প্রথম পাতা

তিন কোটি ভ্যাকসিন আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বেক্সিমকো ও সিরামের চুক্তি

স্টাফ রিপোর্টার

২০২০-১১-০৬

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনাভাইরাসের ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনবে বাংলাদেশ। অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ৩ কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষকে দেয়া হবে। ২৮ দিনের ব্যবধানে প্রত্যেককে টিকার দু’টি ডোজ নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিলে বাংলাদেশে এই টিকা আসবে। বাংলাদেশে প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ৫ ডলার (৪২৫ টাকা)। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশে করোনার ভ্যাকসিন আনা প্রসঙ্গে ত্রিপক্ষীয় এক চুক্তি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব তথ্য জানান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দেশের খ্যাতিনামা বৃহৎ ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদানকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় এই সমঝোতা চুক্তি সই করা হয়। সমঝোতা সই অনুষ্ঠানে বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন এমপি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী উপস্থিত ছিলেন। চুক্তিসই করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বেক্সিমকো ও সিরাম ইনস্টিটিউটের তিন কর্মকর্তা। বেক্সিমকো দেশীয় এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশকে এই টিকা সরবরাহ করবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকার ইতিমধ্যে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষের পথে। যুক্তরাজ্যে এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে টিকা উৎপাদনের চুক্তি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট। টিকা উৎপাদনে সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের শীর্ষ ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান  বেক্সিমকো আগেই সিরামের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী  বলেন, করোনা ভ্যাকসিন আমদানি প্রসঙ্গে দেশের মানুষ অনেক দিন থেকেই অপেক্ষা করছেন। এই চুক্তির ফলে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটছে। এক্ষেত্রে বেক্সিমকো ফার্মা বড় ভূমিকা রেখেছে। বেক্সিমকো ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সরকারের সেতুবন্ধন তৈরি করে দিয়েছে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার কাছে ভ্যাকসিন দিলে বেক্সিমকো ফার্মা সরকারের কাছে তা হস্তান্তর করবে। প্রথম লটে সরকার ৩ কোটি ভ্যাকসিন আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ৩ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ দুইবার করে প্রতি ব্যক্তিকে দেয়া হবে। এর ফলে প্রথমে দেড় কোটি মানুষকে দেড় কোটি ভ্যাকসিন দেয়া হবে। পরবর্তীতে একই পরিমাণ ভ্যাকসিন একইভাবে ২৮ দিন পর পুনরায় ২য় ডোজ হিসেবে দেয়া হবে। তিনি বলেন, এ ভ্যাকসিন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তৈরি করেছে। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে এটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সফল হয়েছে। বর্তমানে এটি তৃতীয় ধাপে প্রয়োগ শুরু হয়েছে, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাদেশে আমদানি করতে চুক্তিতে শর্ত রয়েছে। প্রতিটি ডোজের জন্য সরকারিভাবে ৫ ডলার মতো ব্যয় হবে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী আরো জানান, ভারত সরকারকে যে দামে ভ্যাকসিন দেবে, বাংলাদেশেও একই দামে সিরাম ইনস্টিটিউট সেটি দিবে। এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ভ্যাকসিন প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়া হবে কাদের সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনায় কর্মরত আমাদের সম্মুখ যোদ্ধারা, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক ব্যক্তি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন। তবে পর্যায়ক্রমে এটি দেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। জানুয়ারি মাসে এই টিকা আসবে বলে ধারণা দিয়েছেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে নাজমুল হাসান বলেন, করোনা শুরু থেকে বেক্সিমকো ফার্মা এদেশের মানুষের পাশে আছে। তিনি বলেন, প্রথম ভেবেছিলাম করোনা দু’-এক মাসে ঠিক হয়ে যাবে। পরে ভাবলাম এটা কোনোদিনই যাবে না। তাই ভ্যাকসিন ছাড়া বিকল্প পথ নেই। তখন থেকেই গবেষণা করি। ভ্যাকসিন বাজারে আসার পর যাতে দ্রুত আমরা পাই। যা হতে হবে নিরাপদ, কার্যকর এবং স্বল্পমূল্যে। সেভাবেই এগুতে থাকি। সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা ও সিরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেক্সিমকো ফার্মার পক্ষে বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন ও সিরাম ইনস্টিটিউটের পক্ষে সন্দীপ মুলে উপস্থিত ছিলেন। সরকারের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তফা কামাল। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, বিএমএ’র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান প্রমুখ।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status