প্রথম পাতা

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কত বছর- আপিল বিভাগ যা বলেছেন

স্টাফ রিপোর্টার

২ ডিসেম্বর ২০২০, বুধবার, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

আমৃত্যু কারাদণ্ড নিয়ে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়েছে-১. প্রাথমিকভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে হচ্ছে দণ্ডিত ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত পুরো সময়। ২. কিন্তু ৪৫ ও ৫৩ ধারা যদি দণ্ডবিধির ৫৫ ও ৫৭ ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ অ এর সঙ্গে মিলিয়ে পড়া হয় তাহলে বুঝা যায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে হচ্ছে ৩০ বছর। তবে আদালত যদি স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়, অথবা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে দণ্ডিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ অ প্রযোজ্য হবে না। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বিচারক যদি যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন, সেক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ হবে ৩০ বছর। আর বিচারক যদি আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন সেক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ হবে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত বাকি জীবন কারাভোগ। তবে যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে না। তাদের ক্ষেত্রে আমৃত্যু কারাদণ্ডই হবে। আসামি পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর। তবে ক্ষেত্র বিশেষে বিচারক যদি কারো আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডই ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, এতোদিন পর্যন্ত যে ধোঁয়াশা ছিল সেটি পরিষ্কার হলো।
আসামি পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যাবজ্জীবন মানে কতদিন, আসামিকে কতদিন সাজা ভোগ করতে হবে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। আমরা সে ব্যাপারে রিভিউ পিটিশন করে আদালতকে বলেছিলাম, বর্তমান আইনের বিধান অনুযায়ী যাবজ্জীবনে ৩০ বছর হবে। কারণ ৩০ বছর যদি না হয়, তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(ক)সহ অন্য আইনের বিধানগুলো এবং জেলকোড, সব বাতিল হয়ে যাবে। বিষয়টি বিবেচনায় আপিল বিভাগ রায়ে বলেছেন, যাবজ্জীবন বলতে একজন আসামির ৩০ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে। তবে আদালত বা ট্রাইব্যুনাল যদি বিশেষভাবে আদেশ দেন, তাহলে দণ্ডিত আসামি আমৃত্যু জেলখানায় থাকতে হবে।
খন্দকার মাহবুব বলেন, রায়ে আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে আমৃত্যু সাজাটা মানবতাবিরোধী এবং আমৃত্যু সাজা যদি থাকে, তাহলে জেলখানায় ওল্ডহোম করতে হবে। একটি মানুষ যখন অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে যাবে, তখন তার চলাফেরার শক্তি থাকবে না। তখন তার সেবা- শুশ্রূষার বিষয়টিও আদালতকে বিবেচনা করতে হবে।  
২০০১ সালে সাভারে জামান ইয়াসিন নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় তার বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। বিচারিক আদালত ২০০৩ সালের ১৫ই অক্টোবর দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। দুই আসামি হলেন আতাউর মৃধা ও আনোয়ার হোসেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে ২০০৭ সালের ৩০শে অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আপিল খারিজ করে দিয়ে তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আতাউর ও আনোয়ার। আপিলে ফাঁসির দণ্ড মওকুফ চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আসামিদের আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন সাজা দেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ২৪শে এপ্রিল। সেখানে বলা হয়, দণ্ডবিধির ৫৩ ধারা ও ৪৫ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে আমৃত্যু কারাবাস। এর ফলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত সবাইকে আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে।
আপিল বিভাগের এ রায়কে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ দাবি করে রিভিউ আবেদন করে আসামি পক্ষ। গত বছরের ১১ই জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে রিভিউ আবেদনটির রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিল। রিভিউ শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে পাঁচ অ্যামিকাস কিউরি আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, এ এফ হাসান আরিফ, আবদুর রেজাক খান, মুনসুরুল হক চৌধুরী ও এ এম আমিন উদ্দিনের মতামত শুনেন। সে রিভিউ শুনানি নিয়ে গতকাল রায় ঘোষণা করে সংক্ষিপ্ত আদেশ দিলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status