শেষের পাতা

মহামারিতে মানসিক চাপে ৯৬ ভাগ তরুণ-তরুণী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২ নভেম্বর ২০২০, সোমবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

করোনায় আয় কমেছে ৮০ শতাংশ তরুণের। এরমধ্যে ৫৯ শতাংশের অবস্থা খুবই নাজুক। আর পড়াশোনা ছেড়ে উপার্জনে নামতে বাধ্য হয়েছে অন্তত ২৮ শতাংশ যুবক-যুবতী। এ ছাড়া চলমান মহামারিতে মানসিকভাবে চাপের মধ্যে পড়েছেন ৯৬ শতাংশ তরুণ-তরুণী। যার অধিকাংশেরই মানসিক স্বাস্থ্যে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। গতকাল ‘কোভিড-১৯ ও বাংলাদেশ: আর্থসামাজিক পুনরুজ্জীবনে যুব এজেন্ডা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে এ তথ্য তুলে ধরে বেসরকারি সংগঠন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ। জরিপ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডি’র কর্মসূচি সহযোগী তামারা-ই-তাবাসসুম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডি’র জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। সংগঠনটি ১৮-২৭শে অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ১৬৩ জনের ওপর অনলাইনে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করে। ১৮-৩০ বছর বয়সী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৬৩ জন পুরুষ, ২৯৯ জন নারী এবং ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের।
আলোচকরা বলেন, দক্ষ যুব সমাজ তৈরিতে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। অনলাইন ক্লাসসহ সার্বিক তথ্য-প্রযুক্তি খাতেও রয়েছে নানা দুর্বলতা ও জটিলতা। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও প্রণোদনার পাশাপাশি সেগুলোর সুষম বণ্টনের দাবি জানান আলোচকরা। এ ছাড়া করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির তাগিদও দেন তারা। সেই লক্ষ্যে তরুণদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত বলে অভিমত তাদের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিমারির কারণে প্রযুক্তিগত বৈষম্য, শিক্ষা ও দক্ষতা এবং কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বলা হয়, নারীদের মধ্যে ৮ শতাংশ বিয়ের কারণে পড়াশোনা ছেড়েছে। আর পরিবারকে সহায়তা করার জন্য ছেড়েছে ১৩ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে এটি ৩২ শতাংশ। দুই-তৃতীয়াংশ ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। কোভিডে তরুণ-যুবাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ৯৬ শতাংশ জানিয়েছে, তারা নানা ধরনের মানসিক অবসাদে ভুগছে। এরমধ্যে ৫৯ শতাংশের অবসাদ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। অনলাইনে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে যুক্ত নেই ৫৮.৩ শতাংশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন নারী ও যুব নেতৃত্ব, উদ্যোক্তা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দলিত, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিরা।
বিশেষ অতিথির ভাষণে সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ধারণা করা যাচ্ছে, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ১০-১৫ শতাংশের পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার মতে, দক্ষ কর্মশক্তি তৈরির জন্য কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারে নিয়ে আসতে হবে। সংকটকালে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে শর্ত সাপেক্ষে আগামী ৬ মাসের বেকার ভাতা দেয়া যেতে পারে তরুণ-যুবকদের।
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ও সিপিডি’র বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যুব সমাজের একটি অংশ শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন তৎপরতায় সক্রিয় রয়েছে। অপর একটি অংশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। কেউ মাদকে যুক্ত, কেউ অবসাদে ভুগছেন। তাই অখণ্ড নয়, বিভাজিতভাবেই যুবাদের দেখতে হবে এবং তাদের কীভাবে সক্রিয়ভাবে কর্মসংস্থানে যুক্ত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনের কোর গ্রুপের সদস্য এবং সিপিডি’র বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনাকালে শহর ও গ্রামের মধ্যে এবং নারী-পুরুষ-তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে ত্রিমাত্রিক লিঙ্গবৈষম্য দেখা দিয়েছে। এই বৈষম্যগুলো শনাক্ত করে বাজারের চাহিদার সঙ্গে দক্ষতার সমন্বয় কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে।
অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, ফ্রেডরিক ইবার্ট স্টিফটুং বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status