প্রথম পাতা

ভ্যাকসিনের বিকল্প উৎস কী

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

৩ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

গত প্রায় এক বছর পৃথিবীকে কাঁপিয়ে চলছে করোনা নামের অদৃশ্য এক শত্রু। মরণব্যাধি এই ভাইরাস থেকে মুক্তি চায় বিশ্ববাসী। সবাই কার্যকর ভ্যাকসিনের অপেক্ষায়। আর এই ভ্যাকসিন পাওয়ার দোরগোড়ায় উন্নত দেশগুলো। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো চলতি মাসেই নাগরিকদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে কবে টিকা আসবে, কবে নাগাদ দেশের মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার সুযোগ ঘটবে তাও পরিষ্কার নয়। দেশের ১৭ কোটি মানুষ কীভাবে ভ্যাকসিন পাবেন এ বিষয়টিও খোলাসা নয়। গ্যাভির মাধ্যমে প্রায় ৭ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা বাংলাদেশের। এ ছাড়া ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আসবে আরো ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন। সম্প্রতি অক্সফোর্ডের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল নিয়ে প্রকাশিত খবরে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অক্সফোর্ড কিংবা কোভ্যাক্স থেকে টিকা পেতে দেরি হওয়ার আশঙ্কায় জনস্বাস্থ্যবিদরা বারবার সরকারকে বিকল্প উৎস হাতে রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। বিশ্ব নেতারাও বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর করোনার টিকা প্রাপ্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি) ডা. শামসুল হক মানবজমিনকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। যেটা আগে আসবে সেটাই আমরা আগে শুরু করবো। পাশাপাশি কোভ্যাক্স ও অক্সফোর্ডের টিকা ছাড়াও আরো কার্যকর টিকা সংগ্রহে আমাদের যোগাযোগ চলছে।
অক্সফোর্ড কিংবা কোভ্যাক্স ছাড়া বিকল্প কোনো উৎস থেকে ভ্যাকসিন আনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মানবজমিনকে বলেন, আমরা ভ্যাকসিন আনার জন্য একটি চুক্তি করেছি। গ্যাভির মাধ্যমেও ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছি। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। ভ্যাকসিন অবকাঠামো এবং বিতরণের কথাটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভ্যাকসিন পেতে এখন সারা বিশ্বই তীব্র প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিশ্বের ধনী দেশগুলো একজন নাগরিকের বিপরীতে পাঁচটি ভ্যাকসিন আগাম কিনে রেখেছে। সেখানে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্য অনেক দেশই এখন ভ্যাকসিনের সংস্থান করতে পারেনি। তবে বৈশ্বিক এই মহামারি রুখতে বিশ্বনেতাদের এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এতে ধনী দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য একটি ভ্যাকসিন রেখে বাকিগুলো অন্যদের ব্যবহারের অনুমোদন দিলে দ্রুত মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
অক্সফোর্ড কিংবা কোভ্যাক্স থেকে টিকা পেতে দেরি হওয়ার আশঙ্কায় জনস্বাস্থ্যবিদরা বারবার সরকারকে বিকল্প উৎস হাতে রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। সমপ্রতি মডার্না ও ফাইজার টিকা চালুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছে আবেদন করার পর এবং ভারত বায়োটেকের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর তৎপরতা বাড়ে। এ ছাড়া দেশের গ্লোব বায়োটেকের টিকার বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় আছে। কয়েকটি টিকার ট্রায়ালের প্রক্রিয়া অনেক দিন ধরে ঝুলে আছে, যা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন রয়েছে। এরইমধ্যে রাশিয়া, মডার্না, ভারত বায়োটেক, এমনকি ফাইজারের সঙ্গে সরকার ও বেসরকারি পর্যায় থেকে আবার যোগাযোগ শুরু হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যগুলোর পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে ভারত বায়োটেকের টিকা।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, আমরা অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটি নিয়েই কাজ করছি। এটি আমাদের জন্য ভালো হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যেখানেই আমাদের উপযোগী ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে সেখান থেকেই আমরা ভ্যাকসিন কিনবো। এ খাতে সরকার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রেখেছে। আশার খবর হচ্ছে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষ করেছে। ফলাফল প্রকাশ করেছে চারটি ভ্যাকসিনের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। আর একটি কোম্পানি এখনো ফলাফল জানায়নি। এর বাইরেও দুটি ভ্যাকসিন আশার আলো দেখাচ্ছে। এই দুটি ভ্যাকসিনই যুক্তরাষ্ট্রের। জনসন অ্যান্ড জনসন এবং নোভাভ্যাক্স ভ্যাকসিন দুটির আবিষ্কারক। আগামী বছরের প্রথমার্ধে ভ্যাকসিন দুটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হবে। এসব কোম্পানির ভ্যাকসিনের দাম তুলনামূলকভাবে কম হবে। একই সঙ্গে সংরক্ষণ তাপমাত্রাও বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ভ্যাকসিন আমদানির জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করা হচ্ছে। যে তাপমাত্রার ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় সেই তাপমাত্রার ভ্যাকসিন আমদানি করা হবে না। বলা হচ্ছে এখন প্রায় ৫ কোটি মানুষের জন্য ভ্যাকসিন আমদানি করা হলেও ভবিষ্যতে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে সরকার আরো ভ্যাকসিন কিনতে পারবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status