শেষের পাতা

বাড্ডার অপরাধ জগতে গোল্ডেন মনিরের নিয়ন্ত্রণ

স্টাফ রিপোর্টার

২৮ নভেম্বর ২০২০, শনিবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

ঢাকার ক্রাইম জোন হিসেবে খ্যাত বাড্ডার অপরাধ জগতের অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক গোল্ডেন মনির। অবৈধ ব্যবসা, স্বর্ণ পাচার, রাজউকে জালিয়াতি, দলিল জাল করে জমি বিক্রয় ও অ্যালকোহলের ব্যবসা করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছিলেন তিনি। তার এ অবৈধ অর্থ আরো বাড়াতে এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে বাড্ডা এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি।
রাজনৈতিক বিরোধ, ডিশ ব্যবসা, ঝুট ব্যবসা, বালু মহল নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন সেক্টর থেকে চাঁদাবাজি ও গরুর হাটের ইজারাসহ যতো গ্রুপে গ্রুপে বিরোধ ছিল তার একপক্ষ হয়ে কলকাঠি নাড়তেন তিনি। বাড্ডা এলাকায় ডালিম গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন মনির। ডালিম এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। ২০১৫ সালের ১৩ই আগস্ট রাতে বাড্ডার আদর্শনগর পানির প্যাম্পের একটি কক্ষে দুর্বৃত্তদের গুলিতে যে ফোর মার্ডার সংঘটিত হয়েছিল সে ঘটনায়  গোল্ডেন মনিরের হাত ছিল বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। তাকে সহযোগিতা করতো স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা। বাড্ডা এলাকায় কোনো খুনোখুনির ঘটনা ঘটলে ওই নেতার গ্রুপের লোকজনের নাম আসতো। মনির গ্রেপ্তার হওয়ার পরই তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ ও র‌্যাব তাকে খুঁজছে।
গত শনিবার সকালে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় মনিরের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, সোনা এবং মদসহ র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় মাদক, অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা করে। সূত্র জানায়, পরে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত ৩টি মামলায় ১৮ দিন পুলিশি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। মামলাটি উচ্চ তদন্তের জন্য বাড্ডা থানা পুলিশ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গুলশান বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে। তারা মামলাটি এখন তদন্ত করছেন।
মামলার তদন্তের মুখ্য সমন্বয়কারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি মো. মশিউর রহমান মানবজমিনকে জানান, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশের পর  গোল্ডেন মনিরের মামলাটি আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ১৮ দিনের লম্বা এক রিমান্ড। তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছি।  
মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩ দশক ধরে বাড্ডা এলাকায় বসবাস করে আসছিল মনির। এ কারণে এলাকার সবকিছু তার জানাশোনা ছিল। এরপর যখন অবৈধভাবে কালো টাকা আয় করা শুরু হয় তখন থেকে বাড্ডায় অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন তিনি। অবৈধ অর্থ দিয়ে এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ডালিম গ্রুপের লোকজনকে লালন পালন করা শুরু করেন তিনি। ডালিম মালয়েশিয়ায় চলে যাওয়ার পর তার অনুপস্থিতিতে ওই গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, বাড্ডা এলাকায় যতো খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে তার অন্যতম কারণ ছিল চাঁদাবাজি, খাল ভরাট, বালুমহাল দখল, অন্যের জমিতে মাছের ঘের নির্মাণ করে দখলে রাখা, মাদক ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ। প্রত্যেক ঘটনার সঙ্গে একাধিক গ্রুপ জড়িত ছিল। সে গ্রুপগুলো হলো-  ফারুক গ্রুপ, মেহেদী গ্রুপ, রায়হান গ্রুপ, ডালিম গ্রুপ, রবিন গ্রুপ, জাহাঙ্গীর গ্রুপ ও আলমগীর গ্রুপ। আর ডালিম গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করতো মনির। বিশেষ করে বালু নদী কেন্দ্রিক যে দখলের রাজত্ব চলছিল সেই দখল বাণিজ্যে মনির ছিল সর্বসেরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে,  বাড্ডা এলাকায় দুর্বৃত্তদের অস্ত্রের বড় মজুত রয়েছে। মনির গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।  সেই অস্ত্র বৈধ কি-না তা যাচাই করছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এছাড়াও বাড্ডা এলাকায় ডালিম গ্রুপের সদস্যদের সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, গোল্ডেন মনিরের সঙ্গে একাধিক সোনা চোরাকারকারির নাম জানতে পেরেছে মামলার তদন্তকারীরা। তার মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলরের নাম উঠে এসেছে। তাকে এলাকার লোকজন সোনা কাউন্সিলর নামেই চিনেন। মনির  গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই কাউন্সিলর গা-ঢাকা দিয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status