মত-মতান্তর

দূষণের আগ্রাসন ও ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’

ড. মাহফুজ পারভেজ

১১ ডিসেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ৬:৩০ অপরাহ্ন

শীতের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার বাতাসে ধূলি ও দূষণের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির খবর মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। উপমহাদেশের আরেক শহর দিল্লি পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দূষণ কবলিত জনপদে। শীতে দূষণ বাড়লেও সমস্যাটি ঋতুভিত্তিক বা দেশভিত্তিক নয়, সব সময়ের এবং সারা পৃথিবীর।

শহরগুলোর মতোই একাধিক দেশও দূষণে জেরবার। বিশ্বে বর্তমানে সর্বাধিক কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণকারী দূষণ আক্রান্ত প্রথম পাঁচটি দেশ হলো- চীন (২৮%), আমেরিকা (১৫%), ভারত (৭%), রাশিয়া (৫%) ও জাপান (৩%)। অর্থাৎ, কেবল অনুন্নত-উন্নয়নশীল দেশগুলোই দূষণ কবলিত নয়। উন্নত-অগ্রসর দেশগুলোও দূষণের কারণে চরম বিপদের সম্মুখীন।

আগ্রাসী দূষণের বিরুদ্ধে পৃথিবীব্যাপী আতঙ্কের পটভূমিতে বিশ্বনেতারাও কমবেশি চিন্তিত। বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর তালিকাতেও শীর্ষে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার ইস্যু। এ কারণে ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’তে ঠিক হয়েছিল যে একটা ‘গ্ৰিন ক্লাইমেট ফান্ড’ গড়া হবে, যা দিয়ে দেশগুলো দূষণ ও পরিবেশ হানিকর প্রক্রিয়া প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারবে।

এই সবুজ তহবিলের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার ধার্য করা হলেও সে টাকা তোলা সম্ভব হয়নি। কারণ, আমেরিকা সব মিলিয়ে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার দান করেছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে গিয়েছিলেন। যদি আমেরিকা চুক্তিতে পুনরায় যোগদান করে এবং সক্রিয় ভূমিকা নেয়, তবে সেটা সকলের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে।

আশার কথা হলো, আমেরিকা আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগদান করতে চলেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন এ ব্যাপারে আশার বাণী শুনিয়েছেন।

প্যারিসের জলবায়ু চুক্তির মূল বিষয় ছিল, সামষ্টিকভাবে পৃথিবীর দূষণ হ্রাস করা। তাপমাত্রার ‘বেস ইয়ার’ ধরা হয়েছিল ১৮৮০ সাল, কারণ প্রকৃত শিল্পায়ন সে বছর থেকেই শুরু হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৮৮০ সালে যা ছিল, তার থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন কোনো ভাবেই না বাড়ে।

প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৫ সালে। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চুক্তিভঙ্গের নায়ক। ট্রাম্প বলেছিলেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন হলো ‘ধোঁকা’। ট্রাম্প আমেরিকার নামকরা এক দক্ষিণপন্থী অর্থনৈতিক সংস্থা, ‘ন্যাশনাল ইকনমিক রিসার্চ এসোসিয়েশন’-এর এক রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, এর ফলে আমেরিকা ২৭ লক্ষ চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে।

অথচ, বারাক ওবামা বলেছিলেন যে, প্যারিস চুক্তিতে যেসব দেশ থাকবে, তারা কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে লাভবান হবে। ওবামা যখন এ কথা বলেছিলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন যে, আমেরিকা যেহেতু গ্ৰিন টেকনোলজির দ্রব্যসামগ্রী অনুন্নত দেশগুলোতে রপ্তানি করবে, তার ফলে আমেরিকায় ওই সব দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’র ব্যাপারে মনোযোগী হলে দূষণের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চলমান বৈশ্বিক লড়াই আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী শান্তি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা রক্ষায় ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে চুপ থাকতে পারেনা। বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর সংকটে ও বিপদে সব দেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকেও তৎপর হতে হবে।

শুধু আর্থিক বা রাজনৈতিক স্বার্থ নয়, মানবিক- পরিবেশগত-স্বাস্থ্য বিষয়ক ইস্যুগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। এসব সমস্যা শুধু একক কোনো দেশের নয়, সারা বিশ্বের। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে তা স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। ফলে বিশ্বনেতাদের বড় মনে ও উদার মনোভাবের ভিত্তিতে বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধানে এগিয়ে আসতেই হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status