বিনোদন

অধ্যাপনা থেকে অভিনেতা কাদের

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ ডিসেম্বর ২০২০, শনিবার, ১২:১৩ অপরাহ্ন

গুণী অভিনেতা আব্দুল কাদের আর নেই। আজ সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শোবিজে। আব্দুল কাদেরের জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে। তার বাবা মরহুম আবদুল জলিল। মা মরহুমা আনোয়ারা খাতুন। স্ত্রী খাইরুননেছা কাদেরের সঙ্গে সুখের দাম্পত্যে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। রেখে গেছেন নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও বন্ধু স্বজন।
শোবিজে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত আব্দুল কাদের সোনারং হাইস্কুল ও বন্দর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ করেন। অর্থনীতিতে সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অধ্যাপনা এবং বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরির পর ১৯৭৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘বাটা’ তে যোগ দেন কর্মকর্তা হিসেবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার প্রথম নাটকে অভিনয় শুরু। ১৯৭২-৭৪ পরপর তিন বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আন্তঃহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মহসিন হলের নাটক সেলিম আল দীন রচিত ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কারও লাভ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান ‘বলুন দেখি’-তে চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্য হিসেবেও পুরস্কার লাভ করেন কাদের।
১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম-সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ থিয়েটারের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) হিসেবে ছিলেন।
১৯৭৪ সালে ঢাকায় আমেরিকান কলেজ থিয়েটার ট্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অভিনয় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনায় প্রতিটিতে অভিনয় এবং ১০০০টিরও বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে বাংলাদেশের নাটক থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ -এ অভিনয় করেন। এছাড়া দেশের বাইরে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কলকাতা, দিল্লি, দুবাই এবং দেশের প্রায় সবকটি জেলায় আমন্ত্রিত হয়ে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনে শত শত নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।
১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। টেলিভিশনে তার অভিনিত প্রথম কিশোর ধারাবাহিক নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’। তবে তিনি আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পান ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বিখ্যাত চরিত্র বাকের ভাইয়ের সহযোগী বদি হিসেবে। হুমায়ূন আহমেদের ‘নক্ষত্রের রাত’ ধারাবাহিকে দুলাভাই চরিত্রেও তিনি হাস্যরসাত্মক অভিনয় দিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পান।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি কাজ করেছেন মাটির কোলে, নক্ষত্রের রাত, শীর্ষবিন্দু, সবুজ সাথী, তিন টেক্কা, যুবরাজ, আগুন লাগা সন্ধ্যা, এই সেই কণ্ঠস্বর, আমার দেশের লাগি, প্যাকেজ সংবাদ, সবুজছায়া, কার ছায়া ছিল, দীঘল গায়ের কন্যা, কুসুম কুসুম ভালোবাসা, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, আমাদের ছোট নদী, ভালোমন্দ মানুষেরা, দূরের আকাশ, ফুটানী বাবুরা, হারানো সুর, দুলাভাই, অজ্ঞান পার্টি, লোভ, মোবারকের ঈদ, বহুরূপী, এই মেকাপ, ঢুলীবাড়ী, সাত গোয়েন্দা, এক জনমে, জল পড়ে পাতা নড়ে ইত্যাদি নাটকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের কাজও করেছেন এ সফল অভিনেতা। তার উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপনের মধ্যে রয়েছে গরু মার্কা ঢেউ টিন, বম্বে সুইটস এর চিকেন ক্রেকার্স, ভালো বীজে ভালো ফসল, এলিফ্যান্ট কিং মশার কয়েল, ইকোনো বলপেন, চাকা বল সাবান, জংশেন মোটরসাইকেল ইত্যাদি। সর্বশেষ তিনি বাটা থেকে চাকরি পরিবর্তন করে বে ইম্পেরিয়াম লিমিটেডের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানা গেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status