বিশ্বজমিন

সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের আশির্বাদে ইমরান-নেতানিয়াহু বৈঠক?

হায়দার আব্বাস

৩০ নভেম্বর ২০২০, সোমবার, ৪:১৪ পূর্বাহ্ন

আসছে বছরের ২০শে জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদকাল শেষ হতে যাচ্ছে। তার প্রশাসনের এই শেষ কয়েক দিনেও নাটকীয়তার শেষ নেই। এর আগে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিকে ইসরাইলের জন্য চরম লাভজনক মৌসুমে পরিণত করেছেন ট্রাম্প। ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’র প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। এই চুক্তি মোটাদাগে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অধিগ্রহণের পরিকল্পনাই। যদিও সে পরিকল্পনা এখন সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য করেছেন ট্রাম্প। বাহরাইনকেও নতজানু হতে বাধ্য করা হয়েছে। আর এখন সৌদি আরবও ইসরাইলের কাছে ধরাশায়ী হতে যাচ্ছে। এসব কিছু হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগেই হতে পারে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি না হওয়া নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ইসরাইল।
কিন্তু, কে জানে, হয়তো আগামী বছরের আগেই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, সৌদি আরব ও আমিরাত। ইসরাইলি বাহিনীগুলোকে ইতিমধ্যেই উচ্চ সতর্কতায় থাকতে বলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ‘স্পর্শকাতরতার’ রাজনৈতিক কেন্দ্র তৈরি হয়েছে পাকিস্তানকে ঘিরে। দিন-তারিখ উল্লেখ করে বললে, এই বছরের ৬ই আগস্ট থেকে। সেদিন কাশ্মীর ইস্যুতে সৌদির অবস্থান বিবেচনায় দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক শিথিলের ইঙ্গিত দেয় পাকিস্তান। এর ঠিক আটদিন পর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত।
পাকিস্তানের কাছে প্রাপ্য ৩০০ কোটি ডলার ঋণের অবশিষ্ট অংশ পুরোপুরি শোধ করতে দেশটিকে বাধ্য করে সৌদি আরব।
ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ছে। পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অতি সম্প্রতি এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তবে সদ্যপ্রাপ্ত কিছু প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ইমরান খানকে। অথবা প্রস্তাবটি দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা গোয়েন্দা প্রধানদের মধ্যে গোপন বৈঠক করা নিয়েও হতে পারে।
তারা নেতানিয়াহু ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) মতো করেও এ বৈঠক সম্পন্ন করতে পারেন। নেতানিয়াহু ও এমবিএস দুই পক্ষের মধ্যে গোপন আলোচনার জন্য নিজেদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছিলেন। পরবর্তীতে অবশ্য তা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম অবশ্য ইতিমধ্যেই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। ১৮ই নভেম্বর ইসরাইলি নিউজ চ্যানেল আই২৪নিউজ-এ কথা বলতে গিয়ে আবেগি হয়ে পড়েন পাকিস্তানি সাংবাদিক মুবাশির লোকমান। তার ওই বক্তব্য ইউটিউবে রয়েছে। লোকমান দাবি করেন, তিনি বছর খানেক আগে ইসরাইলের সঙ্গে পাকিস্তানের মিত্রতা স্থাপন করা বিষয়ে ইমরান খানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আই২৪নিউজ-এ দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের ভূয়সী প্রশংসা করেন লোকমান। বলেন, ইসরাইল কেবল স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। পাকিস্তানের মতো ইসরাইলও একটি মহান রাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, পারভেজ মোশাররফের শাসনামলে পাকিস্তানের একজন মন্ত্রী ছিলেন লোকমান। মোশাররফের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০০৫ সালে তৎকালীন ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলভাব শালমের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছিলেন।
এদিকে, ২৩শে নভেম্বর দুনিয়া নিউজে কর্মরত কামরান খান নামের অপর এক পাকিস্তানি সাংবাদিক এক টুইটে ‘ইসরাইলের প্রতি পাকিস্তানের নীতিমালা আগের মতো দেখতে চান’ বলে জানান।
এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিশ্চিতভাবেই কোলাহল তৈরি করেছে। এই ঘটনাগুলো এমন ধারণা তৈরি করেছে যে, এগুলোর পেছনে হয়তো পাকিস্তান সরকারই জড়িত।
পাকিস্তান যদি ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় তাহলে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্ক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান। কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থানের প্রতি সমর্থনও জানিয়েছে দেশটি।
ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে নিশ্চিতভাবেই তুরস্কের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ঝুঁকিতে পড়বে। হয়তো কাশ্মীরও হারিয়ে ফেলতে পারে পাকিস্তান। কেননা, ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব, ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষের সমার্থক। এদিকে, তুরস্ক চায় ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী জেরুজালেম পুনর্দখল করতে, যেমনটা অটোমান সাম্রাজ্যের সময় ছিল।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে আসছে। ভারতও প্রথম ৪৫ বছর ফিলিস্তিনকে সমর্থন করেছে। কিন্তু ১৯৯২ সালে কংগ্রেস পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী পিভি নারিশমা রাও ইসরাইলকে নয়া দিল্লিতে দূতাবাস স্থাপনের অনুমোদন দেয়। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরের কয়েক মাস আগে, রাও ক্ষমতায় থাকাকালে বাবরি মসজিদও ধ্বংস করা হয়।
ইসরাইলের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রেমকাহিনী হয়তো খুব শিগিগিরই তাৎপর্যতা হারাবে। কারণ, ইসরাইলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করা ও সেখানে সোলোমন গির্জা স্থাপন করা।
মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ অনুসারে, ইতিমধ্যে সৌদি গণমাধ্যম ওকাজ এক প্রতিবেদনে লিখেছে, আল-আকসা মসজিদ জেরুজালেমে অবস্থিত নয়। যদিও এই মসজিদের জন্য মুসলিমরা যুদ্ধ করেছে ও সেখানে প্রার্থনা করেছে। ওকাজের প্রতিবেদন অনুসারে, আল-আকসা মসজিদ আদতে জু’রানাহতে অবস্থিত— মক্কা থেকে ১৮ মাইল দূরে।
এদিকে, ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই ২৬শে নভেম্বর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতকে সকল প্রকারের অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত ইসরাইল। চীন ও পাকিস্তানকে মোকাবিলায় ইসরাইলের কাছ থেকে ৫০০ কোটি রুপির হিরন ড্রোন কেনার কথা রয়েছে ভারতের।
গত বছরের ৫ই আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। এরপর থেকেই চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটেছে।
ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেবে তা অনেকটাই নির্ভর করে বাইডেনের শপথ গ্রহণের উপর। আর কিছুটা নির্ভর করে করোনা মহামারিতে বৈশ্বিক সমস্যাগুলো কী রূপ নেবে তার উপর।
(দ্য ইউরাশিয়ান টাইমস থেকে অনুদিত)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status