শেষের পাতা

ভাই-ভাবী-ভাতিজাকে হত্যা

ঘাতকের মুখে নৃশংস বর্ণনা

আশরাফুল ইসলাম ও রফিকুল হায়দার টিটু, কটিয়াদী (কিশোর

১ নভেম্বর ২০২০, রবিবার, ৯:০৭ পূর্বাহ্ন

কটিয়াদীতে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে নিহত আসাদ মিয়ার ছোট ভাই দ্বীন ইসলাম (৩৮)। এ ছাড়া সে পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে। স্বীকারোক্তিতে সে ভাই, ভাবী ও ভাতিজা হত্যার লোমহর্ষক তথ্য দিয়েছে। বড় ভাই আসাদ মিয়া (৫৫), তার স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪৫) ও তাদের শিশুপুত্র লিয়ন (১২) কে দ্বীন ইসলাম একজনের পর একজন এভাবে একাই হত্যা করেছে। পরে সে একাই তিনজনের লাশ একটি গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কটিয়াদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গতকাল বিকালে কিশোরগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবীব উল্লাহ তার খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় মামলার প্রধান আসামি দ্বীন ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এ ছাড়া এই মামলায় গ্রেপ্তার অপর তিন আসামি নিহতের ছোট বোন নাজমা (৪২), মা কেওয়া বানু (৭০) ও প্রতিবেশী আল আমিন (৩০) কে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল তাদের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে দ্বীন ইসলাম জানায়, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত রাত ১২টা পর্যন্ত সময়ে ধারাবাহিকভাবে সে এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটিয়েছে। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাই, ভাবী ও ভাতিজাকে সে হত্যা করেছে বলেও দ্বীন ইসলাম জানিয়েছে। স্বীকারোক্তিতে দ্বীন ইসলাম জানিয়েছে, পূর্বশত্রুতাবশত পরিকল্পনা মাফিক হত্যা করার জন্য বুধবার সকাল থেকে সে পরিকল্পনা করতে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভাবী পারভীন আক্তার রান্না করছিল। এ সময় পারভীন আক্তারের মাথায় পেছন দিক থেকে  শাবল দিয়ে সজোরে আঘাত করে। এতে ছটফট করে কিছুক্ষণের মধ্যে পারভীন আক্তার মারা যায়। প্রায় আধাঘণ্টা পর ভাতিজা লিয়ন বাড়ি ফিরলে তার মাথায়ও শাবল দিয়ে দ্বীন ইসলাম সজোরে আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য শাবল দিয়ে পুনরায় লিয়নের মাথার শিরায় ঘা দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দ্বীন ইসলাম। মা পারভীন ও ছেলে লিয়নের লাশ টেনে বসতঘরে নিয়ে ফেলে রেখে দ্বীন ইসলাম দরজা বন্ধ করে রাখে। এ সময় সে ঘরের পাশে বাঁশঝাড়ের নিচে গর্ত খনন শুরু করে। গর্ত খনন শেষে বড় ভাই আসাদ মিয়ার জন্য লুকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে দ্বীন ইসলাম। রাত ১২টার দিকে আসাদ মিয়া বাজার থেকে বাড়ি ফিরে ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে স্ত্রী পারভীনকে ডাক দিলে পেছন থেকে ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করে সে। এতে ঘটনাস্থলেই বড় ভাই আসাদ মিয়ার মৃত্যু হয়। পরে লাশ টেনে নিয়ে সেই গর্তে প্রথমে ভাইয়ের লাশ, তারপর ভাবীর লাশ ও পরে ভাতিজার লাশ রেখে মাটিচাপা দেয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জামষাইট গ্রামে মাটিচাপা দেয়া তিনজনের লাশ উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাটি খুঁড়ে আসাদ মিয়া, তার স্ত্রী পারভীন আক্তার ও তাদের শিশুপুত্র লিয়ন এর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আসাদ মিয়া জামষাইট গ্রামের মৃত মীর হোসেনের ছেলে। ওইদিন সকালে আসাদ মিয়ার মেজো ছেলে মোফাজ্জল নানার বাড়ি থেকে ফিরে মা, বাবা ও ছোট ভাইকে না পেয়ে তাদের খুঁজতে থাকে। ঘরের ভেতর রক্ত দেখে তার সন্দেহ হয়। সারাদিন খোঁজাখুঁজি করে তাদের কোনো সন্ধান পায়নি মোফাজ্জল। ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় স্থানীয় লোকজন ঘরের পিছনে নতুন মাটি খোঁড়া দেখে অনুসন্ধান করে। কোদাল দিয়ে মাটি উল্টাতেই শিশু বাচ্চাটির হাত বেরিয়ে আসে। তৎক্ষণাৎ কটিয়াদী থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে নিহতের ছোট ভাই দ্বীন ইসলামকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী মুমুরদিয়া বাজারের একটি চা স্টল থেকে দ্বীন ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের ছোট বোন নাজমা, মা কেওয়া বানু ও প্রতিবেশী আল আমিন এই তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এম,এ জলিল বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার নিহতের বড় ছেলে তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ইতিমধ্যে ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রধান আসামি দ্বীন ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপর তিনজনের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি নিরবচ্ছিন্ন তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status