বাংলারজমিন

ঝিনাইদহের লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ল্যাবের কার্যক্রম তদন্তের নির্দেশ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

২৮ নভেম্বর ২০২০, শনিবার, ৮:২৫ পূর্বাহ্ন

ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় লাইসেন্স ও নবায়নবিহীন ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর চরম অব্যস্থাপনা তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন ঝিনাইদহের একটি আদালত। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বৈজয়ন্ত বিশ্বাস স্বপ্রণোদিত হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১) ধারার বিধান মতে আমলে নিয়ে ২৬শে নভেম্বর এই আদশে দেন। আদশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে ঝিনাইদহ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবদেন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্তকালে যাবতীয় তথ্য ও দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণ সরবরাহ করতে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনকেও নির্দেশ দেন। তদন্ত প্রাপ্তির পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে ২০২০ সালের ২৪শে ডিসেম্বর। দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় গত ২১শে আগস্ট “ঝিনাইদহের ১৬৯ ক্লিনিক ও ল্যাব লাইসন্সে ছাড়াই চলছে” শিরোনামে তথ্য ভিত্তিক সংবাদ প্রকাশিত হয় তা আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে আমলে নেন। আদালত মনে করেন উল্লেখিত সংবাদ সত্য হলে তাতে যেমন বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ২২ ও ২৮ ধারায় বর্ণিত অপরাধের অস্তিত্ব রয়েছে, তেমনি ঝিনাইদহবাসীর আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল মর্মে প্রতীয়মান হয়। ফলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের আবশ্যকতা রয়েছে। আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট পত্রিকা, অনলাইন ও টিভির সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে সরজমিন তদন্ত করে মানচিত্র ও সূচিপত্র প্রস্তুত করবেন। সেখানে সাক্ষীদের বক্তব্য থাকবে। ঘটনাস্থলের স্থির চিত্র ধারণপূর্বক প্রিন্ট করে ডকেটের সঙ্গে যুক্ত করবেন। আলামত প্রাপ্ত হলে তা জব্দ করবেন। কোনো ক্লিনিকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কোনো রোগী মারা গেলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। যতদূর সম্ভব ভুক্তভোগী রোগী, তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে নির্বাচন করবেন। সংবাদে উল্লেখ করা হয় ঝিনাইদহ জেলার বেশির ভাগ ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই মাসের পর মাস এবং কিছু ক্লিনিক বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিকগুলোতে অহরহ অপচিকিৎসা চলছে। ডাক্তারের অবহেলায় প্রসুতির মৃত্যু ঘটছে। ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসার উন্নত পরিবেশ নেই। নেই সর্বক্ষণ চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত নার্স। ১০ বেডের পরিবর্তে শয্যা বাড়িয়ে ৫০/৬০ জন করে রোগী ভর্তি করা হয়। নীতিমালা ভঙ্গ করার পরও এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকগণ অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে নতুন লাইসেন্স পাচ্ছে। পুরনো লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় মোট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টরের সংখ্যা ১৭০টি। এর মধ্যে ক্লিনিক রয়েছে ৮১টি। সূত্র মতে কোটচাঁদপুরের একটি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন আছে। বাকি ১৬৯টি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন নেই। এছাড়া ৮৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনোটারই লাইসেন্স ২০১৮ সাল থেকে নবায়ন করা হয়নি। সদর উপজেলার ডাকবাংলা, বৈডাঙ্গা, সাধুহাটী, বড়োবাজার, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, শৈলকুপা, হরিণাকুন্ডু, মহেশপুরের নেপার মোড় ও খালিশপুরের ক্লিনিকগুলোতে সর্বক্ষণ কোনো ডাক্তার থাকেন না। ক্লিনিক মালিক, ছেলে, স্ত্রী ও মেয়েরাই কোনো কোনো ক্লিনিকের স্টাফ সেজে কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। অপারেশন থিয়েটার ও রোগীর শয্যা রুমে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করে। এই সমস্ত ক্লিনিকে নেই দক্ষ নার্স। ফলে রোগীরা বিপদে পড়লে তেমন কোনো সহায়তা পান না। যে কারণে প্রায় এসব ক্লিনিকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। এলাকার সাধারণ মানুষ এ সমস্ত ক্লিনিক মালিক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে আদালতের দেয়া নির্দেশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status