বাংলারজমিন
১২ বছরের বন্দিদশা থেকে যেভাবে পালিয়ে এলো নাছিমা
সেনবাগ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
২০২০-১১-২০
সেনবাগের ডমুরুয়া ইউনিয়নের পরিকোট গ্রামে নাছিমা নামের এক যুবতীকে ফেনীতে যৌনদাসী হিসেবে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল আপন চাচি আফরোজা বেগম মুন্নী। এ ঘটনায় মুন্নী সহ একটি সিন্ডিকেট জড়িত বলে জানিয়েছে নির্যাতিতা নাছিমা (২৬)। এক যুগ ধরে চাচিসহ সিন্ডিকেটটি মাসে ১০ হাজার টাকা করে বখরা নিতো ফেনীর তাকিয়া রোডের জৈনিক জয়নাল আবদীন থেকে। বহুবার পালিয়ে আসার চেষ্টা করেও ধরা পড়ে যেতো নাছিমা। এরপর নেমে আসতো নির্যাতন। ১২ বছর পর পালিয়ে এসে নাছিমা জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় লোকজনকে বিষয়টি জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে এসে লোমহর্ষক বর্ণনা দেন ভিকটিম নাছিমা, তার পিতা ও মাতা। এর আগে ১১ জনকে আসামি করে ভিকটিম বাদী হয়ে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল ১ এ এজাহার দাখিল করেছেন। এ ঘটনায় সেনবাগের উত্তর জনপদে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে নাছিমার পিতা মাতার অনুপস্থিতির সুযোগে তার আপন চাচি আফরোজা বেগম মুন্নি, তার চাচা ইদ্রিস মিয়া ও চাচাতো ভাই আবদুল্লা শফি তাকে আত্মীয় বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে মুন্নির বোনের বাড়ি ওয়াসেকপুর গ্রামে নিয়ে যায়। তার কান্নাকাটির এক পর্যায়ে পরদিন তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার কথা বলে ফেনী তাকিয়া রোডের সৈয়দ বাড়ির জয়নাল আবেদীনের নিকট নগদ ২ লাভ টাকা ও মাসিক বেতনের শর্তে বিক্রি করে গোপনে বাড়িতে চলে আসে। এরপর নাছিমা বাড়িতে আসার জন্য কান্নাকাটি শুরু করলে শুরু হয় তার ওপর নির্যাতন। দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর সে অমানুষিক শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এর মধ্যে গত ৮ মাস পূর্বে নাছিমাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জয়নাল আবেদীনের বাড়ির কর্মচারী আবদুল গণির নিকট বিবাহ দেয়া হয়। বর্তমানে সে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। চলতি মাসের ৫ই নভেম্বর জয়নাল আবদীনের বন্দিদশা থেকে পালিয়ে আসে। বিভিন্ন লোকজনকে সেনবাগের পরিকোট নিজ গ্রামের ঠিকানা জিজ্ঞেস করে বাড়িতে ফিরে আসে। ১২ বছর আগে পিতা মাতা ও স্বজনরা তাকে হারিয়ে তার আসা ছেড়ে দেয়। ভিকটিম বাড়িতে আসার পর বিষয়টি উন্মোচিত হয়। সে স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ গণ্যমান্য লোকজনকে পুরো ঘটনা খুলে বলে। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাটি অভিযুক্তদের সাথে মীমাংসা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো ভিকটিম নাছিমা সহ তার পরিবারকে হেনস্থা করতে চাচা ইদ্রিস রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হুমকি দেয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার দুপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এতে শত শত লোক যোগ দেন। এ ব্যাপারে সেনবাগ থানার ওসি আবদুল বাতেন মৃধা জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে অভিযুক্তরা বসতঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে। যোগাযোগ করেও তাদের হদিস পাওয়া যায়নি।