প্রথম পাতা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বললো, একেবারে অনুমাননির্ভর

চীনা বিজ্ঞানীদের দাবি করোনা ছড়িয়েছে ভারত, বাংলাদেশ বা অন্য দেশ থেকে

তারিক চয়ন

২৯ নভেম্বর ২০২০, রবিবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

চীন নয়, ভারত বা বাংলাদেশ থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। সম্প্রতি চীনের সায়েন্স একাডেমি প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এমন দাবি করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনার উৎপত্তি চীনে নয়- এমন কথা বলা একেবারে অনুমাননির্ভর, তথ্যনির্ভর নয়। ‘দ্য আর্লি ক্রিপটিক ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ইভোল্যুশন অব সার্স-কোভ-২ ইন হিউম্যান হোস্টস’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র ১৭ই নভেম্বর স্বনামধন্য চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী দ্যা ল্যানসেট জার্নাল-এর প্রিপ্রিন্ট প্ল্যাটফর্ম ‘এসএসআরএনডটকম’ এ প্রকাশিত হয়েছে। সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের বিজ্ঞানীরা ফাইলোজেনেটিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ওই গবেষণা পরিচালনা করেন।
চীনা গবেষকদের এমন দাবির বিষয়ে দেশে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মিরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর-এর পরিচালক  অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন জানিয়েছেন,  এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

করোনা বিষয়ক সরকারের কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ডা. রেদোয়ানুর রহমান বলেছেন, চীনের এই দাবি প্রমাণ করা খুবই কঠিন। কারণ এটা সম্পূর্ণ অনুমাননির্ভর। এর আগেও চীনা গবেষকরা জেনেটিক লিঙ্ক নিয়ে এ ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছে। কিন্তু কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি।
চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়ে বলা হচ্ছে, এই গবেষণা চীনের উহান শহরের ওয়েট মার্কেট থেকে করোনার উদ্ভব হয়েছিল বলে বিজ্ঞানীদের মধ্যে থাকা সাধারণ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে চলছে তোলপাড়। বৃটেনের ডেইলি মেইল, সান, ডেইলি এক্সপ্রেস গুরুত্বসহকারে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে মানবজমিন অনলাইন সর্বপ্রথম খবরটি প্রচার করে।
চীনের বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, গত বছর এ অঞ্চলে তীব্র তাপদাহের সময় মানুষ এবং বন্যপ্রাণীরা অভিন্ন উৎস হতে পানি পান করার কারণে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। পানির অভাবে বানরের মতো বন্যপ্রাণীরা একে অন্যের সঙ্গে ভয়াবহ লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল, যার ফলে মানুষ ও বন্যপ্রাণীদের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছিল।

তাদের মতে, সবচেয়ে কম রূপান্তরিত রূপটিই হতে পারে করোনাভাইরাসের আসল রূপ। আর যেহেতু বাংলাদেশ এবং ভারতে করোনার রূপান্তর সবচেয়ে কম হয়েছে, তাই বলা চলে, করোনার প্রথম সংক্রমণ উহানে নয়, বরং ভারত এবং বাংলাদেশের মতো জায়গাগুলোর কোথাও হয়েছিল।
বাংলাদেশ এবং ভারতের পাশাপাশি করোনার সম্ভাব্য উৎস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, গ্রীস, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, চেক প্রজাতন্ত্র, রাশিয়া, সার্বিয়ার নামও এসেছে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণায়। তবে চীনা বিজ্ঞানীদের এমন দাবি একপ্রকার নাকচ করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। রয়টার্স জানায়, শুক্রবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান বলেন, ‘আমি মনে করি এটা বলা অত্যন্ত অনুমাননির্ভর যে করোনার উৎপত্তি চীন থেকে হয়নি। সকলের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা পরিষ্কার ভাইরাসটি প্রথম কোথায় পাওয়া গিয়েছিল। সেখান থেকে তদন্ত শুরু করতে হবে। তদন্তে কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে তখন তা আমাদের অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ডব্লিউএইচও উহানের বাজারে করোনার উৎপত্তির খোঁজে গবেষক পাঠাতে ইচ্ছুক।
শুধু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ই নয়, চীনাদের এমন দাবির সঙ্গে বিশ্বের সব নামিদামি বিশেষজ্ঞরাও একমত নন। গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ ডেভিড রবার্টসন গবেষণাটিকে ‘খুব ত্রুটিযুক্ত’ আখ্যা দিয়ে ডেইলি মেইলকে বলেন, এটি করোনাভাইরাস সম্পর্কে আমাদের নতুন কোনো ধারণা দেয়নি। তিনি বলেন, গবেষকরা মহামারির বিস্তৃতি সংক্রান্ত উপাত্তগুলো এড়িয়ে গেছেন, যাতে চীনে করোনাভাইরাসের উত্থান এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া স্পষ্ট বোঝা যায়।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বিশেষজ্ঞ মার্ক সুশার্ডও গবেষণার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন।
অন্যদিকে ডেইলি এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের এমন দাবির কড়া সমালোচনা করেছেন বিশ্বজুড়ে অনেক বিজ্ঞানী।

বাইরের কোনো দেশ থেকে করোনার উদ্ভব হয়েছে, চীনের এমন দাবি অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগেও দেশটি বলেছিল, ইতালি বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status