প্রথম পাতা

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ - প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

২২ নভেম্বর ২০২০, রবিবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

সততা, দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতায় বলীয়ান হয়ে সশস্ত্র বাহিনী দেশ গড়ার কাজে অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে দেয়া ভাষণে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন। করোনা ঝুঁকির কারণে এবার সীমিত পরিসরে এ দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়। প্রতিবছর সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দিলেও এবার তার ভাষণ টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সকালে তিন বাহিনীর প্রধান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম এবং পেশাগত দক্ষতায় বলীয়ান হয়ে দেশের প্রতিরক্ষা এবং দেশ গড়ার কাজে আরো বেশি অবদান রাখবেন- পরম করুণাময় আল্লাহ্‌তায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করি। সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করছি।
তিন বাহিনী সদস্যসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রবর্তিত ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’- এই মূলমন্ত্র দ্বারা আমাদের বৈদেশিক নীতিমালা পরিচালিত। প্রতিবেশী সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আমরা বিশ্বাসী। তবে, যে কোনো আগ্রাসী আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদাপ্রস্তুত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষানীতি ১৯৭৪-এর আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র বাহিনীকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠন, উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বিশেষায়িত সামরিক সজ্জায় সজ্জিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে আজকের এই দিনটি এক বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যগণ যৌথভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করেন। সম্মিলিত আক্রমণের মুখে শত্রুবাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথা জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে যে সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম হয়েছিল, তা আজ মহীরূহ হয়ে বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা একটি উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। সে লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করেছিলেন প্রতিরক্ষা নীতি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালেই গড়ে তোলেন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার। বঙ্গবন্ধু একইসঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তিনটি ঘাঁটি উদ্বোধন করেন। ভারত ও যুগোস্ল্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করেন। ১৯৭৩ সালে সে সময়ের সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান এবং এয়ার ডিফেন্স রাডারের মতো অত্যাধুনিক সরঞ্জাম বিমান বাহিনীতে সংযোজন করেন। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী লগ্নে জাতির পিতা প্রণীত জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ‘লক-ডাউন কার্যক্রম’ বাস্তবায়ন করেছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে মহামারি প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিবর্গের জন্য কোয়ারেন্টিন সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা করে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে আটকে পড়া দেশি-বিদেশি নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ১৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের করোনা চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি মেডিকেল টিম মালদ্বীপে প্রেরণ এবং লেবাননে সংঘটিত ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সেখানে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অতীতে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষতা দেখিয়েছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। এ বছর জাতিসংঘের ৭৫তম বছরপূর্তিতে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা আবারও সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রদানকারী দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন মেজর জেনারেল পদবির অফিসার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মনোনীত হয়েছেন এবং ফোর্স কমান্ডার হিসেবে একজন মেজর জেনারেল বা লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদবির অফিসার নিয়োগের কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২টি পদাতিক ব্রিগেড, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য ১টি কম্পোজিট ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন ছাড়াও ১০টি ব্যাটালিয়ন, এনডিসি, বিপসট, এএফএমসি, এমআইএসটি, এনসিও’স একাডেমি ও বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সেনা আবাসন প্রকল্প, উন্নতমানের রসদ সরবরাহ এবং বহুতল সরকারি পারিবারিক বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর শহীদ/মৃত/অবসরপ্রাপ্ত অসহায় বিধবা পত্নীদের দুস্থ ভাতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার, জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সদস্যগণের ছুটি নগদায়নের অর্থ প্রদান ১২ মাসের পরিবর্তে ১৮ মাসে উন্নীত করা হয়েছে। জেসিও ও অন্যান্য পদবির পেনশনযোগ্য চাকরিকাল ১৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সদস্যগণের জন্য মৃত্যুবরণ এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ বাবদ অনুদানের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের সরকারই সর্বপ্রথম সশস্ত্র বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ করে। গত বছর থেকে সেনাবাহিনীতে পাঁচজন নারী সদস্য লে. কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে সম্মুখসারির যুদ্ধের ইউনিটসমূহের ইউনিট অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত আছেন।
অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিশ্বসভার যৌথ নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী: ওদিকে বৈশ্বিক ফোরাম ‘ওয়ান হেল্‌থ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’- এর কো-চেয়ার মনোনীত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মোত্তেলি’র সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধান গ্রুপটিতে যৌথভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওই দায়িত্ব পালন করবেন। রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠা ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ সব কার্যকর ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে যাত্রা শুরু করেছে- ‘ওয়ান হেল্‌থ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স’- নামের নতুন এক প্লাটফর্ম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তিনটি বিশেষায়িত সংস্থার যৌথ উদ্যোগে শুক্রবার থেকে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। জাতিসংঘের দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পাশাপাশি প্লাটফর্মটি গঠনে অনন্য ভূমিকা রেখেছে প্রাণীর রোগ প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিম্যাল হেল্‌থ (ওআইই)। ওষুধের বিরুদ্ধে জীবাণুদের ক্রমেই প্রতিরোধী হয়ে ওঠা বা ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’-মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে গ্রুপটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান এবং মন্ত্রীদের পাশাপাশি গ্রুপটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। বিশ্বজুড়ে সুখ্যাতি থাকা এসব সদস্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে জীবাণু ধ্বংসে সক্ষম ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবেন। একই সঙ্গে জীবাণুদের ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার মারাত্মক পরিণতির বিষয়ে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করবেন। পাশাপাশি ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে সামর্থ্য মতো সহায়তাও দেবেন গ্রুপের সদস্যরা। বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ চলার মধ্যে যাত্রা শুরু করলো প্লাটফর্মটি। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিষয়ক আন্তঃসংস্থা সমন্বয় গ্রুপের পরামর্শে এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সমর্থনে এর সৃষ্টি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status