এক্সক্লুসিভ

মা বলতেন কি চাই

আমি জোরে বলতাম ‘ফিদম’

কাজল ঘোষ

১৪ নভেম্বর ২০২০, শনিবার, ৮:৩০ পূর্বাহ্ন

আমার মা যে পরিবারে বড় হয়েছেন সেখানে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের যাতায়াত ছিল খুব স্বাভাবিক বিষয়। আমার দিদি মা রাজাম গোপালান কখনো হাইস্কুলে পড়েননি কিন্তু তিনি ছিলেন বড় রকমের সামাজিক আন্দোলনের কর্মী। তিনি স্বামীর নির্যাতনের শিকার একজন নারীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নির্যাতক সেই নারীর স্বামীকে ডেকে আমার দিদিমণি বলেছিলেন, যদি নির্যাতন বন্ধ না করো তাহলে তার দায়িত্ব আমিই নেবো। তিনি গ্রামের মেয়েদের সংঘবদ্ধ করে জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির কাজ করতেন।

দাদু পি.ভি. গোপালান ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। জাম্বিয়ায় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সেখানে কর্মরত তৎকালীন ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে আমার দিদিমা শরণার্থীদের পুনর্বাসন নিয়েও আলাপ করেছিলেন। তিনি মজা করে বলতেন, আমার দিদি মা’র সক্রিয় আন্দোলন ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি করবে। কিন্তু তিনি এও জানতেন- কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারবে না। সেখান থেকেই আমার মা শিখেছিলেন অন্যের জন্য কাজ করার মধ্য দিয়েই জীবনকে অর্থপূর্ণ করা যায়। আমি ও মায়া আমার মায়ের কাছ থেকে সেই শিক্ষাই পেয়েছি।

আমরা জন্মগতভাবেই আমার দিদি মা’র কাছ থেকে চলার সাহস ও শক্তি পেয়েছিলাম। যারা আমাদের জানেন তারা জানেন আমরা অন্যদের মতো নই। আমার মা এবং দিদি মা দু’জনই একটি তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক ধারণা গড়ে তুলেছিলেন। মা ছিলেন ইতিহাস সচেতন, কষ্টসহিষ্ণু, সচেতন ছিলেন শ্রেণিবৈষম্য নিয়েও। জন্মগতভাবেই তার ভেতরে ন্যায়বিচারের ছবি স্পষ্ট ছিল।

আমার পিতা-মাতা সিভিল রাইট মুভমেন্টে আমাকে স্ট্রলারে করে নিয়ে যেতেন। আমার তারুণ্যের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় আমি সেই মিছিল আর চিৎকারে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম। সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা ছিল আমাদের পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু। আমি যখন শৈশবে চিৎকার করতাম তখন তা আমার মা খুব পছন্দ করতেন। মা তখন বলতেন, কি চাও তুমি? আমি জবাবে বলতাম ‘ফিদম’।

আমার মা সব সময় তার পাশে যাদের নিয়ে চলতেন তারা ছিলেন বোনের চেয়েও বেশি। তেমন একজন ছিলেন আমার গডমাদার, যাকে আমি আন্টি মা বলতাম। ১৯৬০ সালের দিকে সিভিল রাইটস মুভমেন্ট চলাকালে তারা ওকল্যান্ডের বার্কলে স্প্রাউল পিৎজা হাউজের সোপ বক্সে দেখা করতেন। সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার নিয়ে লড়াই করা তরুণ-তরুণীরা মিলিত হতো। যারা ন্যায়বিচার নিয়ে কথা বলতো, রাজনীতির প্রতি যারা ছিল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাদের মধ্যে আমার মা এবং আন্টি মা ছিলেন।

তারা সেখানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নিয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা সেখানে পদযাত্রা করেছেন ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে, নাগরিক অধিকার আদায়ে এবং ভোটাধিকারের জন্য। বার্কলেতে তাদের সুযোগ হয়েছিল মার্টিন লুথার কিংয়ের বক্তৃতা শোনারও। আমার মা তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মা আমাকে বলেছিলেন, আমাদের যুদ্ধবিরোধী পদযাত্রা বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল হিলস অ্যাঞ্জেলসের জন্য। প্রতিবাদে হামলা চলাকালে বাঁচার জন্য আমাকে স্ট্রলারে নিয়েই মা নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটেছিলেন।
আমার পিতা-মাতা সাধারণ আন্দোলনকারীদের চেয়েও ছিলেন বেশি কিছু। তারা বড় ধরনের চিন্তা করতেন, তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করতেন।

আমার পিতা, মাতা, আন্টি মেরি, আঙ্কেল ফ্রেডিসহ প্রায় ডজন খানেক মানুষ একসঙ্গে মিলে একটি স্টাডি সার্কেল চালু করেছিলেন। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যারা কৃষ্ণাঙ্গ লেখক তাদের লেখা নিয়ে চর্চা হতো। তারা আন্টি মেরি ও আঙ্কেল ফ্রেডির হারমন স্ট্রিট হোমে সপ্তাহের রোববার বসতেন। সেখানে গোগ্রাসে মত্ত হতেন র‌্যালফ এলিসন, আলোচনায় মেতে উঠতেন কার্টার জি উডসন এবং বিতর্ক করতেন ডব্লিউ ই বি দু বইস। তারা আলোচনা করতেন বর্ণবাদ নিয়ে, আফ্রিকান উপনিবেশবাদ নিয়ে, স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে এবং আমেরিকায় বর্ণবাদের ইতিহাস নিয়ে। কিন্তু এগুলো শুধু কথার কথা ছিল না। তারা দ্রুতই লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন অনুভব থেকে তা করতেন। তারা খ্যাতনামা অতিথিদেরও এখানে নিয়ে আসতেন। সিভিল রাইটস এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন লিরয় জোনস এবং ফ্যানি লু হ্যামার তাদের অন্যতম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status