প্রথম পাতা

ট্রাম্প বার বার মত পাল্টাচ্ছেন

মানবজমিন ডেস্ক

২৫ নভেম্বর ২০২০, বুধবার, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

বার বার মত পাল্টাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির ভিত্তিহীন অভিযোগ করে আইনের আশ্রয় নিলেও তিনি সেই আইনি লড়াইয়ে একের পর এক হারছেন। নিজের দল রিপাবলিকান নেতা, ব্যবসায়ী নেতা ও সিনেটরদের চাপের মুখে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মতি দিয়েছেন বলে মিডিয়ার খবরে বলা হয়। এ বিষয়ে তিনি টুইটও করেছেন। তবে এর মধ্যেও তিনি ‘কিন্তু’ লুকিয়ে রেখেছেন। কারণ, ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্মতি দিলেও তিনি নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করেননি। প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে বিজয়ী হিসেবে মেনে নেননি। ভোটের ফল নিয়ে লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছেন। ফলে ট্রাম্প যে কখন কোনদিকে মোড় নিচ্ছেন তা বোঝা কষ্ট হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে সারা দুনিয়ার মিডিয়ায় খবর চাউর হয়েছে যে, ট্রাম্প ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মতি দিয়েছেন।
তাতে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বাস্তবতা থেকে দূরে থাকতে পারছেন না। তার বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। একে একে রিপাবলিকানরা তার পাশ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। ভোট জালিয়াতির অভিযোগে করা মামলা একে একে খারিজ হয়ে যাচ্ছে। ফলে হোয়াইট হাউসের চাবিটা নিজের তালুবন্দি করতে তিনি যেসব উপায় অবলম্বন করেছিলেন তার সবটা একের পর এক তাসের ঘরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন মিডিয়া লিখেছে, তাকে কার্যত আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে। সোমবার রাতে তিনি জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিএসএ) প্রশাসক এমিলি মারফির ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্যোগ মেনে নিয়েছেন বলে টুইট করেছেন। তিনি পরাজয় স্বীকার করুন আর নাইবা করুন এখন তাকে আগামী ২০শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউস থেকে বিদায়টা নিতেই হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একগুঁয়েমি এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনকে নিয়ে এমন সব কথা লিখেছে অনলাইন সিএনএন, বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউ ইয়র্ক টাইমস ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার সময় ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে। তিনি বাকি কয়েকটি দিন দেখছেন যে, তার উদ্ভট দাবির কারণে তার পাশ থেকে অধিক থেকে অধিক পরিমাণে রিপাবলিকানরা সরে যাচ্ছেন। আদালতে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার কারণে নিজের আইনজীবী রুডি গিলিয়ানি এবং তার সহযোগী কিস্টোন কোপসের প্রতি তীব্র হতাশা ব্যক্ত করেছেন ট্রাম্প- এ কথা বলেছেন সিএনএনের জিম অ্যাকস্টা। বিবিসি বলেছে, ট্রাম্পের মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন টিনেসির সিনেটর লামার আলেকজান্দার। তিনি বলেছেন, দেশকে সবার আগে রাখা উচিত প্রেসিডেন্টের। একই সঙ্গে তার উচিত জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণে সহায়তা করা। তার ভাষায়, যখন আপনি সরকারি দায়িত্বে থাকবেন, তখন জনগণ আপনার সেই জিনিসটিই মনে রাখবে, যেটা আপনি শেষে করবেন। ট্রাম্পের পাশ থেকে সরে গেছেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার সিনেটর শেলি মুর ক্যাপিটো। তিনি বলেছেন, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একটি পয়েন্টে এসে শেষ হতে হবে। ওদিকে কমপক্ষে ১৬০ জন ব্যবসায়িক নেতা এমি মারফির কাছে লিখিত চিঠিতে আবেদন জানিয়েছেন, বাইডেনকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবিলম্বে স্বীকৃতি দিতে। তারা চিঠিতে লিখেছেন, আসন্ন প্রশাসনের কাছ থেকে রিসোর্স এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সুবিধা দূরে সরিয়ে রাখার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলা হয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, জো বাইডেনের মিশিগানের জয় সার্টিফাই করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অনুমোদন দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। এটা হলো শক্তিশালী একটি ইঙ্গিত যে, নির্বাচনের ফলকে পাল্টে দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্টের শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের ফল তার সমাপ্তিতে এসেছে। ট্রাম্প কিন্তু এখনো পরাজয় স্বীকার করেন নি। তিনি ভোটের ফলকে চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। তবে তার এমন চেষ্টা এরই মধ্যে অর্থহীন প্রমাণিত হয়েছে। এ অবস্থায় তিনি এমিলি মারফির সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। রয়টার্স লিখেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় সবুজ সংকেত দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প ৩রা নভেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেন নি। ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মতি দিলেও তিনি কিন্তু পরাজয় স্বীকার করে নেননি এবং বিজয়ী প্রার্থী জো বাইডেনের বিজয় মেনে নেননি সোমবার। তিনি যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরে স্টাফদের সহযোগিতা করার কথা বলেছেন। ব্যাটলগ্রাউন্ড বলে পরিচিত রাজ্যগুলোতে নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করা সব মামলায় তিনি পরাজিত হয়েছেন। ক্রমবর্ধমান রিপাবলিকান নেতা, ব্যবসায়ী নির্বাহী এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা তাকে ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ওদিকে, এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন তার প্রশাসনিক কাজ শুরু করেছেন। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নিরাপত্তা বিষয়ে ব্রিফিং দেয়া হবে। তিনি অফিস করার স্থান পাবেন। পাবেন সরকারি কর্মকর্তা। এ জন্য তাকে ৬৩ লাখ ডলারের তহবিল দিচ্ছেন জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিএসএ) প্রশাসক এমিলি মারফি। এর মধ্যে ট্রাম্প পরিষ্কার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন তার প্রেসিডেন্সির দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন প্রটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যা করার তাই করতে। তার বিদায়ে শুরু হবে বাইডেন প্রশাসনের সময়। তবে তার অন্তর্বর্তী টিমকে ট্রাম্প পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করবেন কিনা তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। অনলাইন সিএনএন লিখেছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গেছে। এ সময় ট্রাম্প উদ্ভট সব অভিযোগ দাঁড় করিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর আক্রমণ করেছেন। কিন্তু তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার যে খায়েশ ছিল তা সোমবার উবে যায়। বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এমিলি মারফি সোমবার প্রশাসনিক সুইচ চূড়ান্তভাবে অন করে দেয়ার মাধ্যমে। তার এই অবস্থানের কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে প্রশাসনিক মেশিনারি। কিন্তু এই ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন বহু মিলিয়ন ডলার। প্রশাসন সেই অর্থ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন টিমকে সরবরাহ করতে এবং তার টিমকে সব বিষয়ে ব্রিফিং করতে বাধ্য। সেই অর্থ দেয়ার কথা বলেছেন এমিলি মারফি। তার সর্বশেষ অবস্থানের আগেই জো বাইডেন বসে থাকেননি। তিনি কীভাবে তার প্রশাসন সাজাবেন, কীভাবে ক্ষমতা বিতরণ করবেন তা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এ জন্য তিনি তার মন্ত্রিপরিষদে বেছে নিচ্ছেন হাই প্রোফাইল সব ঝানু রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, পররাষ্ট্রনীতিবিদসহ অন্য ব্যক্তিদের। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি আগামী বছরের ২০শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ক্ষমতা শুরু করতে যাচ্ছেন। পছন্দের তালিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আছেন তার দীর্ঘদিনের পরিচিত, অভিজ্ঞ অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ওদিকে আরো ২ মাস ক্ষমতায় আছেন ট্রাম্প। এ সময় তিনি প্রেসিডেন্সির ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন। একই সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের জন্য স্যাবোটাজ করার পর্যাপ্ত সময় পাবেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status