খেলা

ম্যারাডোনার শেষ সাক্ষাৎকার

স্পোর্টস ডেস্ক

২৮ নভেম্বর ২০২০, শনিবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

১৯৮৬’র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জোড়া গোল অমর বানিয়েছে দিয়েগো ম্যারাডোনাকে। সেই ম্যাচের একটি গোল মর্যাদা পায় ‘গোল অব সেঞ্চুরি’র, আর অন্যটি ‘হ্যান্ড অব গড’ হিসেবে ব্যাপক আলোচিত। একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে জেতান দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা। এরপর বাম পায়ের জাদুতে এক দশকেরও বেশি মোহিত করেছেন বিশ্বকে। বুট জোড়া তুলে রাখার পরও নানা ঘটনায় আলোচিত ছিলেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারের বর্ণিল জীবনের অবসান হয়েছে ২৫শে নভেম্বর। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ৬০ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার কয়েক সপ্তাহ আগে ম্যারাডোনা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার বহুল পঠিত দৈনিক ক্লারিন-এ। সেখানে দেখা গেছে ভিন্ন এক ম্যারাডোনাকে।

বার্সেলোনা, নাপোলির জার্সিতে ঝলমলে ক্লাব ক্যারিয়ার। সেসময় গুলোতে স্পেনের বার্সেলোনা ও ইতালির নেপলসে ম্যারাডোনাকে নিয়ে স্থানীয় মানুষদের পাগলামি ছিল লাগাম ছাড়া। মাঠে ও মাঠের বাইরে ম্যারাডোনাকে দেখার জন্য নামতো দর্শকের ঢল। ১৯৯৭ সালে খেলা ছাড়ার পরও একই রকম উন্মাদনা ছিল বিশ্ব জুড়ে। স্টেডিয়ামে বসে কিংবা টিভিতেও খেলা দেখেননি এমন মানুষদের হৃদয়ের বড় একটা জায়গা জুড়ে রয়েছেন ম্যারাডোনা। একনজর দেখা কিংবা ছুঁয়ে দেখার যে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা থাকতো মানুষের মধ্যে সেটা অনুভব করতেন ফুটবল ঈশ্বর। মানুষের কাছে নিজের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তায় বেশ অবাক হতেন তিনি। মৃত্যুর আগে দেয়া সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনা বলেন, ‘মানুষের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। তারা প্রতিদিন আমাকে অবাক করে দেয়। আমি খেলা ছেড়েছি বহুদিন আগে। মাঝে মধ্যেই আমি ভাবি- মানুষ আমাকে সেই আগের মতোই ভালোবাসে? আমাকে সোনালী সেই দিনের মতোই স্মরণ করে? যেদিন আমি জিমনাসিয়ার মাঠে প্রবেশ করলাম তখন বুঝেছিলাম, আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা ফুরিয়ে যায়নি।’ ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবার আর্জেন্টাইন ক্লাবটির কোচ হিসেবে ডাগ আউটে দাঁড়িয়েছিলেন। গত ৩০শে অক্টোবর জন্মদিনে জিমনাসিয়ার মাঠে এসেছিলেন। ওটাই হয়ে থাকলো ম্যারাডোনার শেষবার মাঠে আসা। সেদিন মাঠে উপস্থিত হওয়ার কিছুক্ষণ পরই অসুস্থ বোধ করায় হাসপাতালে নেয়া হয় ম্যারাডোনাকে।

জীবনে কোন অপূর্ণতা নেই বলেও সেদিন জানিয়েছিলেন। তবে আক্ষেপ ছিল মা-বাবাকে নিয়ে। ম্যারাডোনা তার জীবন নিয়ে ছিলেন তৃপ্ত। নেশার জগতে ডুবে থাকা নিয়ে করেছিলেন আক্ষেপ, ‘ জীবন নিয়ে আমি খুব খুশি। ফুটবল আমাকে সব দিয়েছে। আশার চেয়ে বেশিই দিয়েছে। নেশায় আসক্ত না হলে হয়তো আমি আরও অনেক দিন খেলতে পারতাম। তবে ওসব দিন গত হয়েছে। আমি ভালো আছি। আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো, মা-বাবাকে এখন পাশে না পাওয়া। তোতার (ম্যারাডোনার মা) সঙ্গে যদি আর একটা দিন পেতাম। তবে আমি জানি স্বর্গে তিনি বেশ আনন্দেই আছেন আর আমাকে নিয়ে গর্ব করেন।’

অসাধারণ প্রতিভাধর আর্জেন্টাইনরা বেশ অল্প বয়সেই ইউরোপের ক্লাবগুলোর নজরে পড়েন। লিওনেল মেসিকে তো সেই ছোট্ট বয়সে নিয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। স্পেনের হয়ে খেলার প্রস্তাবও পেয়েছিলেন মেসি। ইউরোপের রঙিন জীবন সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের হয়ে খেলার সুযোগ, এই দুটিকে একপাশে সরিয়ে রেখে নিজ দেশকেই বেছে নেন আর্জেন্টাইনরা। বিখ্যাত নীল-সাদা জার্সির প্রতি টান হৃদয় থেকে অনুভব করেন বলেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করার গর্বটা হাতছাড়া করেন না বলে মনে করতেন ম্যারাডোনা। তিনি বলেন, ‘ ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই আমরা দেশ ছাড়ি। দীর্ঘদিন থাকি দেশের বাইরে। তবু দেশের কথা কখনও ভুলি না। আর তাই জাতীয় দল থেকে ডাকা হলে আমরা ফিরে আসি। সেটা সাঁতারের জন্য হলেও। দেশের টান অনুভব করি। নিজ দেশের পতাকার জন্য লড়ি। আর সেখানেই আমরা অন্যদের চেয়ে আলাদা।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status