বিশ্বজমিন

বারাক ওবামার নিজের বর্ণনা

লাদেনকে মারতে কেমন গোপনীয়তা অবলম্বন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র

মানবজমিন ডেস্ক

১৮ নভেম্বর ২০২০, বুধবার, ১:৩৪ পূর্বাহ্ন

পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে অতি গোপন এক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলরা। এই মিশনে তারা হত্যা করে আল কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে। কিন্তু এই অভিযান নিয়ে অসম্ভব রকম গোপনীয়তা রক্ষা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রে তখন ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন। কিন্তু অভিযান ব্যর্থ হলে কি হবে, তা ভেবে এর বিরোধিতা করেছিলেন তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু কেন এত গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়েছিল? সে সম্পর্কে নিজেই তার স্মৃতিকথা ‘এ প্রমিজড ল্যান্ড’-এ বলেছেন বারাক ওবামা। ওসামা বিন লাদেন অবস্থান করছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটির কাছেই অ্যাবোটাবাদে। বিষয়টি পাকিস্তানের কাছে ছিল ওপেন সিক্রেট। ফলে পাকিস্তানকে এই অভিযানে জড়িত করার পরিকল্পনা বাদ দেন বারাক ওবামা। ওই অভিযানে ২০১১ সালের ২রা মে আল কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেন নিহত হন। এর পুংখানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছেন বারাক ওবামা। মঙ্গলবার তার বইটি সারাবিশ্বে প্রকাশ পেয়েছে। এতে তিনি বলেছেন, আল কায়েদার পলাতক এই নেতা কোথায় অবস্থান করেন সে সম্পর্কে ক্রমশ পরিষ্কার হওয়ার পর তাকে হত্যার বেশ কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়। ওবামা লিখেছেন, আমি যতদূর শুনতে পেয়েছিলাম, তাতে অ্যাবোটাবাদে তার বাসভবনে হামলা চালানোর মতো পর্যাপ্ত তথ্য আছে আমাদের হাতে। এ সময় কাজ অব্যাহত রাখে সিআইডি। অভিযান চালালে তা কেমন হবে তা নির্ধারণ করার জন্য নির্দেশ দিলাম টম ডোনিলন এবং জন ব্রেনানকে। এক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এমনকি ওসামা বিন লাদেনকে লক্ষ্য করে আমরা যে অগ্রসর হচ্ছি তার যদি বিন্দুমাত্র ফাঁস হয়, আমরা জানি তাহলে আমাদের সুযোগ নষ্ট হবে। তাই এই অপারেশনের পরিকল্পনা সম্পর্কে ফেডারেল সরকারের হাতেগোনা কয়েকজনই শুধু জানতেন। আমাদের সামনে আরো একটি বাধা ছিল। সেটা হলো, আমরা যেভাবেই অপারেশন চালাই তাতে কোনোভাবেই পাকিস্তানকে যুক্ত করা যাবে না।
ওবামা আরো লিখেছেন, যদিও সন্ত্রাসবিরোধী অপারেশনে পাকিস্তান সরকার আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে, আফগানিস্তানে আমাদের বাহিনীকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ পথের সুযোগ দিয়েছে, তবু এটা একটা ওপেন সিক্রেট ছিল যে- পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সুনির্দিষ্ট কিছু ‘এলিমেন্ট’ বা ব্যক্তি, বিশেষ করে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা তালেবান ও সম্ভবত আল কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। কখনো কখনো তাদেরকে আফগানিস্তানের সরকারকে দুর্বল রাখতে কৌশলগত সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করে তারা। একই সঙ্গে এক নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে উঠতে অক্ষমতায় তাদেরকে ব্যবহার করে।
ওবামা আরো লিখেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটি থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত আল কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনের ওই বাসভবন। এর ফলে এমন সম্ভাব্যতা জোরালো হয়ে ওঠে যে, আমরা পাকিস্তানকে জানালে, তাতে আমাদের লক্ষ্য শেষ হয়ে যেতে পারে। অ্যাবোটাবাদের বিষয়ে আমরা যে পন্থাটি বেছে নিই তাতে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করা হয়। এতে কূটনৈতিক ও অপারেশনাল জটিলতার সৃষ্টির ঝুঁকি ছিল। শেষ পর্যন্ত দুটি অপশন নিয়ে আলোচনা চলছিল। প্রথম অপশন ছিল, বিমান হামলা করে ওই ভবনটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া। দ্বিতীয় অপশন ছিল, একটি বিশেষ মিশন পরিচালনা করা। এর অধীনে একটি নির্বাচিত টিম হেলিকপ্টারে করে উড়ে যাবে পাকিস্তানে। তারা ওই বাসভবনে অভিযান চালাবে। পাকিস্তানের পুলিশ বা সেনাবাহিনী প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই তারা ফিরে আসবে।
তবে এক্ষেত্রে সমূহ ঝুঁকি ছিল। ওবামা ও তার জাতীয় নিরাপত্তা টিম দ্বিতীয় অপশনকেই বেছে নিলেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকদফা আলোচনা হলো এবং কষে পরিকল্পনা সাজানো হলো। অভিযানের জন্য যেদিন চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেন বারাক ওবামা, তার আগের দিন সিটুয়েশন রুমের বৈঠকে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বললেন- এটা ছিল ৫১-৪৯ কল। ওবামা লিখেছেন, এই অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন রবার্ট গেটস, যদিও তিনি হামলা চালানোর বিষয়ে উন্মুক্ত ছিলেন। যদি অভিযান ব্যর্থ হয় তাহলে এর ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে- এমন যুক্তি তুলে অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন জো বাইডেন। কিন্তু গোয়েন্দারা আমাকে অধিক নিশ্চিত করে জানালেন ওসামা বিন লাদেন তার বাসভবনের ভিতরে আছেন। তখনই আমি অন্যদের মত উপেক্ষা করি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি যত বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা নিয়ে কঠোর প্রশ্ন তুলেছেন জো বাইডেন। আমি তার এই ইচ্ছাশক্তির প্রশংসা করি। এতে কখনো কখনো আমাকে নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
অ্যাবোটাবাদে অভিযানে হত্যা করা হয় আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে। এরপর ওবামা দেশের ভিতরে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফোনকল করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথন হয়েছিল তখনকার পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে। এ সম্পর্কে ওবামা লিখেছেন, আমার মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফোনকল হয়েছিল তখনকার পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে। তার দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করার কারণে দেশের ভিতর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। আমি যখন তাকে ফোন করি, তিনি প্রথমেই আমাকে অভিনন্দন জানান এবং সমর্থন জানান। তিনি আমাকে বলেন, যা-ই ঘটেছে, এটা খুবই ভাল খবর। কিভাবে আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জঙ্গিরা তার স্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করেছিল তা বর্ণনা করে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
ওবামা লিখেছেন, পাকিস্তানি সেনা প্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কিয়ানিকে ফোন করলেন মাইক মুলেন। তাদের মধ্যে কথোপকথন ছিল শান্ত। এ সময় কিয়ানি অনুরোধ করেন, আমরা যেন এই অভিযান সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেই। কারণ, দেশের ভিতর জনগণ তাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status