এক্সক্লুসিভ
পড়াশোনা শেষ করে মা ভারতে ফিরতে চেয়েছিলেন
কাজল ঘোষ
১৩ নভেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ৮:৩২ পূর্বাহ্ন
যেখানে আমি বেড়ে ওঠেছি আদালত সেখান থেকে খুব একটা দূরে নয়। আমার জন্ম ১৯৬৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। আমার শৈশব কেটেছে ওকল্যান্ড এবং বার্কলে এই দুই রাজ্যের মধ্যেই। আমার পিতা ডনাল্ড হ্যারিসের জন্ম ১৯৩৮ সালে জ্যামাইকায়। তিনি ছিলেন মেধাবী ছাত্র। বার্কলেতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে আমার বাবা একজন অভিবাসী শিক্ষার্থী ছিলেন। এখানে তিনি অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে যোগ দিলেও পরবর্তীতে স্ট্যানফোর্ডে অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং সেখানে তিনি প্রফেসরস ইমেরিটাস হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আমার মায়ের জীবন শুরু হয়েছিল হাজার হাজার মাইল দূরের দক্ষিণ ভারতে। তিন বোন এবং এক ভাই- এই চার সন্তানের মধ্যে মা শ্যমলা গোপালান ছিলেন সবার বড়। আমার পিতার মতোই তিনিও জন্মগতভাবেই ছিলেন মেধাবী। তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে তার পরিবার তার পাশে এগিয়ে আসে এবং তাকে সহায়তা করতে থাকে।
উনিশ বছর বয়সে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট পাস করেন। কিন্তু তিনি সেখানেই থেমে থাকেননি। পরে বার্কলেতে একটি গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে পড়ার জন্য তিনি আবেদন করেন। অথচ তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয় কখনও চোখে দেখেননি। সেই দেশে কখনও বেড়াতেও যাননি। এটা ভাবতেও আমার কষ্ট হয় কীভাবে তার পিতামাতা এমন একটি নতুন স্থানে তাকে পড়াতে পাঠায়। সে সময় বাণিজ্যিকভিত্তিতে দুনিয়াজুড়ে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে সবেমাত্র। আমি বিষয়টিকে এখনো খুব সহজভাবে মেনে নিতে পারি না। যদিও আমার মা যখন ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়তে যাওয়ার বিষয়ে অনুমতি চাইলেন আমার দাদু-দিদা তাকে অনুমতি দিতে চাননি। তিনি তখন ছিলেন একেবারেই তরুণী। তিনি যখন বাড়ি ছেড়ে বার্কলেতে পড়তে যান তখন ১৯৫৮ সাল। প্রথমে সেখানে নিউট্রিশান এবং এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট নিয়ে পড়া শুরু করলেও পড়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করেন। পড়াশোনা শেষ করে মা ভারতে ফিরতে চেয়েছিলেন। তার পিতামাতা তার জন্য একটি বিয়ের সম্বন্ধ পাকা করেছিলেন। এটা ভাবাই যায়, তিনি আগের সকলের মতো একই পথ বেছে নেবেন। কিন্তু নিয়তি বলছে ভিন্ন কথা। বার্কলেতে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে আমার মা এবং বাবা উভয়েই প্রেমে পড়ে যান। নিজেদের প্রেম ও ভালোবাসা থেকেই তারা বিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আমরা ছিলাম দুই বোন। আমার মা যখন পিএইচডি সম্পন্ন করেন তখন তার বয়স পঁচিশ। ঐ বছরই আমার জন্ম হয়। আমার আদরের বোন মায়ার জন্ম হয় এরও দু’বছর পর। পারিবারিক কারণে দু’বারই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমার মাকে কাজ করে যেতে হয়েছে। একবার তো আমার মা ল্যাবে কাজ করা অবস্থায়ই প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। আরেকবার একই ঘটনা ঘটে আপেল দিয়ে একটি বিশেষ ধরনের খাবার তৈরির সময়। দু’টি ঘটনাই হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বে ঘটে এবং তিনি নিজের কাজ আগে শেষ করেছেন।
আমার শুরুর দিনগুলো ছিল খুব সুখকর। আমি বাইরে বেড়াতে পছন্দ করতাম। আমার মনে আছে, বাবা আমাকে সব সময় বাইরে নিয়ে যেতেন দৌড়াতে। এ সময় বাবা বাসায় ফিরে মাকে বলতেন, তুমি তাকে দৌড়াতে দাও, শ্যমালা এবং মা তখন বলতেন, কমালা তুমি দৌড়াও। যত দ্রুত পারো তুমি দৌড়াও। আমি যখন ছুটি তখন বাতাস আমার মুখে এসে লাগে তখন আমার মনে হতো আমি সবকিছুই করতে পারি। আমার মায়ের সঙ্গে এমন আরো অনেক স্মরণীয় ঘটনা আছে। এ সময়ে মা আমার হাঁটুর ওপরে ব্যথা নিরোধক ব্যান্ডেট লাগিয়ে দিতেন।
আমাদের বাসা ছিল সংগীতময়। আমার মা একাকী গসপেলের গান গাইতে পছন্দ করতেন। যা এডউইন হকিন্স সিঙ্গারস-এর ওপরে প্রথমদিকে এরিতা ফ্রাঙ্কলিন লিখেছিলেন। আমার মা তা গাইতে খুব পছন্দ করতেন।
মা নিজেও সংগীতে ভারত থেকে একটি পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। আমি তার গায়কীর ভক্ত। আমার বাবাও ছিলেন মায়ের মতোই সংগীতের সমঝদার। তার জ্যাজ মিউজিকের অসাধারণ সব সংগ্রহ ছিল। সেসব সংগ্রহ তিনি দেয়ালের তাকে তাকে যত্ন করে রেখেছিলেন। প্রতি রাতেই আমি থিলোনিয়াস মঙ্ক, জন কোলট্রেন অথবা মাইলস ডেবিসের সুর মূর্ছনা শুনতে শুনতে ঘুমাতে যেতাম।
কিন্তু আমার মা-বাবার সেই সম্পর্কের মধুরতা স্থায়ী হয়নি। এক সময় তা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তারা একে অন্যের প্রতি আন্তরিকতা হারাতে থাকে। আমি জানি তারা একে অন্যকে প্রচণ্ড ভালোবাসে, কিন্তু কেন যেন তা ক্রমশই তেল আর জলে পরিণত হয়। এরইমধ্যে আমার বয়স পাঁচ হয়েছে, তাদের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ দ্বান্দ্বিক হচ্ছে। আমার বাবা উইসকনসিন ইউনিভার্সিটিতে চাকরি নিয়ে থিতু হওয়ার পর আলাদা থাকতে শুরু করেন। এর বছরখানেকের মধ্যেই তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। তাদের মধ্যে অর্থ নিয়ে কোনো ঝগড়া ছিল না। ঝগড়া ছিল বইয়ের মালিকানা কার থাকবে তা নিয়ে।
আমার মনে হয়েছিল তাদের বয়সের আগেই সব হয়েছে। বয়সের আবেগ পূর্ণতা পেয়েছে। মনে হতো হয়তো বিয়েই তাদের বাঁচাতে পারে। কিন্তু তাদের বয়স ছিল যথেষ্টই কম। আমার পিতা ছিলেন আমার মায়ের প্রথম ছেলে বন্ধু।
এটা সত্যিই দু’জনের জন্য খুব কষ্টের। আমার মনে হয়েছিল, মা ডিভোর্সের মতো বিষয়কে মেনে নিতে পারবেন না। তার বিয়েটা যতটা প্রয়োজনের তার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসার। এটা শুনে তার পিতামাতাও খুব কষ্ট পেয়েছিল। আমি ভাবতে পারি, ডিভোর্স নিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া ছিল তার জন্য অনেক কষ্টের। আমার এ সময় মনে হয়েছে তারা তাকে (মাকে) বলেছিল, আমরা আগেই তা বলেছিলাম।
মায়া তখন এতোটাই ছোট যে, তার পক্ষে কি ধরনের কষ্ট হচ্ছিল তা বোঝা একেবারেই সম্ভব ছিল না। আমি কষ্ট পেয়েছিলাম, কিন্তু মায়া কখনও সেই কষ্ট বোধ করেনি। আমি আমার মা-বাবা যখন সুখী সে সময়টা দেখার সুযোগ পেয়েছি। মায়া তা-ও পায়নি।
বাবা আমাদের জীবনের অংশ হয়েই থাকলেন। আমাদের সঙ্গে দেখা হতো সপ্তাহান্তে। আর গ্রীষ্মকালে আমরা কাটাতাম পালো আলটোতে। কিন্তু এটা সম্ভব হতো আমার মায়ের প্রচেষ্টায়। মা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে যোগ্যতম মানুষ।
মা ছিলেন একেবারেই ব্যতিক্রম। মা ছিলেন পাঁচ ফিট এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের কিন্তু আমার কাছে মনে হতো ছয় ফিট দুই ইঞ্চি। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে সুদর্শন এবং কঠিন ধাঁচের। তিনি যেমনটা ছিলেন নীতিবান, দায়িত্বশীল এবং মজাদার মানুষ। তার জীবনে দু’টি মাত্র লক্ষ্য ছিল- একটি তার দু’ মেয়েকে মানুষ করা আর অন্যটি হচ্ছে ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে যুদ্ধ করা। সে আমাদেরকেও একটি আদর্শবান মানুষরূপে গড়ে তুলতে বরাবরই সচেষ্ট ছিলেন। এবং বরাবরই তিনি আমাকে এবং মায়াকে গুরুত্ব দিতেন যেন আমরা যা চাই তা যেন কাজের হয়।
আমার মায়ের জীবন শুরু হয়েছিল হাজার হাজার মাইল দূরের দক্ষিণ ভারতে। তিন বোন এবং এক ভাই- এই চার সন্তানের মধ্যে মা শ্যমলা গোপালান ছিলেন সবার বড়। আমার পিতার মতোই তিনিও জন্মগতভাবেই ছিলেন মেধাবী। তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে তার পরিবার তার পাশে এগিয়ে আসে এবং তাকে সহায়তা করতে থাকে।
উনিশ বছর বয়সে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট পাস করেন। কিন্তু তিনি সেখানেই থেমে থাকেননি। পরে বার্কলেতে একটি গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে পড়ার জন্য তিনি আবেদন করেন। অথচ তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয় কখনও চোখে দেখেননি। সেই দেশে কখনও বেড়াতেও যাননি। এটা ভাবতেও আমার কষ্ট হয় কীভাবে তার পিতামাতা এমন একটি নতুন স্থানে তাকে পড়াতে পাঠায়। সে সময় বাণিজ্যিকভিত্তিতে দুনিয়াজুড়ে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে সবেমাত্র। আমি বিষয়টিকে এখনো খুব সহজভাবে মেনে নিতে পারি না। যদিও আমার মা যখন ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়তে যাওয়ার বিষয়ে অনুমতি চাইলেন আমার দাদু-দিদা তাকে অনুমতি দিতে চাননি। তিনি তখন ছিলেন একেবারেই তরুণী। তিনি যখন বাড়ি ছেড়ে বার্কলেতে পড়তে যান তখন ১৯৫৮ সাল। প্রথমে সেখানে নিউট্রিশান এবং এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট নিয়ে পড়া শুরু করলেও পড়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করেন। পড়াশোনা শেষ করে মা ভারতে ফিরতে চেয়েছিলেন। তার পিতামাতা তার জন্য একটি বিয়ের সম্বন্ধ পাকা করেছিলেন। এটা ভাবাই যায়, তিনি আগের সকলের মতো একই পথ বেছে নেবেন। কিন্তু নিয়তি বলছে ভিন্ন কথা। বার্কলেতে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে আমার মা এবং বাবা উভয়েই প্রেমে পড়ে যান। নিজেদের প্রেম ও ভালোবাসা থেকেই তারা বিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আমরা ছিলাম দুই বোন। আমার মা যখন পিএইচডি সম্পন্ন করেন তখন তার বয়স পঁচিশ। ঐ বছরই আমার জন্ম হয়। আমার আদরের বোন মায়ার জন্ম হয় এরও দু’বছর পর। পারিবারিক কারণে দু’বারই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমার মাকে কাজ করে যেতে হয়েছে। একবার তো আমার মা ল্যাবে কাজ করা অবস্থায়ই প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। আরেকবার একই ঘটনা ঘটে আপেল দিয়ে একটি বিশেষ ধরনের খাবার তৈরির সময়। দু’টি ঘটনাই হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বে ঘটে এবং তিনি নিজের কাজ আগে শেষ করেছেন।
আমার শুরুর দিনগুলো ছিল খুব সুখকর। আমি বাইরে বেড়াতে পছন্দ করতাম। আমার মনে আছে, বাবা আমাকে সব সময় বাইরে নিয়ে যেতেন দৌড়াতে। এ সময় বাবা বাসায় ফিরে মাকে বলতেন, তুমি তাকে দৌড়াতে দাও, শ্যমালা এবং মা তখন বলতেন, কমালা তুমি দৌড়াও। যত দ্রুত পারো তুমি দৌড়াও। আমি যখন ছুটি তখন বাতাস আমার মুখে এসে লাগে তখন আমার মনে হতো আমি সবকিছুই করতে পারি। আমার মায়ের সঙ্গে এমন আরো অনেক স্মরণীয় ঘটনা আছে। এ সময়ে মা আমার হাঁটুর ওপরে ব্যথা নিরোধক ব্যান্ডেট লাগিয়ে দিতেন।
আমাদের বাসা ছিল সংগীতময়। আমার মা একাকী গসপেলের গান গাইতে পছন্দ করতেন। যা এডউইন হকিন্স সিঙ্গারস-এর ওপরে প্রথমদিকে এরিতা ফ্রাঙ্কলিন লিখেছিলেন। আমার মা তা গাইতে খুব পছন্দ করতেন।
মা নিজেও সংগীতে ভারত থেকে একটি পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। আমি তার গায়কীর ভক্ত। আমার বাবাও ছিলেন মায়ের মতোই সংগীতের সমঝদার। তার জ্যাজ মিউজিকের অসাধারণ সব সংগ্রহ ছিল। সেসব সংগ্রহ তিনি দেয়ালের তাকে তাকে যত্ন করে রেখেছিলেন। প্রতি রাতেই আমি থিলোনিয়াস মঙ্ক, জন কোলট্রেন অথবা মাইলস ডেবিসের সুর মূর্ছনা শুনতে শুনতে ঘুমাতে যেতাম।
কিন্তু আমার মা-বাবার সেই সম্পর্কের মধুরতা স্থায়ী হয়নি। এক সময় তা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তারা একে অন্যের প্রতি আন্তরিকতা হারাতে থাকে। আমি জানি তারা একে অন্যকে প্রচণ্ড ভালোবাসে, কিন্তু কেন যেন তা ক্রমশই তেল আর জলে পরিণত হয়। এরইমধ্যে আমার বয়স পাঁচ হয়েছে, তাদের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ দ্বান্দ্বিক হচ্ছে। আমার বাবা উইসকনসিন ইউনিভার্সিটিতে চাকরি নিয়ে থিতু হওয়ার পর আলাদা থাকতে শুরু করেন। এর বছরখানেকের মধ্যেই তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। তাদের মধ্যে অর্থ নিয়ে কোনো ঝগড়া ছিল না। ঝগড়া ছিল বইয়ের মালিকানা কার থাকবে তা নিয়ে।
আমার মনে হয়েছিল তাদের বয়সের আগেই সব হয়েছে। বয়সের আবেগ পূর্ণতা পেয়েছে। মনে হতো হয়তো বিয়েই তাদের বাঁচাতে পারে। কিন্তু তাদের বয়স ছিল যথেষ্টই কম। আমার পিতা ছিলেন আমার মায়ের প্রথম ছেলে বন্ধু।
এটা সত্যিই দু’জনের জন্য খুব কষ্টের। আমার মনে হয়েছিল, মা ডিভোর্সের মতো বিষয়কে মেনে নিতে পারবেন না। তার বিয়েটা যতটা প্রয়োজনের তার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসার। এটা শুনে তার পিতামাতাও খুব কষ্ট পেয়েছিল। আমি ভাবতে পারি, ডিভোর্স নিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া ছিল তার জন্য অনেক কষ্টের। আমার এ সময় মনে হয়েছে তারা তাকে (মাকে) বলেছিল, আমরা আগেই তা বলেছিলাম।
মায়া তখন এতোটাই ছোট যে, তার পক্ষে কি ধরনের কষ্ট হচ্ছিল তা বোঝা একেবারেই সম্ভব ছিল না। আমি কষ্ট পেয়েছিলাম, কিন্তু মায়া কখনও সেই কষ্ট বোধ করেনি। আমি আমার মা-বাবা যখন সুখী সে সময়টা দেখার সুযোগ পেয়েছি। মায়া তা-ও পায়নি।
বাবা আমাদের জীবনের অংশ হয়েই থাকলেন। আমাদের সঙ্গে দেখা হতো সপ্তাহান্তে। আর গ্রীষ্মকালে আমরা কাটাতাম পালো আলটোতে। কিন্তু এটা সম্ভব হতো আমার মায়ের প্রচেষ্টায়। মা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে যোগ্যতম মানুষ।
মা ছিলেন একেবারেই ব্যতিক্রম। মা ছিলেন পাঁচ ফিট এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের কিন্তু আমার কাছে মনে হতো ছয় ফিট দুই ইঞ্চি। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে সুদর্শন এবং কঠিন ধাঁচের। তিনি যেমনটা ছিলেন নীতিবান, দায়িত্বশীল এবং মজাদার মানুষ। তার জীবনে দু’টি মাত্র লক্ষ্য ছিল- একটি তার দু’ মেয়েকে মানুষ করা আর অন্যটি হচ্ছে ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে যুদ্ধ করা। সে আমাদেরকেও একটি আদর্শবান মানুষরূপে গড়ে তুলতে বরাবরই সচেষ্ট ছিলেন। এবং বরাবরই তিনি আমাকে এবং মায়াকে গুরুত্ব দিতেন যেন আমরা যা চাই তা যেন কাজের হয়।