খেলা

চির বিদায়

স্পোর্টস রিপোর্টার

২৪ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন

পুরো ফুটবলপাড়া শোকে কাতর। ক্লাব পাড়া খ্যাত মতিঝিলের বাতাস ভারী দেশের কিংবদন্তি ফুটবলার বাদল রায়ের চির বিদায়ে। সাবেক ফুটবলার, সংগঠক, সতীর্থ ও ভক্তদের চোখে জল। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ফুটবলারকে এক নজর দেখতে ভিড় করেছেন তারা। গতকাল প্রথমে মোহামেডান তারপর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সকলে শেষ শ্রদ্ধা জানান এই ফুটবল কিংবদন্তিকে।
আগের দিন ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যুবরণ করা বাদল রায়কে কাল প্রথমে নেয়া হয় তার প্রিয় ক্লাব মোহামেডানে। আবাহনী, ব্রাদার্স অনেক লোভনীয় প্রস্তাব দিলেও বাদল রায় মোহামেডানের মায়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন অবলীলায়। ক্যারিয়ারের শুরুটা যেখানে করেছেন শেষটাও সেই মোহামেডানের হয়ে করেছেন। জীবদ্দশায় যে বাদল রায়কে কেউ মোহামেডান থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি শেষ পর্যন্ত সেটা পারলো মৃত্যু। এই ক্লাবে এক ঘণ্টা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় বাদলের মরদেহ। সাবেক ফুটবলার, সতীর্থ, সংগঠক ও ভক্তদের শ্রদ্ধায় মোহামেডান থেকে শেষ বিদায় নেন এই কিংবদন্তি।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে বাদল রায়ের মরদেহ নেয়া হয় তার প্রিয় ক্লাব মোহামেডানে। পৌনে এক ঘণ্টার মতো সেখানে ছিল বাদল রায়ের নিথর দেহ। ফুটবলাঙ্গনের শত শত মানুষ, শত শত মোহামেডান সমর্থক এবং ভক্তরা মোহামেডান ক্লাবে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান বাদল রায়কে। মোহামেডান ক্লাবে বাবার মরহেদের পাশে দাঁড়িয়ে তার কন্যা বৃষ্টি রায় বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা ভালো মানুষদের আগে নিয়ে যান। আমার বাবা ভালো মানুষ ছিলেন বলেই তাকে আগে নিয়ে গেলেন। আমার বাবা ফুটবলকে অনেক ভালোবাসতেন। তিনি চলে গেলেন। আমি চাই ফুটবল ভালো থাকুক, ফুটবল এগিয়ে যাক। বাবা নেই, এখানে যারা আছেন তারা আমাদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে থাকবেন। ফুটবল ভালো থাকলে ফুটবলের মাঝেই বেঁচে থাকবেন আমার বাবা। সেখানেই মরদেহের পাশে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন তার স্ত্রী মাধুরী রায় ও ছেলে বর্ণ রায়। প্রতিক্রিয়া জানানোর অনুরোধ করলেও কিছু বলতে পারেননি বাদল রায়ের স্ত্রী মাধুরী রায়।
১৯৭৭ সালে মোহামেডানের হয়ে ঢাকার ফুটবলে অভিষেক হয় বাদল রায়ের। ক্লাব পর্যায়ে এক যুগের মতো খেলেছেন এবং পুরো সময়টাই মোহামেডানে। যে কারণে ‘মোহামেডানের বাদল’ হিসেবে সুখ্যাতি ছিল তার। সাবেক তারকা ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ শঙ্কর হাজরা থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের ফুটবলাররা মোহামেডান ক্লাবে ছুটে গিয়েছিলেন শেষবারের মতো বাদল রায়কে দেখতে। ক্লাবের বর্তমান ফুটবলাররা দলের বিদেশি কোচের নেতৃত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বাদল রায়কে। কারো চোখে পানি, কারো মুখে বাদল রায়ের সোনালী সময়ের গল্প। হাজারো স্মৃতিকথায় ফিরে আসে আশির দশকের মাঠ মাতানো ফুটবলার বাদল রায়। তিনি চলে গেছেন। ফুটবলে তার অবদান তাকে সবার মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে চিরদিন। বেলা ১২টায় শেষবারের মতো চিরচেনা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয় বাদল রায়ের মরদেহ। এই মাঠেই একসময় লাখো মানুষকে উৎসবের মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন বাদল রায়। সেখানে বাদল রায়ের কফিনে একে একে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। ক্রীড়াঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাছিম, অসীম কুমার উকিলসহ আরো অনেকে। ব্যরিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘বাদল রায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের ফুটবল ভালো থাকলে, তিনি ওপারে ভালো থাকবেন। তার আদর্শ ধারণ ও বাস্তবায়নই হবে অন্যদের জন্য পাথেয়। ’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া পুষ্পাঞ্জলী অর্পণ করেন। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, হকি ফেডারেশন, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন, হ্যান্ডবল ফেডারেশন, আরচারি ফেডারেশন, বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন, সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার, সোনালী অতীত ক্লাব ঢাকা, বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশন, কলকাতা মোহামেডান, সাবেক জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ফুটবল দলের অধিনায়ক আমিনুল হক, নেপাল ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি গণেশ থাপা। সকলের শ্রদ্ধা জানানো শেষে সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নেয় বাদল রায়ের কফিন। বিকাল পাঁচটায় রাজধানীর সবুজবাগ কালী মন্দিরে শশ্মানঘাটে ফুলের সুবাস ও চন্দনকাঠের ধোঁয়া উড়িয়ে বাদল রায় মিশে রইলেন এই দেশের বাতাসে, মাটিতে-জলকণায়! খেলার সতীর্থরা চোখের কোণে জল নিয়ে শেষ বিদায় বললেন। সমর্থকদের শ্রদ্ধা-সম্মানে আর স্মরণে বাজলো ‘জীবন ম্যাচের’ শেষ বাঁশি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status