প্রথম পাতা

সুইস ব্যাংকে বিপুল অর্থ গোল্ডেন মনিরের

আল-আমিন

২৫ নভেম্বর ২০২০, বুধবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

জালিয়াতি, অবৈধ ব্যবসা আর প্রতারণা করে শুধু দেশেই সম্পদ গড়েননি গোল্ডেন মনির। সুইস ব্যাংকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন তিনি। পাচারকৃত অর্থ অবৈধ ব্যবসা, স্বর্ণ পাচার, রাজউকে জালিয়াতি, দলিল জাল করে জমি বিক্রয় ও অ্যালকোহলের ব্যবসা থেকে অর্থ করেছেন বলে তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। হুন্ডির মাধ্যমে মনির প্রায় ২৩ কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার করেছেন। টাকা পাচারে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে নারায়ণগঞ্জের হুন্ডি ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম দিপু। দু’জনের আত্মীয় থাকেন সুইজারলান্ডে। সেই সূত্র ধরে মনিরের টাকা তারা সুইস ব্যাংকে পাচার করেছেন। গোল্ডেন মনির গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে তাদের দু’জনকে ধরার জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনির জানান, ক্যাসিনো অভিযানের সময় খুলনা এলাকায় এক স্বজনের বাড়িতে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। অভিযান শিথিল হওয়ার পর তিনি আবার ফিরে এসেছেন। ওই সময় গ্রেপ্তার হওয়া কারও সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন। তবে ক্যাসিনো অভিযানের সময় গ্রেপ্তার হওয়াদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  

বিষয়টি জানতে চাইলে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান গতকাল মানবজমিনকে জানান, ‘আমরা গোল্ডেন মনিরকে বিস্তারিত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। টাকা পাচারের বিষয়টি দুদক তদন্ত করবে।’

মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে,  রিমান্ডে গোল্ডেন মনির ঢাকার একটি দোকানের সেলস ম্যান থেকে কীভাবে গোল্ডেন মনির হলেন তার আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কীভাবে অর্থ বিদেশে পাচার করতেন এবং কারা তা দেখভাল করতো স্বীকার করেছেন এসবও। দেশীয় ৫টি ব্যাংকে নিজের অ্যাকাউন্ট রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন। এছাড়াও পরিবারের একাধিক সদস্যের নামেও আছে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। সেই অ্যাকাউন্টগুলোর লিস্ট এবং  সেই অ্যাকাউন্টগুলোতে কত টাকা লেনদেন হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কিছু বিষয় গোপন করার চেষ্টা করেছেন। সেগুলো জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।    

সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন মূলত নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় অভিযান শুরু হলে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে বসবাসে যাতে আর্থিক সংকটে না পড়েন এজন্য সুইস ব্যাংকে টাকা পাচারের কারণ। এছাড়াও ব্যাংকে গচ্ছিত কিছু টাকা তিনি ওই দেশের আরেকটি  কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই র‌্যাবের জালে ধরা পড়েছেন তিনি।

পুলিশ জানায়, গোল্ডেন মনির পড়ালেখা কম জানার কারণে কীভাবে বিদেশের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় এবং টাকা পাঠাতে হয় তা তিনি জানতেন না। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার আরিফ এবং শামসুল। তারা দু’জনই হুন্ডি ব্যবসায়ী। হুন্ডি ছাড়াও তারা দু’জন সোনা  চোরাচালানকারী। সোনা চোরাচালান করতে গিয়েই মনিরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে তারা দু’জন সোনা বহনকারী চক্রের সদস্য। মনিরের মতো অবৈধভাবে বড় সম্পদ গড়তে পারেনি।

সূত্র জানায়, শামসুলের আত্মীয় রফিক উদ্দিন থাকেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। সেখানে তার হোটেল ব্যবসা আছে। এছাড়াও তিনি দেশের হুন্ডির বড় চক্র নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। রফিকের গ্রামের বাড়ি আড়াইহাজারের ফতেহপুর ইউনিয়নে। মনিরের সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার ক্ষেত্রে শামসুল এবং রফিক বড় ভূমিকা রেখেছে। শামসুল করোনার আগে দেশে এসেছিলেন এবং ওই সময় গোল্ডেন মনিরের সঙ্গে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে ডিনার করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোল্ডেন মনির স্বীকার করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status