শেষের পাতা

‘সোনারগাঁ রিসোর্ট ও ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম নিয়ে হাইকোর্টের রায়’

স্টাফ রিপোর্টার

৩ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ৬টি মৌজার কৃষিজমি, নিচুভূমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশবিশেষের ১৮৬৮ বিঘা জমিতে সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি ও সোনারগাঁ ইকোনমিক জোন কর্তৃক মাটি ভরাটকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দায়েরকৃত মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত এ রায় প্রদান করেন। আদালতে বেলা’র পক্ষে  ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ফিদা এম কামাল, এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। অপরদিকে দুই কোম্পানির পক্ষে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, এডভোকেট আহসানুল করিম। এ ছাড়া, আদালত শিল্পপতি মো. নুর আলীর মালিকানাধীন এই দু’টি প্রতিষ্ঠানসহ ওই এলাকায় আর যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষি, নদীর জলাভূমি ও নিচু ভূমি ভরাট করেছে তাদের মাটি সরিয়ে ৬ মাসের মধ্যে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ধার্য করে তা মাটি ভরাটকারীর কাছ থেকে আদায় করে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর জানান, সোনারগাঁ উপজেলার ছয়টি মৌজার  কৃষিজমি, জলাভূমি ও মেঘনা নদীর অংশ ভরাট করে ‘সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি’ এবং ‘সোনারগাঁ ইকোনমিক জোন’ নির্মাণ কার্যক্রমকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অপরদিকে, রায়ের পর সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও  সোনারগাঁও  ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছেন, সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও  সোনারগাঁও  ইকোনমিক জোনের কোন অংশ যদি অভৈধভাবে ভরাট করা হয়ে থাকে, অভৈধভাবে কোন কৃষকের জমি বা কোন খাস জমি দখল করে থাকে এবং সেই জমি ভরাট করার কারণে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তদন্তসাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ প্রেক্ষিতে আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম আদালতকে বলেন, ওই জোনের অধীনে বরাদ্দকৃত জমির মধ্যে কখনওই অবৈধভাবে কোন মটি ভরাট করা হয়নি, কখনওই কোন কৃষকের জমি, খাস জমি ভরাট করা হয়নি, কারও ফসলের জমি ভরাট করা হয়নি, দখলও করা হয়নি। তবে এক্ষেত্রে যদি কোন প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে জোন কর্তৃপক্ষ তার দায় গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে আদালত বলেন যদি সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন লিমিটেড কর্তৃপক্ষ দালিলিকভাবে লাইসেন্সের অনুমতি পান, তাহলে পরিবেশ অধিদফতরের যথাযথ অনুমতি নিয়ে এই ভূখন্ডের ওপরই তার ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।
নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবন্ধ এবং রতনপুর মৌজার কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশবিশেষে জোরপূর্বক মাটি ভরাট করে ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লি: কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি প্রকল্পের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রিট পিটিশন  দায়ের করে। রিট পিটিশনের প্রাথমিক শুনানিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লি.কে প্রকল্প এলাকার মাটি/বালি ভরাট কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন। একইসঙ্গে ভরাটকৃত ভূমি থেকে মাটি/বালি অপসারণের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করে ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লি.-এর সহযোগী কোম্পানি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লি. উল্লিখিত ছয়টি মৌজায় তথাকথিত সোনারগাঁ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য মাটি ভরাটের অনুমতি পেয়েছে দাবি করে। সেই প্রেক্ষিতে আদালতের ২রা মার্চ, ২০১৪ তারিখের প্রদত্ত আদেশ অকার্যকর ঘোষণার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অবকাশকালীন বেঞ্চে আবেদন করে। ২০১৬ সালের ২৫শে অক্টোবর আদেশ সংশোধনক্রমে সোনারগাঁ ইকোনমিক জোনের জন্য মাটি ভরাট কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দেন। উক্ত আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে বেলা আপিল বিভাগে সিভিল মিসসেলেনিয়াস পিটিশন দাখিল করে। এরপর আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করেন। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের আদেশ ভঙ্গ করে সোনারগাঁ ইকোনমিক জোন-এর নামে মাটি ভরাট অব্যাহত রাখলে বেলা আদালত অবমাননার মামলা করে। আদেশ প্রতিপালন হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন চান আদালত। জেলা প্রশাসক ওই বছরের ৮ই নভেম্বর আপিল বিভাগে হাজির হয়ে জানান, সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাটি ভরাট কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তার বক্তব্যের সমর্থনে তিনি কিছু ছবি দেখান। এ প্রেক্ষাপটে ওই বছরের ১৫ই নভেম্বর আপিল বিভাগ বিষয়টি হাইকোর্টে দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় হাইকোর্টে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেয়া হলো গতকাল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status