অনলাইন

এক কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্বের বিদায়

স্টাফ রিপোর্টার

২৭ নভেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

প্রখ্যাত অভিনেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের আর নেই। শুক্রবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন আলী যাকের দূরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন। 
৭৬ বছরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় আলী যাকের রেখে গেছেন স্ত্রী নাট্যজন সারা যাকের, ছেলে নাট্যাভিনেতা ইরেশ যাকের, মেয়ে রেডিও উপস্থাপক শ্রিয়া সর্বজায়াসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীকে।

আলী যাকেরের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। তিনি বলেন, আলী যাকের গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে তিনি সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৯৪৪ সালের ৬ই নভেম্বর জন্ম আলী যাকেরের। ১৯৭২ সালে তিনি আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৭২ সালের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন। ওই দলে তিনি আতাউর রহমানের নির্দেশনায় বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন, যার প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল ওয়াপদা মিলনায়তনে । ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের বাকি ইতিহাস নাটকে, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা। আলী যাকের ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাভিশনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনুষ্ঠান ভালোবাসার বাংলাদেশ উপস্থাপনা করেন।

নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের জন্য বিশ্বখ্যাত বিদেশি নাটকের বাংলা রূপান্তর আর নাটক নির্দেশনা নিয়ে আলী যাকের ব্যস্ত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ওই দলে যোগ দেন সারা যাকের যাকে শুরুতে চোখেই পড়েনি আলী যাকেরের। একটি নাটকের প্রদর্শনীর আগের দিন একজন অভিনেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে সারা যাকেরকে দেওয়া হয় চরিত্রটিতে অভিনয় করতে। আলী যাকেরের ওপর দায়িত্ব পড়ে চরিত্রটার জন্য তাকে তৈরি করার এবং খুব দ্রুত চরিত্রটির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন সারা যাকের। এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে যান আলী যাকের। ১৯৭৭ সালের এই ঘটনার রেশ ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুই সন্তান, পুত্র অভিনেতা ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া।

নব্বই দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাড়া জাগানো জনপ্রিয় নাটক ‘আজ রবিবার’। আজ রবিবার’ নাটকের দর্শকদের অতি পরিচিত চরিত্র বড় চাচা। ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের ‘আজ রবিবার’ নাটকের অন্যতম চরিত্র বড় চাচা আসগর। ‘নাটকে বড় চাচা মানে ডা. এস আসগর পিএইচডি প্রাপ্ত একজন বিখ্যাত মানসিক রোগের চিকিৎসক। তিনি নিজেকে ছাড়া বাড়ির সবাইকেই মানসিক রোগী মনে করেন। ঘরের দরজায় তিনি একটি ফুটো করে রেখেছেন বটে কিন্তু তার ভেতর দিয়ে যে তাকায় তাকেই পড়তে হয় বিপদে। এ চরিত্রে অদ্ভুত সুন্দর চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন অভিনেতা আলী।

টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি মঞ্চেও অভিনয় করেন আলী যাকের। অভিনয়খ্যাতির পাশাপাশি কলামিস্ট হিসেবেও তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছ, ১৯৮৬ সালের ‘আগামী ‘ ১৯৯৬ সালের নদীর নাম মধুমতী’, ২০০১ সালের ‘লালসালু’, ,২০০৮ সালের ‘রাবেয়া’। উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে আছ,‘বহুব্রীহি’, ‘আজ রবিবার’, ‘একদিন হঠাৎ’ ও ‘পাথর সময়’। আর উল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটকের তালিকায় আছে, ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’,’গ্যালিলিও’ ও ‘কবর’।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status