প্রথম পাতা

করোনা মোকাবিলা

৩ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার

৫ ডিসেম্বর ২০২০, শনিবার, ৯:২৫ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানসম্পন্ন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সার্বজনীন ও ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি এটি স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং মহামারি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ তিনটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে জরুরি মনোযোগ এবং আরো বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে ইউএনজিএ’র ৩১তম বিশেষ অধিবেশনে গতকাল এক প্রাক রেকর্ডকৃত ভাষণে তিনি বলেন, তবুও কিছু অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে জরুরি মনোযোগ এবং আরো সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রথমত: আমাদের যথাসময়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ও সাশ্রয়ী মূল্যে সবার জন্য মানসম্মত ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)-এর বর্তমান চেয়ার আজারবাইজান এবং জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল গতকাল থেকে শুরু হওয়া দুইদিনের এ বিশেষ অধিবেশন ডেকেছেন। শেখ হাসিনা আরো বলেন, ২০৩০ সালের উন্নয়ন এজেন্ডা সমতার নীতি দ্বারা পরিচালিত এসডিজি অর্জনে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের মৌলিক ভূমিকার স্বীকৃতি দেয়। একইভাবে যখন ভ্যাকসিন প্রাপ্তির কথা আসে, তখন কাউকে পিছনে রাখা সমীচীন হবে না। এটি মহামারি পরাস্ত করতে, জীবন বাঁচাতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে আমাদের সহায়তা করবে। দ্বিতীয়ত: কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে গোটা বিশ্বের জন্য একটি ‘বৈশ্বিক জনপণ্য বিবেচনা করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডব্লিউএইচও’র অ্যাক্ট এবং কোভাক্স সুবিধার উদ্যোগ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোর ট্রিপস চুক্তির আওতায় আইপি রাইটস ওয়েভার ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে এবং সুযোগ পেলে ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয়ত: কোভিড-১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক সহায়তাসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। জাতীয় সরকারসমূহের পাশাপাশি জাতিসংঘ, আইএফআই, সুশীল সমাজকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একে-অপরের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি বলেন, সারা বিশ্ব এখনো এই মারাত্মক ভাইরাস এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় এক কঠিন সময় পার করছে। এ প্রেক্ষাপটে এ অধিবেশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব বহন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বত্র নিয়ন্ত্রণে না আনলে কোভিড-১৯কে কখনোই কোনো একটি স্থানে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। আসুন আমরা একটি টেকসই বিশ্বের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা সম্পাদনে নতুনভাবে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করি- যেখানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভবিষ্যতের মহামারি মোকাবিলায় সমর্থ হবে। এই অধিবেশন কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ, বৈশ্বিক সংহতি এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আশ্বাস দেন যে, বাংলাদেশ এ বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় সকলের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি লোক মারা গেছে এবং প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মহামারি অনেক মানুষকে আরো দরিদ্র করে তুলেছে এবং আরো অনেকে ক্রমে দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সকল দেশে অপুষ্টি, বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান অসমতা চেপে বসছে এবং শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা, বাণিজ্য ও পর্যটনে প্রবল ধস নামায় মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মহামারি আমাদের মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণের এবং তা আরো উন্নত করতে এ সংকট থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। অনেক দেশই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাক্কার মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশ এ মহামারির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের অর্থনীতি, আমাদের জীবন ও জীবিকা, আমাদের অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে ব্যাপক প্রভাবিত করেছে এবং আমাদের কষ্টার্জিত উন্নয়ন সাফল্যকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তিনি বলেন, তবে আমরা শুরু থেকেই এবং কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করেছি এবং আমাদের অর্থনীতি ও জনগণকে মহামারি থেকে রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার সরকার আমাদের ব্যবসায়, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব হ্রাস করতে ১৪.১৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা আমাদের জিডিপি’র ৪.৩ শতাংশের সমান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মার্চ মাসের প্রথমদিকে ভাইরাস শনাক্তকরণের পর থেকে ২৫ মিলিয়নেরও বেশি লোককে সহায়তা প্রদানে সামাজিক সুরক্ষা-বেষ্টনীর আওতা সমপ্রসারিত করেছেন। তিনি জানান, মহামারিটির দ্বিতীয় ধকল সামাল দিতে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status