শেষের পাতা

নারায়ণগঞ্জে তরুণীকে খুনের নেপথ্যে আপন ভাই, লাশ গুম করে বাবা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

২৩ নভেম্বর ২০২০, সোমবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অজ্ঞাত যুবতীর লাশ উদ্ধারের প্রায় ৬ মাস পর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অজ্ঞাত ওই যুবতীর নাম পাপিয়া বেগম। তাকে খুন করে তার আপন ভাই। আর লাশ গুম করে তার পিতা জয়নাল ও প্রেমিক আরিফুল। গতকাল দুপুরে ফতুল্লার ভুইগড়ে পিবিআই কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত ২৮শে মে আড়াইহাজার উপজেলার শিমুলতলা থেকে পুলিশ অজ্ঞাতনামা এক যুবতীর লাশ উদ্ধার করে। পরে পরিচয় না পাওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি গত ২৩শে জুলাই পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই তদন্ত শুরু করে আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে অবশেষে পরিচয় পায় ওই যুবতীর নাম পাপিয়া বেগম (২০)।
পুলিশ প্রথমে পাপিয়ার পিতা জয়নাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। পরে তাকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে জানায়, তার পরিকল্পনা মতেই পাপিয়ার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে আড়াইহাজারের শিমুলতলা নামক স্থানে জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়েছে। তার তথ্যমতে, গত বুধবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম ঘটনায় জড়িত আসামি আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
যেভাবে হত্যার পর পাপিয়ার লাশ গুম করা হয়
গত শনিবার আসামি আরিফুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আদালতকে সে জানায়, তার সঙ্গে পাপিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এই সম্পর্ক পাপিয়ার ভাই সাম্মি (তৃতীয় লিঙ্গ মর্মে জনশ্রুতি আছে) মেনে নিতে পারেনি। সাম্মি চাইতো আরিফুল ইসলাম তার সঙ্গে প্রেমের মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলুক। কিন্তু এই বিষয় পাপিয়া জানতে পারে এবং দুইজনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। ঘটনার দিন গত ২৭শে মে আরিফুল ইসলাম, পাপিয়া ও তার ভাই সাম্মি পাপিয়ার ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিল। দুইজনের ঝগড়ার কারণে আরিফুল বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে বৃষ্টির কারণে যেতে না পারায় তার পরিচিত একই বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় জনৈক সামিয়ার বাড়িতে অবস্থান করে। কিছুক্ষণ পরে পুনরায় আরিফুল পাপিয়ার ঘরে এসে পাপিয়ার লাশ ঘরের বিছানার ওপর দেখতে পায়। এ সময় পাপিয়ার গলায় ওড়না প্যাঁচানো ছিল এবং সাম্মি ঘর থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আরিফুল ঘরের ভেতরে চলে আসায় সাম্মি আরিফুলকে বলে যে, পাপিয়া বেঁচে আছে। পরে তারা একজন স্থানীয় ডাক্তারকে ডেকে এনে জানতে পারে পাপিয়া মারা গেছে। সাম্মির মাধ্যমে তার বাবা জয়নাল, পাপিয়ার মৃত্যুর খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে আসে। পরে পাপিয়ার পিতা জয়নালের পরিকল্পনা মতে আরিফুল ইসলাম, জয়নালের ছেলে মামুন এবং সাম্মি মিলে পাপিয়ার লাশ ভৈরব ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে তারা সবাই মিলে একটি এম্বুলেন্স ভাড়া করে পাপিয়ার লাশ এম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে রওয়ানা হয়। কিন্তু পথিমধ্যে পুলিশের চেক পোস্ট থাকায় তারা আড়াইহাজার থানার শিমুলতলা নামক স্থানে রাস্তার পাশে জঙ্গলের ভেতরে পাপিয়ার লাশ ফেলে দিয়ে চলে যায়।
উল্লেখ্য, গত ২৮শে মে আড়াইহাজারের শিমুলতলা থেকে পুলিশ এক অজ্ঞাতনামা যুবতীর লাশ উদ্ধার করে। এবং পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় ২৯শে মে একটি মামলা দায়ের করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status