এক্সক্লুসিভ

যেভাবে দুই বছর আত্মগোপনে ছিল কিলার

রুদ্র মিজান

৩ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৭:৫৭ পূর্বাহ্ন

হত্যাকাণ্ডের পর লাশ ঘরে রেখেই আত্মগোপনে যায় রঞ্জু মিয়া (২৯)। অফিসে অনুপস্থিত। ফোন বন্ধ। কেউ খোঁজ পাচ্ছিলো না তার। সহকর্মীরা তার খোঁজ করেন। বাসায় গিয়ে দেখতে পান বাইরে থেকে দরজা বন্ধ। দরজা খুলতেই হতভম্ব সবাই। মেঝেতে এক নারীর লাশ। গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় পড়ে আছে নিথর দেহ। তার নাম শান্তনা আক্তার সুমি (২৫)। রঞ্জুর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। ঘটনাটি ঘটেছিলো ২০১৮ সালের ১০ই আগস্ট রাজধানীর দক্ষিণখানের পূর্ব মোল্লারটেকের একটি বাসায়। স্ত্রীকে হত্যা করে আত্মগোপনে চলে যায় সে। নাম, পরিচয় গোপন করে চাকরি করছিলো দিনের পর দিন। পরিবর্তন এনেছিলো চেহারাতেও। প্রযুক্তি থেকে দূরে ছিল। কোনোভাবেই তার অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছিলো না। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে গত ১৭ই সেপ্টেম্বর। দুই বছরেরও বেশি সময় পলাতক ছিল রঞ্জু। এই সময়ে চাকরি করেছে বিভিন্ন এলাকায়। অবশেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’র অভিযানে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে রঞ্জু। এমনকি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জানিয়েছে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে কীভাবে শান্তনা আক্তার সুমিকে হত্যা করেছে।
সুমিকে হত্যার পর বগুড়ার সদর উপজেলার করতোয়া নদীর তীরবর্তী এক এলাকায় আশ্রয় নেয়। নিজের বাড়ির কাছাকাছি থাকলেও আশপাশের কেউ জানতো না তার অবস্থান। বাড়িতে পা রাখতো না রঞ্জু। এমনকি পরিবারের সদস্যদের ফোনে সেভাবে কলও দিতো না। মোবাইলফোন ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছিলো হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই। মাসে দু’ একবার কল দিয়ে কথা বলতো অন্য কারও ফোন নম্বর থেকে। সংক্ষিপ্ত কথা। সম্বোধন ছাড়াই কথা হতো। শুধু তাই না, কথা বলার সময় কণ্ঠ পরিবর্তন করে নিতো। অনেকটা নারী কণ্ঠের মতো শোনাতো তার ফোনালাপ। সতর্কতা হিসেবে নিজের নামটা পরিবর্তন করেছিলো রঞ্জু। গোপন করেছিলো পরিচয়। চুল, দাড়িতেও ছিল পরিবর্তন। এভাবেই দিনের পর দিন ফাঁকি দিয়েছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। থানা পুলিশ হয়ে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়েও কূল কিনারা হচ্ছিলো না। এরমধ্যেই ফোনে তার বাবার সঙ্গে আবার বিয়ে করার বিষয়ে কথা বলেছিলো রঞ্জু। বিষয়টি প্রযুক্তির মাধ্যমে জানার পর তার অবস্থান শনাক্ত করে চালানো হয় অভিযান। ছদ্মবেশে সিআইডি’র উপ-পরিদর্শক তাপস বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি টিম ঢাকা থেকে যায় বগুড়া। গরুর ক্রেতা সেজে ওই এলাকার গোকুল ইউনিয়নে তৎপরতা চালায় তারা। কিন্তু রঞ্জুর হদিস মিলছিলো না। এরমধ্যে স্থান পরিবর্তন করেছে। অবশেষে প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১৬ই সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রঞ্জুকে। পরদিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে, ‘ভিকটিম শান্তনা আক্তার আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। আমার পূর্বের স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে। শান্তনার সঙ্গে ২০১৬ সালে বিয়ে হয়। ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে কাজ শেষে বাসায় ফিরি।’ সেদিন রাতে ঘুমাতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। এ বিষয়ে জবানবন্দিতে রঞ্জু জানিয়েছে, ‘শান্তনা আক্তার সুমি আমার আগের স্ত্রী নিয়ে ঝগড়া শুরু করে। এ নিয়ে মারামারি শুরু হয়। আমি ভিকটিমকে কয়েকটা থাবা মারি। ভিকটিম তখন আমার চুল ধরে বুকের উপর উঠে চড়-থাপ্পড় মারে। আমি তাকে নামানোর চেষ্টা করি। সে আমার গলা চেপে ধরে। আমিও তার গলা চেপে ধরি। আমি তাকে বুকের উপর থেকে নামিয়ে দেই। তার গলা চেপে ধরে রাখি। শান্তনা তার হাত, পা ছেড়ে দেয়। কথা বলে না। নিঃশ্বাস নিচ্ছে না। ভয় পেয়ে যাই। তখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য তার গলায় থাকা সোনালী রঙের ওড়না দিয়ে শক্ত একটা গিঁট দিই।’ তারপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যায় রঞ্জু। তারপর থেকেই আত্মগোপনে ছিল সে।
এ ঘটনায় শান্তনা আক্তার সুমির পিতা বাদী হয়ে ডিএমপি’র দক্ষিণখান থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই দম্পতির মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। নিহত শান্তনা আক্তার সুমি লালমনিরহাটের পাটগ্রামের জমগ্রামের শামসুল হকের মেয়ে। হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্বে বিয়ে হয় তাদের। এই হত্যা মামলার আসামি রঞ্জু মিয়া বগুড়ার শেরপুরের জয়নগর পাইক পাথালিয়ার আব্দুস সামাদের ছেলে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status