মত-মতান্তর

করোনাকালে ভোটচিত্র

ড. মাহফুজ পারভেজ

১১ নভেম্বর ২০২০, বুধবার, ৫:৪৪ পূর্বাহ্ন

বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে জীবন থেমে নেই। থেমে নেই রাজনীতি। নির্বাচনে ভোট দেওয়াও বন্ধ নেই। সদ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হলো। ভারতেও করোনার মধ্যে বিধান সভার নির্বাচন হলো বিহার রাজ্যে। করোনাকালে ভোটচিত্র সত্যিই উল্লেখ্য করার মতো। প্রচণ্ড লড়াই ও হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা করোনাকালীন ভোটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।  

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র ভোটযুদ্ধের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী বাইডেন-কমলা জুটির ক্ষমতায় আসার পুরোটা পথই ছিল চ্যালেঞ্জে ভরপুর। মার্কিন দেশের শত বছরের ইতিহাসে এমন নাটকীয় ও উত্তেজক নির্বাচন আরেকটিও হয়নি। নির্বাচন-পরবর্তী বাহাত্তর ঘণ্টা ধরেই চলেছে টানটান উদ্বেগ। তিন দিনে ফলাফল নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বারবার বদলেছে তথ্য, পরিসংখ্যানের ভোটচিত্র।

রেকর্ড সংখ্যক আগাম ভোট পড়েছে। করোনার কারণে মানুষ বুথে এসেছেন কম। পোস্টাল ভোট দিয়েছেন বেশি। আগাম ভোট সংগ্রহে ডেমোক্র্যাটদের কৃতিত্ব নির্বাচনে জিততে সহায়ক হয়েছে। ভোট গণনার সময় পরিস্থিতি এমনও হয়েছে যে, মনে হচ্ছিল, হয়ত ট্রাম্পই জিতে যাচ্ছেন। এতোটাই কামড়াকামড়ি ভোটযুদ্ধ হয়েছে এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

একই চিত্র দেখা গেছে ভারতের বিহারের নির্বাচনের সময়। করোনাকালের ভোটচিত্রে তীব্র লড়াইয়ের যে নজির দেখা গেছে, তা অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের মতোই। এনডিএ-ইউপিএ-র আসন সংখ্যায় শুধু নয়, বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বহু কেন্দ্রে লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। এতটাই কান ঘেঁষা পরিস্থিতি যে একটি আসনে মাত্র ১২ ভোটে নির্ধারিত হয়েছে জয়-পরাজয়। করোনায় ভোটের রঙ্গ ছিল সত্যিই অতি উত্তেজক ও উদ্বেগজনক।

সাধারণত স্থানীয় পর্যায়ের পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের ভোটে এমন স্বল্প পার্থক্যে জয়-পরাজয় আকছার দেখা গেলেও জাতীয় নির্বাচনে এমন নজির খুব বেশি দেখা যায় না, যা মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে মার্কিন দেশে ও ভারতের নির্বাচনে দেখা গেলো।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিহারের ২৪৩ বিধানসভা আসনের ভোটগণনা হয়েছে মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর)। কিন্তু গণনা শেষ হয়েছে মধ্যরাতেরও পরে। কার্যত বুধবার (১১ নভেম্বর) সকালে নিশ্চিত করে জানা গিয়েছে, কোন দল কত আসনে জিতেছে। শেষ পর্যন্ত বিজেপি-জেডিইউ-সহ এনডিএ জোটের দখলে ১২৫ আসন। ১১০ আসন পেয়েছে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের মহাগঠবন্ধন।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের চূড়ান্ত ভোটপ্রাপ্তির হিসেবে চোখ রাখলে উত্তেজনাকর ভোটযুদ্ধের চিত্রটি স্পষ্টত দেখা যায়। রাজ্যের হিলসা নামক কেন্দ্রে মাত্র ১২ ভোটে জিতেছেন জেডিইউ প্রার্থী কৃষ্ণকুমারী শরণ। প্রতিপক্ষ আরজেডি প্রার্থী অত্রি মুনি।

পশ্চিমবঙ্গে একবার এমনটি হয়েছিল ২০০১ সালে। তখন বিধানসভা ভোটে বারুইপুর কেন্দ্রে মাত্র ৫ ভোটে হেরেছিলেন বাম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তৃণমূলের অরূপ ভদ্র। তবে তার চেয়েও কম, মাত্র ১ ভোটে জয়-পরাজয়েরও ইতিহাস রয়েছে ভারতে। ২০০৮ সালে রাজস্থানের নাথোদ্বারা কেন্দ্রে হেরেছিলেন কংগ্রেস নেতা সি পি যোশী।

করোনাকালে ভোটারের কম উপস্থিতি ও অন্যান্য কারণে ভোটের লড়াই যেমন তীব্র হবে, তেমনি সামান্য ভোটে নির্ধারণ হবে জয়-পরাজয়। ২০২১ সালে এপ্রিল/মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার নির্বাচনেও তেমনই চিত্র দেখা যেতে পারে বলে সবার ধারণা। ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা অমিত শাহ দুই-তৃতীয়াংশ আসন জিতে ক্ষমতায় যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বসে নেই ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মাঠে নেমেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। সুদীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা বামজোট উজ্জীবিত হচ্ছে ভোটযুদ্ধের জন্য। পুরনো দল কংগ্রেসও সরব।

তৃণমূল, বিজেপি, বামজোট ও কংগ্রেসের মধ্যে চতুর্মুখী লড়াই হলে ভোট কাটাকাটির ফলে ভাল করবে বিজেপি। আর নির্বাচন হবে তীব্র লড়াই, উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার। তবে, তার আগে যদি দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী মেরুকরণ হয়, তাহলে ভোটের চিত্রে অনেক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু করোনাকালের নির্বাচনে যে যথারীতি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, তা সুনিশ্চিত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status