বিনোদন

প্রেক্ষাগৃহে বলিউড ছবি মুক্তি

মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলচ্চিত্র অঙ্গনে

ফয়সাল রাব্বিকীন

২০২০-১১-২৬

দেশীয় প্রেক্ষাগৃহে আবারো বলিউড ছবি মুক্তি নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের সিনেমা হলে বলিউডের নতুন সিনেমা মুক্তি পাবে, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। আর বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। একদিকে হল মালিকরা চাচ্ছেন হল বাঁচাতে বলিউডের ছবি মুক্তি দিতে, অন্যদিকে অনেক শিল্পী-পরিচালক মনে করছেন বলিউডের ছবি মুক্তি পেলে দেশীয় ছবি হুমকির মুখে পড়বে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) আওতায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সিনেমা হলে বলিউড ছবির প্রদর্শন হয়। সেই বছর সালমান খানের ‘ওয়ান্টেড’, আমির খানের ‘তারে জামিন পার’ ও ‘থ্রি ইডিয়টস’ এবং হৃতিক রোশনের ‘ধুম থ্রি’ ছবি মুক্তি পেয়েছিল। তখন অবশ্য শিল্পী ও কলাকুশলীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন বলিউড ছবি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে। এমনকি শাকিব খান, রুবেল, ওমর সানী, জায়েদ খান, পরীমনি, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানসহ চলচ্চিত্রের বেশির ভাগ শিল্পীরা তখন বলিউডের সিনেমা আসা বন্ধের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নেমেছিলেন। করেছিলেন মানববন্ধন। পরবর্তীতে মামলা ও কর্মবিরতির কারণে বলিউডের চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ হয়। সেই ঘটনার পাঁচ বছর পার হয়েছে। এখন পুরনো নয়, নতুন ছবি মুক্তির কথা চলছে দেশের প্রেক্ষাগৃহে। এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। বলিউডের ছবি মুক্তি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। এখন ভারতে মুক্তির দিনই বাংলাদেশে হলে ছবি মুক্তি দিতে চাচ্ছেন হল মালিকরা। এক্ষেত্রে সাফটা চুক্তিটা সামান্য পরিবর্তন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে আলোচনা চলছে। যদিও সিদ্ধান্ত আসতে আরো সময় বাকি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াত বলেন, প্রতিযোগিতা ছাড়া চলচ্চিত্রের বাজার টিকে থাকতে পারে না। তাই বলিউড ছবি আসার ব্যাপারে যে কথাবার্তা হচ্ছে তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানাই। আরো অনেক আগেই এমন সিদ্ধান্তের দরকার ছিল। হল টিকে থাকাটা সব থেকে বড় ব্যাপার। ভালো ছবি না হলে সেটা সম্ভব না। তাই হল বাঁচাতে হলে দেশি-বিদেশি ছবি চালাতে হবে। আর এটা হলে মানসম্পন্ন শিল্পী, পরিচালক, কলাকুশলী নিয়ে ভালো মানের ছবি নির্মাণ হবে। যারা বড় মাপের ছবি বিনিয়োগ করতে চায় তারাও এগিয়ে আসবে। সিনেমায় প্রযুক্তির ব্যবহারও সেভাবে হবে। এমনটা হলে আমি বিশ্বাস করি মানহীন ছবির সংখ্যা একেবারেই কমে যাবে। এটা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য একটি ইতিবাচক বিষয় হবে। কাজী হায়াতের সুরেই বাংলাদেশ হল মালিক সমিতির সাবেক
সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ এ বিষয়ে বলেন, সিনেমা হল টিকে থাকাটা আগে দরকার। আর তার জন্য দরকার ভালো সিনেমা। আমাদের দেশের শুধু নয়, বিভিন্ন দেশে বিশ্বের অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে এই করোনা পরিস্থিতিতে। আমার মধুমিতা সিনেমা হল বন্ধ গত আট মাস ধরে। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বলিউডের নতুন ছবি চালানো যেতে পারে। যদিও করোনার এই সময়ে সেই ছবিই দর্শকরা দেখবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তবে নতুন কনটেন্ট না হলে হলগুলোর টিকে থাকা আরো মুশকিল হয়ে যাবে। কারণ করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেন চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। তিনি বলেন, বলিউডের ছবির বাজেট ও আমাদের ছবির বাজেটে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। সে কারণে এখানে বলিউডের বড় আয়োজনের ছবি মুক্তি পেলে আমাদের কম বাজেটের ছবি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। এর মাধ্যমে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, গত ৮ মাসে আমাদের কোনো ছবিই নির্মাণ হয়নি। হলগুলোর অবস্থা খারাপ। নতুন কনটেন্ট আমরা দিতে পারছি না। এমন অবস্থায় হিন্দি ছবি মুক্তি প্রেক্ষাগৃহে পেতেই পারে, তবে নিজেদের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছবি মুক্তি দিতে হবে। এভাবে হলেই হলগুলোও টিকে থাকতে পারবে, আমাদের চলচ্চিত্রেরও কোনো ক্ষতি হবে না।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status