস পিছিয়ে যাওয়ার পর ২০০৯ সালের শুরুর দিকে তিনি পরামর্শ চেয়ে ঋণদাতাদের সহায়তা চেয়েছিলেন। ঋণদাতাদের প্রতিনিধিরা বলেছিলÑ তাকে সহায়তা করবে। এর কয়েক মাসের মধ্যে তাদের চাহিদা অনুযায়ী তিনি বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র প্রস্তুত এবং সেগুলো ফ্যাক্স করেন। তার এই কাগজপত্রের কোনো জবাব দেয়া হয়নি। এ নিয়ে তিনি প্রশ্ন করলে তাকে রাখা হয় অন্ধকারে। এভাবেই তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।
এই লড়াইয়ের কাহিনী তিনি আমাকে বলেন। আমার কাছে যখন তিনি এই কাহিনী বলছিলেন তখন বারবার নিজের কান্নাকে নিবৃত্ত করতে লড়াই করে যাচ্ছিলেন। তবু তিনি বললেন, ‘আমি দুঃখিত, আমি জানি এটি শুধুই একটি বাড়ির গল্প...’ কিন্তু তিনি জানেন এবং আমরাও সবাই জানি এটি কখনই শুধু একটি বাড়ির গল্প নয়।
মার্চ মাসের শুরুর দিকে সর্ব প্রথম আমার ব্যক্তিগতভাবে মাল্টিস্টেট নিয়ে কথা বলা ও সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ হয়। দ্য ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব অ্যাটর্নি জেনারেল যা (এনএএজি) নাগ নামে পরিচিত। নাগের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন ডিসির ফেয়ারমন্ট হোটেলে। আমি আমার টিম নিয়ে সেখানে উড়ে গিয়েছিলাম। সেখানে পঞ্চাশ জন অ্যাটর্নি জেনারেল উপস্থিত ছিলেন। সকলেই রাজ্যের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী বসেছিলেন। আমার বসার জায়গা হয়েছিল আরকানসাস এবং কলোরাডো রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলদের মাঝখানে।
আলোচনা আবর্তিত হয়েছিল মাল্টিস্টেট তদন্ত থেকে সাধারণ ব্যবসা পর্যন্ত। আলোচনায় হঠাৎ করেই আমার কাছে স্পষ্ট হয় যে, তদন্ত শেষ হয়নি। এখনো এ বিষয়ে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে। যদিও তারা এটির সুরাহা নিয়ে কথা বলছিল। তাদের সামনে অনেক বিষয় ছিল। আমার ভেতর এমন একটি অনুভূতি জন্মেছিল যে, মৌলিকভাবেই এটা একটি সমাধান হয়ে যাওয়া বিষয়। বাকি যা ছিল তা হলো অর্থটা রাজ্যের মধ্যে ভাগ করে দেয়া এবং প্রকৃতপক্ষে সেটাই ঘটেছিল।
আমি ছিলাম বোকা। সেই নাম্বারের ভিত্তি কি ছিল? তারা এটা নিয়ে কীভাবে কাজটি শেষ করবে? আমরা কীভাবে এ বিষয়গুলোর সমাধানে পৌঁছবো যেখানে আমরা তদন্তই শেষ করতে পারিনি।
তবে আমাকে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করেছিল যা তা হলো খেয়ালখুশিমতো ডলারটা বুঝে নেয়া। এটা ছিল সমাধানের বিনিময় মাধ্যম। ভবিষ্যতে দাবিগুলোর বিপরীতে গণহারে অবমুক্তি ব্যাংকগুলো কীভাবে দিচ্ছেÑ অপরাধ যাই হোক না কেন একটি ব্ল্যাঙ্ক চেকের মাধ্যমে তা থেকে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে। এটাকেই বুঝানো হয়েছে যা ‘রোবো সাইনিং’। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা আটকে দেয়া যেত। যে বিষয়টি মর্টগেজ ভিত্তিক নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।
মিটিংয়ের এক ফাঁকে ফুরসত পেলে আমি আমার টিমের সঙ্গে বসি। সমাধানের বিষয়টি বিকালের অধিবেশনে আবার উঠতে যাচ্ছিল।
‘আমি ঐ মিটিংয়ে যাচ্ছি না’Ñ দলের সদস্যদের বললাম। সমস্যাটিকে জট পাকানো হয়েছে। আমি জানি এই আলোচনায় আমি যোগ দিলে আলোচনার যেখানে ইতি টানা হয়েছিল ফের একই জায়গায় ফিরে আসবে। শুধুমাত্র একজন অ্যাটর্নি জেনারেলের কথায় তারা পূর্বের আলোচনায় ফিরবে না। কিন্তু তারা যদি জানে আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি তাহলে হয়তো তাদের মনের কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যাংকগুলো অনেক বেশি পূর্বাভাস দিয়েছিল তাদের এই দায় নিয়ে।
ব্যাংকগুলো যদি আমার সঙ্গে বিষয়টির সমাধান না করতে পারে তাহলে আর কারও সঙ্গেই তারা সমাধান করতে পারবে না। আরো জানার বিষয় যে, আমার সামনে এমন সুবিধা ছিল। এ বিষয়ে অন্য কেউ হয়তো বাকিদের আশ^স্ত করবেন, যেটা আমি করতাম। আমি উপস্থিত থাকলে যে বার্তা দিতাম তার চেয়ে আমার শূন্য আসন আরো বেশি বার্তা প্রকাশ করবে।
আমি আমার কর্মকর্তাদের নিয়ে ফেয়ারমন্ট থেকে একটি ক্যাব নিয়ে চলে যাই আইন মন্ত্রণালয়ে। আমার চলার পথেই টম প্যারিলিকে ফোন করি যে, আমরা আসছি। প্যারিলি ছিলেন ইউএস সিনেটের সহযোগী অ্যাটর্নি জেনারেল। ফেডারেল গভর্নমেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে মাল্টিস্টেটের তদন্ত পর্যবেক্ষণ করা ছিল তার দায়িত্ব। আমি তাদের বললাম পূর্বাভাস অনুযায়ী যে দশটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্যের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া হচ্ছে সাতে। এই সমস্যার তলা পর্যন্ত আমাকে দেখতে হবে। এমন কোনো বিষয় আমি স্বাক্ষর করতে পারি না যেখানে আমাকে আমার নিজস্ব তদন্ত থেকে বাইরে রাখা হবে।
আমি যেমনটি আশা করছি, আমার তদন্তে তেমন কিছু হবে না বলে প্যারিলি জানালেন। আমার তদন্তে বলতে চেয়েছিলাম যে একটি রাজ্য যা করতে পারে হোক না সেটা দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য, সেক্ষেত্রে বড় ব্যাংকগুলো তা করছে না। প্যারিলি আমাকে বললেনÑ এ ধরনের মামলা অনেক বছর ধরে চলে। কিন্তু আমি দেখতে পেলাম ক্যালিফোর্নিয়াতে অনেক মানুষই আছেন যাদের সহায়তা প্রয়োজন, তারা এরই মধ্যে তাদের বাড়ি হারিয়েছেনÑ একারণেই পুরোপুরি কোনো তদন্ত হয়নি। সাধারণ কথা হলো সময় ছিল না হাতে।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
এই লড়াইয়ের কাহিনী তিনি আমাকে বলেন। আমার কাছে যখন তিনি এই কাহিনী বলছিলেন তখন বারবার নিজের কান্নাকে নিবৃত্ত করতে লড়াই করে যাচ্ছিলেন। তবু তিনি বললেন, ‘আমি দুঃখিত, আমি জানি এটি শুধুই একটি বাড়ির গল্প...’ কিন্তু তিনি জানেন এবং আমরাও সবাই জানি এটি কখনই শুধু একটি বাড়ির গল্প নয়।
মার্চ মাসের শুরুর দিকে সর্ব প্রথম আমার ব্যক্তিগতভাবে মাল্টিস্টেট নিয়ে কথা বলা ও সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ হয়। দ্য ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব অ্যাটর্নি জেনারেল যা (এনএএজি) নাগ নামে পরিচিত। নাগের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন ডিসির ফেয়ারমন্ট হোটেলে। আমি আমার টিম নিয়ে সেখানে উড়ে গিয়েছিলাম। সেখানে পঞ্চাশ জন অ্যাটর্নি জেনারেল উপস্থিত ছিলেন। সকলেই রাজ্যের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী বসেছিলেন। আমার বসার জায়গা হয়েছিল আরকানসাস এবং কলোরাডো রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলদের মাঝখানে।
আলোচনা আবর্তিত হয়েছিল মাল্টিস্টেট তদন্ত থেকে সাধারণ ব্যবসা পর্যন্ত। আলোচনায় হঠাৎ করেই আমার কাছে স্পষ্ট হয় যে, তদন্ত শেষ হয়নি। এখনো এ বিষয়ে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে। যদিও তারা এটির সুরাহা নিয়ে কথা বলছিল। তাদের সামনে অনেক বিষয় ছিল। আমার ভেতর এমন একটি অনুভূতি জন্মেছিল যে, মৌলিকভাবেই এটা একটি সমাধান হয়ে যাওয়া বিষয়। বাকি যা ছিল তা হলো অর্থটা রাজ্যের মধ্যে ভাগ করে দেয়া এবং প্রকৃতপক্ষে সেটাই ঘটেছিল।
আমি ছিলাম বোকা। সেই নাম্বারের ভিত্তি কি ছিল? তারা এটা নিয়ে কীভাবে কাজটি শেষ করবে? আমরা কীভাবে এ বিষয়গুলোর সমাধানে পৌঁছবো যেখানে আমরা তদন্তই শেষ করতে পারিনি।
তবে আমাকে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করেছিল যা তা হলো খেয়ালখুশিমতো ডলারটা বুঝে নেয়া। এটা ছিল সমাধানের বিনিময় মাধ্যম। ভবিষ্যতে দাবিগুলোর বিপরীতে গণহারে অবমুক্তি ব্যাংকগুলো কীভাবে দিচ্ছেÑ অপরাধ যাই হোক না কেন একটি ব্ল্যাঙ্ক চেকের মাধ্যমে তা থেকে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে। এটাকেই বুঝানো হয়েছে যা ‘রোবো সাইনিং’। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা আটকে দেয়া যেত। যে বিষয়টি মর্টগেজ ভিত্তিক নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।
মিটিংয়ের এক ফাঁকে ফুরসত পেলে আমি আমার টিমের সঙ্গে বসি। সমাধানের বিষয়টি বিকালের অধিবেশনে আবার উঠতে যাচ্ছিল।
‘আমি ঐ মিটিংয়ে যাচ্ছি না’Ñ দলের সদস্যদের বললাম। সমস্যাটিকে জট পাকানো হয়েছে। আমি জানি এই আলোচনায় আমি যোগ দিলে আলোচনার যেখানে ইতি টানা হয়েছিল ফের একই জায়গায় ফিরে আসবে। শুধুমাত্র একজন অ্যাটর্নি জেনারেলের কথায় তারা পূর্বের আলোচনায় ফিরবে না। কিন্তু তারা যদি জানে আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি তাহলে হয়তো তাদের মনের কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যাংকগুলো অনেক বেশি পূর্বাভাস দিয়েছিল তাদের এই দায় নিয়ে।
ব্যাংকগুলো যদি আমার সঙ্গে বিষয়টির সমাধান না করতে পারে তাহলে আর কারও সঙ্গেই তারা সমাধান করতে পারবে না। আরো জানার বিষয় যে, আমার সামনে এমন সুবিধা ছিল। এ বিষয়ে অন্য কেউ হয়তো বাকিদের আশ^স্ত করবেন, যেটা আমি করতাম। আমি উপস্থিত থাকলে যে বার্তা দিতাম তার চেয়ে আমার শূন্য আসন আরো বেশি বার্তা প্রকাশ করবে।
আমি আমার কর্মকর্তাদের নিয়ে ফেয়ারমন্ট থেকে একটি ক্যাব নিয়ে চলে যাই আইন মন্ত্রণালয়ে। আমার চলার পথেই টম প্যারিলিকে ফোন করি যে, আমরা আসছি। প্যারিলি ছিলেন ইউএস সিনেটের সহযোগী অ্যাটর্নি জেনারেল। ফেডারেল গভর্নমেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে মাল্টিস্টেটের তদন্ত পর্যবেক্ষণ করা ছিল তার দায়িত্ব। আমি তাদের বললাম পূর্বাভাস অনুযায়ী যে দশটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্যের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া হচ্ছে সাতে। এই সমস্যার তলা পর্যন্ত আমাকে দেখতে হবে। এমন কোনো বিষয় আমি স্বাক্ষর করতে পারি না যেখানে আমাকে আমার নিজস্ব তদন্ত থেকে বাইরে রাখা হবে।
আমি যেমনটি আশা করছি, আমার তদন্তে তেমন কিছু হবে না বলে প্যারিলি জানালেন। আমার তদন্তে বলতে চেয়েছিলাম যে একটি রাজ্য যা করতে পারে হোক না সেটা দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য, সেক্ষেত্রে বড় ব্যাংকগুলো তা করছে না। প্যারিলি আমাকে বললেনÑ এ ধরনের মামলা অনেক বছর ধরে চলে। কিন্তু আমি দেখতে পেলাম ক্যালিফোর্নিয়াতে অনেক মানুষই আছেন যাদের সহায়তা প্রয়োজন, তারা এরই মধ্যে তাদের বাড়ি হারিয়েছেনÑ একারণেই পুরোপুরি কোনো তদন্ত হয়নি। সাধারণ কথা হলো সময় ছিল না হাতে।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে