এক্সক্লুসিভ

বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় সিকৃবি’র সাফল্য

খসরু মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, সিকৃবি থেকে

১ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:২৮ পূর্বাহ্ন

হাওর বাঁওড় বেষ্টিত সিলেট অঞ্চল থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। মাছের আশ্রয়স্থল, প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে নষ্ট হয়ে  যাওয়াসহ প্রজনন মৌসুমে অবাধে মাছ শিকারের ফলে অসংখ্য প্রজাতির দেশীয় মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্ত প্রজাতির দেশীয় মাছের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিস্তার, জীব বৈচিত্র্য রক্ষা এবং মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। প্রশাসন, বনবিভাগ ও মৎস্য বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের আওতায় এনএটিপিফেজ-২ প্রকল্পের (আইডি নং-০৩৫) অর্থায়নে সিকৃবি’র মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে উক্ত বিভাগের প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ড. ফয়সাল আহমেদ এর নেতৃত্বে সারি-গোয়াইন নদী ও তৎসংলগ্ন হাওড় ও বিলসমূহে দেশীয় মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এ উদ্দেশে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে এবং গুরকচি নদীতে প্রায় ৩ একর জায়গায় অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। গুরকচি অভয়াশ্রমে ৫০ জন এবং রাতারগুলে ৩০ জন মৎস্যজীবীকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা কমিটি। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে এলাকার জনগণ। অভয়াশ্রম তৈরি করার ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ নতুন করে এসব এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চিতল, ঘোড়া, খারি, নানিদ প্রভৃতি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, শীতকালে পানি কমে যাওয়ায় মাছগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তাই রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের ১টি বিলে এবং গুরকচি নদীতে অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। অভয়াশ্রমের পাশে জাল ও বাঁশসহকারে স্থাপিত পেনেকুশিয়ারসহ বিভিন্ন নদী থেকে ডিমওয়ালা মলা ও ঢেলা মাছ সংগ্রহ করার পর তাদের প্রজনন মৌসুম এপ্রিল ও মে দুই মাস পেন পদ্ধতিতে লালন-পালন করে প্রজনন সম্পন্ন হলে জুন মাসে পেন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ফলে ভরা বর্ষায় আশপাশের জলাশয়ে এসব মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের দ্বারা অভয়াশ্রমগুলো ব্যবস্থাপনা করার ফলে সহজে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি মৎসজীবীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে উন্মুক্ত জলাশয়ে বর্ষা মৌসুমে খাঁচায় (কেজ কালচার) মাগুর, পাবদা, পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছ চাষ করা হচ্ছে। চাষকৃত এ মাছ বিক্রি করে অংশীজন মৎস্যজীবীদের টেকসই আয়ের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সেলাই মেশিন, ছাগল ও ভেড়াসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে উন্মুক্ত জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের আশ্রয়স্থল দিনদিন কমে যাচ্ছে। এছাড়া হাওর ও বিল সেচ দিয়ে শুকিয়ে অবাধে মাছ শিকারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে মলা ঢেলাসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ। পেনে এ সকল দেশীয় প্রজাতির মাছ লালন-পালন করায় তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে বংশবিস্তার করতে পারছে। পরবর্তীতে বর্ষায় উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দেয়ায় খুব সহজেই বিলুপ্ত প্রজাতির এসব মাছের বিস্তার ঘটানো সম্ভব হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশীয় প্রজাতির অন্যান্য মাছও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status