বাংলারজমিন

কেডিএস গ্রুপের রোষানলে আমেরিকান প্রবাসী মনির

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

২৫ নভেম্বর ২০২০, বুধবার, ৬:২১ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামের প্রখ্যাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেডিএস গ্রুপের রোষানলে পড়ে বিনা বিচারে কারাগারে রয়েছেন মনির হোসেন খান নামে একজন আমেরিকান প্রবাসী। এমন অভিযোগ করেন মনির হোসেন খানের বাবা অবসরপ্রাপ্ত নৌ-কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন খান। বুধবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি। কান্নাজড়িত কন্ঠে ৭৭ বছর বয়সী এই নৌ কর্মকর্তা বলেন, আমার ছেলে মনির হোসেন খান আমেরিকান পাসপোর্টধারী। তার দাদা মুসলিম খান কলকাতা আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট। অথচ তার বিরুদ্ধে এক বছরে ২৬টি মামলা দিয়েছে কেডিএস গ্রুপ। এখানেই শেষ নয়, মামলার আসামি করা হয়েছে আমাকে এবং আমার ছোট ভাইকেও। অথচ আমরা কখনও কেডিএসের ধারেকাছেও হাঁটিনি। লিখিত বক্তব্যে মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে ভারতীয় নাগরিক জিবরান তায়েবি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ইয়াসিন রহমান টিটুর হাতে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল কারাগারের ভেতরেই আমার ছেলেকে খেতে হয়েছে কিল-ঘুষি-লাথিও। মনিরের দুই সন্তান ও স্ত্রী এখন অমানবিক জীবনযাপন করছে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ চরম অনিশ্চয়তার মুখে। সাবেক এ নৌ-কর্মকর্তা বলেন, আমি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের তৃতীয় ব্যাচের ছাত্র এবং চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র। আমার ছেলে মনির হোসেন চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিডস স্কুলের ছাত্র। পরবর্তীতে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ব্যাংক অব আমেরিকা ফ্লোরিডায় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চাকরি করে। ২০০৭ সালে মনির তার স্কুল বন্ধু কেডিএস গ্রুপের কেওয়াই স্টিলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমানের অনুরোধে দেশে এসে কেওয়াই স্টিল মিলের নির্বাহী পরিচালক হিসাবে যোগদান করে। অল্প সময়ে কো¤পানির উন্নতির ফলে মুনিরকে নির্বাহী পরিচালকের পদ থেকে পেইড ডাইরেক্টর করা হয়। এরপর তার রক্ত-ঘাম-মেধায় এই প্রতিষ্ঠান দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় টিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে (মুরগি মার্কা ঢেউটিন) পরিণত হয়। মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, ২০০৭ সালে আমার ছেলে যখন কেডিএস গ্রুপের কেওয়াই স্টিলে যখন যোগ দেন, তখন এর মূলধন ছিল ৩০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা দাঁড়ায় ১৫০০ কোটি টাকায়। কো¤পানিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুনির হোসেনের এ সাফল্যের কথা স্টিল জগতে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। কেডিএসের মতো বড় কো¤পানির ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভয়ে আমার ছেলে আর কোন প্রতিবাদ করেনি। আমার ছেলে বারবার দেখা করার অনুরোধ করলেও দেখা দিতে রাজি হননি সেলিম রহমান ও তার বাবা খলিলুর রহমান। আমার ছেলে সজ্ঞানে কখনো কেডিএসর স্বার্থবিরোধী কোন কাজ করেনি। সেলিম রহমানের নির্দেশেই ২০১৮ সালের ২০ জুন পদত্যাগপত্র মেইল, রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠান এবং ফোন করে দেখা করার চেষ্টা করেন। বকেয়া বেতনের জন্য আবেদন করেন। বার বার ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তারা সাড়া দেননি। সংবাদ সম্মেলনে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে মনির হোসেন অ্যাপোলো স্টিল নামে একটি কো¤পানির পরামর্শক হিসেবে যোগদান করে। কো¤পানিটি পরবর্তীতে মুনিরের নেতৃত্বে কেওয়াই স্টিলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। এতে তারা আরও ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। কেডিএস ছেড়ে দেয়ার জন্য নানা হুমকি দিতে থাকে। তাতে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি অংশকে ব্যবহার করা শুরু করে কেডিএস গ্রুপ। ছেলের বিরুদ্ধে বিগত এক বছরে কেডিএস গ্রুপ ২৬টি মামলা দায়ের করার কথা উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর প্রথমে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় আমার ছেলের বিরুদ্ধে একটি গাড়ি চুরির মামলা দেয় কেডিএস। মামলায় যে সময়টা উল্লেখ করা হয়েছে সেসময় মনির ছিলেন ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ স্কুল থেকে সংগ্রহ করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ মামলায় জামিনের জন্য উপস্থিত হলে তাকে আরও দুটি ফৌজদারি মামলা ঠুকে দেয় কেডিএস। একটি মামলায় জামিন হলে তার আগেই আরেকটি মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দি রাখার ব্যবস্থা করা হয়। গাড়ি চুরির মামলায় বায়েজিদ থানা পুলিশ তাকে তিনবার রিমান্ডেও আনে। কেডিএস কর্তৃপক্ষ আমার ছেলেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কো¤পানির এজেন্ট হিসেবে দাঁড় করিয়ে কাল্পনিক চুক্তিও আদালতে উপস্থাপন করেছে। আমি সেসব কো¤পানিতে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি মনির তাদের কোনো এজেন্ট নয়।

সংবাদ সম্মেলনে মোয়াজ্জেম হোসেন অভিযোগ করেন, তার ছেলের বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় পাঁচটি, ঢাকার গুলশান থানায় একটি এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৯টি মামলা দায়ের করে কেডিএস। ১৯ টি মামলায় জামিনে আছে মনির। গাড়ি চুরির মামলা ছাড়া বাকি সব মামলার এজাহারে বর্নিত অভিযোগ অভিন্ন। মনিরের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আতœসাতের অভিযোগও আনা হয়েছে। আমার ছেলেকে হয়রানি করার বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আমেরিকান দূতাবাস তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে।

কেডিএস গ্রুপ হয়রানিমূলকভাবে আমার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, সেসব মামলায় আমাকে এবং আমার ছোট ছেলের নামও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যুক্ত করে দিয়েছে। তারা মামলায় বলছে আমার ছেলে সিআই কয়েল আমদানির সময় কমিশন নিয়েছে। মামলায় একই ধরনের অভিযোগ আমি এবং আমার ছোট ছেলের বিরুদ্ধেও আনা হচ্ছে। অথচ কেডিএসের সাথে আমাদের কোনো ধরনের স¤পর্ক নেই।

কেডিএস গ্রুপ টাকার বিনিময়ে প্রশাসনের একটি অংশকে ব্যবহার করে হয়রানি করছে জানিয়ে সাবেক নৌ-কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, আমাদের পুরো পরিবার আজ বড় অসহায়। মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হসতক্ষেপ কামনা করছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status