বিশ্বজমিন

জাতিসংঘ মহাসচিবের আশঙ্কা

করোনার ক্ষত কয়েক দশক স্থায়ী হবে, চরম দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা

মানবজমিন ডেস্ক

৪ ডিসেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

দ্রুত করোনা ভাইরাসের টিকার অনুমোদন দেয়া হলেও বড় এক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাস মহামারির পরও এর ধাক্কা বা আফটারশকের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে লড়াই করতে হবে পৃথিবীবাসীকে। করোনা ভাইরাস মহামারি বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের এ যাবতকালের প্রথম অধিবেশনে তিনি বক্তব্য রাখছিলেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এ সময় তিনি এই ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে দ্রুত যে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তবে সতর্কতা দেন যে, করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হলেও এর ক্ষত পৃথিবী থেকে সহসাই শেষ হয়ে যাবে না। তিনি বলেন, আমরা যেন বোকা না হই। এই ভাইরাস সংক্রমণের কারণে যে ক্ষত হয়েছে তা চলতে থাকবে বছরের পর বছর, এমন কি কয়েক দশক। এই ক্ষত শুধু একটি টিকা সারিয়ে তুলতে পারবে না। চরম দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা নিকটতম হচ্ছে। আট দশকের মধ্যে আমরা বিশ্বে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছি। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসে সারাবিশ্বে মারা গেছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। অ্যান্তনিও গুতেরাঁ বলেন, কোভিড-১৯ আরো নানা রকম চ্যালেঞ্জকে বৃদ্ধি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অসমতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বিশ্বের শতাধিক দেশের নেতারা বা সিনিয়র কর্মকর্তারা। সংক্ষিপ্ত এই অধিবেশনের বক্তব্য আগে থেকেই রেকর্ড করা। দু’দিন চলবে এই সম্মেলন। তবে কূটনীতিকরা বিশ্বাস করেন, মাত্র দু’দিনের এমন আলোচনা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।
এই সম্মেলনে গুতেরাঁ পুনর্বার আহ্বান জানান করোনার টিকাকে বৈশ্বিক সব মানুষের জন্য বিবেচনা করার। এক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা থেকে ৪৩০ কোটি ডলার এখনও পিছিয়ে আছে। এ জন্য আগামী দু’মাসের মধ্যে এই অর্থ দানের জন্য তিনি দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। এরই মধ্যে কোভ্যাক্স নামের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগে যোগ দিয়েছে কমপক্ষে ১৮০টি দেশ। তারা যৌথভাবে টিকা তৈরি করে তা সবার মাঝে সমতার ভিত্তিতে বিতরণ করতে চায়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম যুক্তরাষ্ট্র। তারা করোনার টিকা নিয়ে সামনের সারিতে এগিয়ে আছে। আর সেখানে বিদায় নেয়ার পথে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চাইছেন মার্কিনিদের সবার আগে টিকা দিতে। অন্যদিকে রাশিয়া নিজেরা টিকা তৈরি করেছে। তবে তাদের টিকা নিয়ে রয়েছে সংশয়। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ট্রাম্প। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের হয়ে কাজ করছে বলে তার অভিযোগ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে পারফরমেন্স দেখাচ্ছে তার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন গুতেরাঁ। তিনি বলেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। নির্দেশনার প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে। যখন দেশগুলো তাদের নিজেদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে থাকবে, তখন ভাইরাস চলতে থাকবে প্রতিটি ডিরেকশন বা প্রতিটি প্রান্তে।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট ভলকান বোজকির বলেন, আমাদের বিশ্ব বর্তমানে যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তার সমাধান দেয়ার জন্য বিশ্ব তাকিয়ে আছে ‘ওয়ার্ল্ড বডি’র দিকে। তাকিয়ে আছে এই ওয়ার্ল্ড বডির নেতৃত্বের দিকে। তিনি বলেন, এটা কারো দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলার সময় নয়। আমরা মিলিত হয়েছি সামনে একটি পথ বের করার জন্য এবং যেসব মানুষের আমরা সেবা করি তাদের দুর্ভোগের ইতি ঘটানোর জন্য। মূলত ভার্চুয়াল এই বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে বিশ্বের প্রায় ১০০ নেতা এবং কয়েক ডজন দেশের মন্ত্রীর। ১৯৩টি সদস্য দেশের এই সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের দূত বা কূটনীতিকরা। তারা ছিলেন মাস্ক পরিহিত। শুক্রবার যখন বিশেষ এই অধিবেশন শুরু হয় তখন করোনায় এ যাবত বিশ্বে মারা যাওয়া প্রায় ১৫ লাখ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নীরবতা পালন করা হয়। উদ্বোধনের শুরুতে বোজকির উপস্থিত দূত ও কূটনীতিককে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানান। এই অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বকে পরিষ্কার করে বলতে হবে যে, সবার জন্য করোনা ভাইরাসের টিকা প্রাপ্তি সুষ্ঠু ও সমতার ভিত্তিতে হতে হবে এটা নিশ্চিত করতে হবে এবং এ জন্য আমাদেরকে একত্রিতভাবে কাজ করতে হবে। কাজ করতে হবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য। করোনা মহামারির পূর্ববর্তী সময়ে অর্থনীতিকে ফিরিয়ে নিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ রিসোর্স নিশ্চিত করতে হবে।
এক্ষেত্রে অ্যান্তনিও গুতেরাঁ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য পদক্ষেপ নেয়ায় স্বাগত জানান। তবে বলেন, অনেক নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশ আছে তাদের ক্ষতিটা অনেক বেশি। তাদের পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। তাদেরকে দুটি পথের একটি বেছে নিতে হচ্ছে। হয়তো জনগণের মৌলিক চাহিদা মিটাতে হচ্ছে না হয় তাদেরকে ঋণ দিতে হচ্ছে। এসব দেশকে তারল্য সঙ্কট থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজন অবিলম্বে সাপোর্ট।
এই অধিবেশনে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামাফোসা এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রধান চার্লস মিশেলের। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করার কথা স্বাস্থ্য ও জনসেবা বিষয়ক সেক্রেটারি অ্যালেক্স আজার-এর।
আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্যানেলে আলোচনা হবে। প্রথমটি হবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতিসংঘের করণীয় নিয়ে। দ্বিতীয়টিতে করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে আলোচনা হবে। এতে বিভিন্ন কোম্পানির টিকা নিয়ে কথা হবে। তৃতীয়ত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসিটি-এক্সেলারেটর নিয়ে কথা হবে। এ সংস্থা বিশ্বের সবচেয়ে গরিবদের কাছে টিকা পৌঁছে দিতে কাজ করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status