শেষের পাতা

নেতানিয়াহু, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও মাইক পম্পেওর গোপন বৈঠক

মানবজমিন ডেস্ক

২৪ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

অনলাইন এক্সিওসের এক প্রতিবেদনে ইসরাইলের সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, রোববার গোপনে সৌদি আরব সফর করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সফরে তিনি সৌদি আরবের লোহিত সাগর উপকূলে নিওম শহরে বৈঠক করেছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে। এমন বৈঠকের কথা সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান সোমবার প্রত্যাখ্যান করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠকের কথা প্রত্যাখ্যান করেননি নেতানিয়াহু। ফলে এ থেকে একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, ওই বৈঠকের কথা ফাঁস হওয়ায় অস্বস্তিতে থাকতে পারে সৌদি আরব। অথবা তারা ন্যূনতমভাবে ওই বৈঠকের বিষয়ে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। দ্য এক্সিওসে ওই প্রতিবেদনটি তেল আবিব থেকে লিখেছেন বারাক রাবিদ। তিনি আরো লিখেছেন, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টুইটে লিখেছেন, সম্প্রতি সৌদি আরব সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তার এ সফরের সময় ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইসরাইলি কর্মকর্তাদের মধ্যে যে বৈঠকের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তা আমি দেখেছি। এমন কোনো মিটিং হয়নি। সেখানে যেসব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন তারা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের এবং সৌদি আরবের।
এর মাত্র কয়েক মিনিট পরে ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে লিকুদদের এক বৈঠকে জোটের হুইপ বৈঠক সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন নেতানিয়াহুকে। জবাবে তিনি বলেছেন, এসব ইস্যুতে আমি কখনো মন্তব্য করিনি। এখন থেকে শুরু করে কখনো তা করবোও না। আমি শুধু বলতে চাই যে, আমি শান্তি প্রক্রিয়ার সার্কেল বা বৃত্তকে বিস্তৃত করার জন্য কাজ করছি। আশা করি তা বর্ধিত হবে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর এই সফর নিয়ে অন্ধকারে ছিলেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গানটজ। তিনিও নেসেটে দলীয় এক বৈঠকে এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন এবং ইঙ্গিত দেন যে,  দেশে রাজনৈতিক সুবিধার জন্যই নেতানিয়াহু এ সম্পর্কে তথ্য ফাঁস করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে বহু বছর ধরে সৌদি আরব ও ইসরাইলের মধ্যে রয়েছে এক গোপন সম্পর্ক। কিন্তু এবারই প্রথম এমন উচ্চ পর্যায়ের গোপন বৈঠকের খবর প্রকাশ পেলো, যদিও কোনো পক্ষই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবে অনলাইন ফ্লাইট রাডার বিষয়ক সাইটগুলোর ডাটায় দেখা যাচ্ছে, রোববার সন্ধ্যায় তেল আবিব থেকে একটি প্রাইভেট জেট বিমান উড়াল দিয়েছে। তা সরাসরি উড়ে যাচ্ছিল নিওমে। এর ৫ ঘণ্টা পরে ওই জেট বিমানটি ফিরে এসেছে ইসরাইলের ভূখণ্ডে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের সাক্ষাতের যে শিডিউল প্রকাশ করা হয়েছে, সেই সময়ের সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে মিলে যায় ইসরাইলের ওই জেটের ফ্লাইটের সময়।
তেল আবিব থেকে নিওমের উদ্দেশে ইসরাইল থেকে জেট বিমান উড়ে গেলে তা বিমান চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থায় ধরা পড়বে এ বিষয়টি জানে সৌদি আরব, ইসরাইল ও মার্কিনিরা। ফলে ওই মিটিংয়ের কথা ফাঁস করে দেয়া হয়ে থাকতে পারে।
বারাক রাবিদ আরো লিখেছেন, ইসরাইলি সূত্রগুলোর মতে, এই সফর সম্পর্কে আগেভাগে জানতে দেননি জোটের অংশীদার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গানটজ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাবি অ্যাশকেনাজিকে। এখানে উল্লেখ্য, গানটজ, অ্যাশকেনাজি দু’জনেই নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। বারাক রাবিদ লিখেছেন, ইসরাইলের সূত্রগুলো আমাকে বলেছেন- সৌদি আরবে নেতানিয়াহুর এই সফরে তার সঙ্গে ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালক ইয়োসি কোহেন। এ রিপোর্ট সম্পর্কে নেতানিয়াহুর অফিস থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এমনকি এ তথ্যকে প্রত্যাখ্যানও করা হয়নি। ইসরাইলের সংবাদ মাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর নেতানিয়াহুর সামাজিক মিডিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা টোপাজ লুক টুইট করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, বেনি গানটজ যখন রাজনীতি নিয়ে কাজে ব্যস্ত তখন প্রধানমন্ত্রী শান্তি নিয়ে কাজ করছেন।
ওদিকে রোববার সন্ধ্যায় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস থেকে ওই বৈঠক স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়। কারণ হিসেবে জানানো হয়, আরো অনেক কিছু কাজ করার প্রয়োজন। বারাক রাবাদ লিখেছেন, ইসরাইলি সূত্রগুলো আমাকে বলেছেন, এটা ছিল আসলে ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার কাহিনী। মন্ত্রিপরিষদের ওই বৈঠক স্থগিত করার মূল কারণ হলো নেতানিয়াহুর গোপন সৌদি আরব সফর। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পশ্চিমা কয়েকটি শক্তিধর দেশ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসেন ২০১৬ সালে। এর দু’বছর পরে ২০১৮ সালে তিনি একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ইরানের ওপর অবরোধ আরোপ করেন। এবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেট জো বাইডেন। তিনি ওই চুক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাইডেনের আসন্ন প্রশাসনের এই প্রতিশ্রুতির কারণে অত্যন্ত উদ্বেগে আছে ইসরাইল ও সৌদি আরব। তাই রোববার সৌদি আরবে সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেছেন, ইরানকে পারমাণবিকীকরণের বিরুদ্ধে আমাদের সঙ্গে দাঁড়ানোর সুস্থির অবস্থানের জন্য ধন্যবাদ। অনেক আরব দেশ মৌলিক অর্থে ইসরাইলের প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তন করেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status