এক্সক্লুসিভ

জেল খাটলেন নিরপরাধ মামুন

মোহাম্মদ ওমর ফারুক

১৬ নভেম্বর ২০২০, সোমবার, ৮:৩২ পূর্বাহ্ন

পুলিশের ভুলে আট দিন জেল খেটেছেন মামুন শিকদার নামে এক যুবক। মামুন নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার অর্জুনচর গ্রামের বাসিন্দা। যিনি আসামি না হলেও তার ওপর অবিচার করা হয়েছে বলে স্বজনদের অভিযোগ। শুধু তাই নয়, এতোদিন জেল খেটে গত শুক্রবার মুক্তি পেলেও এই বিষয়ে কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলার জন্য পুলিশের পক্ষ  থেকেও নিষেধ করা হয়েছে। জানা গেছে, যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এই মামলার আসামি তারই বড় ভাই মোসাদ্দেক শিকদার। তিনি গত দশ বছর ধরে লিবিয়ায় অবস্থান করছেন। ফলে প্রকৃত আসামিকে না পেয়ে মামুন শিকদার নামে ওই যুবককে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে মনোহরদী থানা পুলিশ। যার কারণে ৮ দিন ধরে বিনা অপরাধে জেল খেটেছেন ওই যুবক। তবে মামুন যে, ওই মামলার আসামি নন এ সংক্রান্ত নথিপত্র  রয়েছে এই প্রতিবেদকের হাতে ।  

ভুক্তভোগীর পরিবার দাবি করেন, যে মামলায় মামুনকে  গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে মামলার  প্রকৃত আসামি তারই ভাই মোসাদ্দেক শিকদার। তিনি ১০ বছর ধরে লিবিয়ায় রয়েছেন। কিন্তু পুলিশ ভুল করে  মোসাদ্দেকের পরিবর্তে মামুনকে গ্রেপ্তার করেন। তবে গত ৪ঠা নভেম্বর বাড়ি  থেকে  গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরের দিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামুন উপজেলার চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের অর্জুনচর  গ্রামের আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে। তিনি মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে শিকদার  ডেন্টাল  কেয়ারের মালিক। মামুনের বাবা বলেন, যে মামলায় মামুনকে  গ্রেপ্তার করা হয়েছে,  সে মামলার  প্রকৃত আসামি তারই আরেক  ছেলে লিবিয়া  প্রবাসী  মোসাদ্দেক শিকদার। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে পুলিশ ভুল করে ধরে নিয়ে গেছে। আমরা তখন তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা আমার ছেলেকে জোর করে নিয়ে যায়।

বিষয়টি নিয়ে মনোহরদী থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তাকে দুইবার ফোন দেয়া হলেও প্রতিবারই মিটিংয়ে আছেন অজুহাতে তিনি ফোনটি কেটে দেন। জানা যায়, ২০১৭ সালে ফরিদপুর জেলার আবদুর রহিম নামে এক ব্যক্তি লিবিয়ায় তার ভাতিজাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে জানিয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ওই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে লিবিয়া  প্রবাসী  মোসাদ্দেককে আসামি করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মোসাদ্দেকের পরিবর্তে তার ভাই মামুনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন মনোহরদী থানার এএসআই আব্দুল আহাদ। তার জামিনের জন্য চন্দনবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ হিরণ  প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। স্বজনরা জানান, পুলিশের ভুলে  আট-নয়দিন মামুন সাজা খেটেছেন। গ্রেপ্তারের পর থেকেই পুলিশ তার জামিন করিয়ে দেবে বলে আশ্বাসও দিলে এক্ষেত্রে তার জামিনের বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা ছিল না। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ হিরণ এই প্রতিবেদককে বলেন, মামুনের প্রতি পুলিশ অবিচার করেছে। তার পরিবার পুলিশকে অনুরোধ করলেও কিছু না শুনে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি মনোহরদীতে ব্যবসা করেন। তিনি একজন ব্যবসায়ী। তাকে আমরা সবাই চিনি। তিনি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না। যদিও তার বড় ভাই একটি মামলার আসামি। সেই মামলাই তার বড় ভাইকে না পেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে যখন আদালত বিষয়টি বুঝতে পারে, তখন তাকে জামিন দেয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী মামুন শিকদারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে  তার পরিবারের স্বজনরা জানান, গত শুক্রবার রাতে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর পরে মনোহরদী থানা থেকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছে পুলিশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status