প্রথম পাতা

পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা

ইসরাইলকে দায়ী করেছে ইরান

মানবজমিন ডেস্ক

২৯ নভেম্বর ২০২০, রবিবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাকরিজাদেহকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। শুক্রবার এমন দাবি করে তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ড ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের গতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। একইসঙ্গে, সময়মতো এই হত্যাকাণ্ডের যথাযথ জবাব দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন রুহানি। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, ইরানের রাজধানী তেহরানে মোহসেন ফাকরিজাদেহকে তার গাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে এমন দাবির বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইল। যদিও এর আগে একাধিকবার মোহসেন ফাকরিজাদেহকে ইরানের পরমাণু অস্ত্র কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত করে ইসরাইল। নিহত ফাকরিজাদেহ ইরানের সব থেকে স্বনামধন্য পরমাণু গবেষক ছিলেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা গবেষণা সংস্থার প্রধান ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা শুরুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শনিবার এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে কঠিন বার্তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রুহানি। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, সঠিক সময়েই তার দেশ এই হত্যাকাণ্ডের সমুচিত জবাব দেবে। তবে ইরান আপাতত কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। তিনি যুক্ত করেন, ইরানের শত্রুদের জেনে রাখা প্রয়োজন, ইরানের জনগণ ও কর্মকর্তারা এই হত্যার জবাব দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এক টেলিভিশন ভাষণে এই হুঁশিয়ারি বার্তা দেন রুহানি। এতে তিনি এই হত্যাকাণ্ডকে সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যায়িত করেন।

এর আগেই প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইরানি প্রেসিডেন্ট ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে বলেন, জায়নবাদী শক্তির ভাড়াটে জঙ্গিরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে তারা কতখানি হতাশ হয়ে পড়েছে, তারা ঘৃণার সাগরে ডুবে আছে। মোহসেন ফাকরিজাদেহের হত্যাকাণ্ড ইরানের অর্জন ধীর করে দিতে পারবে না।

এদিকে ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্তদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন। এক টুইট করে শনিবার তিনি এই আহ্বান জানান। এতে তিনি এই হামলার পেছনে থাকা শক্তিকেও শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করেন। তবে তিনি সরাসরি ইসরাইলের কথা বলেননি। এর আগে খামেনির সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেহঘানও এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি শপথ নিয়ে বলেন, মোহসেন ফাকরিজাদেহকে যারা হত্যা করেছে তাদের ওপর বজ্রের মতো আঘাত হানা হবে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস তিন মার্কিন কর্মকর্তার ভাষ্য প্রচার করেছে যাদের মধ্যে অন্তত দুজন দেশটির গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। তারাও মনে করেন এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইসরাইলের হাত রয়েছে। ২০১৮ সালে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুকে মোহসেন ফাকরিজাদেহের নাম উল্লেখ করতে শোনা যায়। তাকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানাতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ। ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে ইসরাইলি দূতাবাসগুলো সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, মোহসেন ফাকরিজাদেহকে হত্যা আবারো ইরান ও তার শত্রুদের মধ্যে বিরোধ নতুন মাত্রা যোগ করবে। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার ক্ষমতার মেয়াদে অল্প কয়েকদিন আছেন হোয়াইট হাউসে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি অনুগত নির্বাচিত পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের জন্য তিনি এ সময়েই অনেক বিষয়কে জটিল করে যাচ্ছেন। ওদিকে এরই মধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, গত রোববার সৌদি আরবের ইয়োমে অতি গোপন বৈঠক করেছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু। সেখানে তারা কি নিয়ে আলোচনা করেছেন, কি উদ্দেশ্য নিয়ে ওই বৈঠক বসেছিল, কি পরিকল্পনা হয়েছে সেখানে, আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, ইরান ইস্যুর কি হবে- এসব আলোচনা হয়েছে কিনা, তার কিছুই জানা যায়নি। কারণ, এমন গোপন বৈঠকের কথা সৌদি আরব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেও ইসরাইলের পক্ষ থেকে হ্যাঁ বা না কিছুই বলা হয়নি। তবে ওই বৈঠকের মাত্র কয়েকদিনের মাথায় হত্যা করা হলো মোহসেন ফাকরিজাদেহকে।  

এ বছরের শুরুর দিকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র হত্যা করে ইরানের কুদ্‌স বাহিনীর প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে। সে ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আলামত প্রকাশ পায়। চারদিক থেকে সবাই সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানায়। জবাবে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনা লক্ষ্য করে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেই ক্ষান্তি দেয়। তবে সেই হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এখন মোহসেন ফাকরিজাদেহকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে ইরান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status