অনলাইন

উদ্বোধনের অপেক্ষায়

দেশের প্রথম ও সর্বোচ্চ উঁচু বঙ্গবন্ধুর ‘তর্জনী’ ভাস্কর্য!

স্টাফ রিপোর্টার

৩১ অক্টোবর ২০২০, শনিবার, ৬:২৬ পূর্বাহ্ন

ঢাকা-নরসিংদী-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর সাহেপ্রতাপ মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে দেশের ইতিহাসে  প্রথম ও একমাত্র ‘তর্জনী’ ভাস্কর্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই ম্যুরালটির দিকে তাকালেই ভেসে উঠবে ৭১’র ৭ই মার্চ। সেই সাথে ভেসে ওঠে একটি রাষ্ট্র ও জাতির রক্তাক্ত ইতিহাস।
৪১ ফুট উঁচু ভাস্কর্যটি বিশ্বের ‘হস্ত’ ভাস্কর্যের মধ্যে উচ্চতার দিক থেকে তিনটির একটি। ১৩ মাস আগে শুরু করা ঐতিহাসিক এ ভাস্কর্যটি কাজ  প্রায় শেষ পর্যায়ে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর নরসিংদী শহরের  প্রবেশ মুখে সাহেপ্রতাপ মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তেজোদীপ্ত তর্জনী নিয়ে নির্মিত ভাস্কর্যটি উন্মোচনের অপেক্ষায় দিন গুনছে। ভাস্কর অলি মাহমুদের বিশ্বাস, এই তর্জনীর নিচে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করলে স্বীয় জাতি, ঐতিহ্য আর গৌরবময় সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি নিজেদের মাঝে ভাসতে বাধ্য। চেতনায় দাঁড়িয়ে যাবে শরীরের পশম। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। বাঙ্গালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশ্যে বজ্রকন্ঠে স্বাধীনতার যে ডাক দিয়েছিলেন সেই বলিষ্ঠ তর্জনীর ইশারায় সেইদিন সমগ্র বাঙালি জাতি জেগে উঠেছিল স্বাধীনতার জন্য। একটি তর্জনী প্রতিবাদের ভাষা, একটি তর্জনী অত্যাচারী জালিমদের হুঁশিয়ারি করে দেওয়া, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক। একটি তর্জনী, একটি নির্দেশ, একটি যুদ্ধ, একটি জাতির মুক্তি।
এই তর্জনী নতুন প্রজন্মের নিকট আর একটি নতুন স্বপ্ন। এই তর্জনী এখনও আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে শক্তি যোগায়। আর এই তর্জনী নিয়েই এবার ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃহত্তর তর্জনী ভাস্কর্য ‘মুক্তির ডাক’ নির্মিত হয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সাহেপ্রতাপে। ভাস্কর্যটির বেদীর চারপাশে থাকবে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফার দাবি, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থ্যান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো টেরাকোটার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। নানা ধরনের অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইবার, হোয়াইট সিমেন্ট, পাথরসহ নানা দ্রব্যাদি দিয়ে নির্মিত করা হচ্ছে ভাস্কর্যটি। লাইটিং, টাইলস, মার্বেল পাথরের বেদীর ওপরে আছে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক তর্জনীটি। এমন তর্জনী ভাস্কর্য এই পর্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও দৃশ্যমান হয়নি, ইতিমধ্যে মূল ভাস্কর্যটির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। মূল বেদীর চারপাশে নান্দনিক ফোয়ারা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও দ্রুত গতিতে ল্যান্ডস্কেপের কাজ চলছে। এ বিষয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোক্তা নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অবিচল আস্থা, অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা। এ জন্যই তিনি শোষণ, বঞ্চনা ও পরাধীনতার শিকল ভেঙে মুক্তির স্বাদ এনে দিতে পেরেছেন। আঙ্গুলের ইশারায় পুরো জাতিকে এক করে বজ্রকণ্ঠের ঘোষণায় ছিনিয়ে আনলেন স্বাধীনতা। এরপর শুরু করলেন তার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ। তার দৃঢ় নেতৃত্ব ও সাহসী পদক্ষেপে অতি অল্প সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। জাতির পিতার আদর্শ, স্বপ্ন, দর্শন ও কর্মচিন্তা আমাদের চলার পথের পাথেয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। জাতির পিতার সেই তর্জনী আজো আমাদের শক্তি জোগায়, সাহস জোগায়। নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াসেই নরসিংদী পৌরসভা থেকে ভাস্কর্যটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি বাঙালি জাতির জন্য এ শিল্পকর্মটি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এ ভাস্কর্য নির্মাণের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান তরুণ প্রজন্মের ভাস্কর অলি মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু মানেই শক্তি, উৎসাহ আর  প্রেরণা। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। তার অসাধারণ বাগ্মিতা, মানবিকতা, মানুষের প্রতি সহমর্মিতার গুণেই তিনি চির অমলিন। তার ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের শিহরিত করে, অনুপ্রাণিত করে। তার উদার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শোষণহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয় আমাদের উজ্জীবিত করেছে। বঙ্গবন্ধু বাঙলি জাতিকে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার যে ইশারা দিয়েছিলেন সেই বিষয়টি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার প্রয়াসে ৪১ ফুট উঁচু শিল্পকর্মটির মূল বেদীতে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় স্থান পেয়েছে। মূল ভাস্কর্যটি বঙ্গবন্ধুর তেজোদৃপ্ত তর্জনীর প্রকাশ পেয়েছে। এই তর্জনীর ইশারায় আমারা পেয়েছি স্বাধীন ভূখন্ড, একটি লাল সবুজের পতাকা। আজ থেকে ১৩ মাস আগে কাজ শুরু করেছিলাম। ইচ্ছে ছিলো মুজিববর্ষের শুরুতেই উদ্বোধন করার। কিন্তু মাঝখানে মহামারি করোনার কারণে কাজে স্থবিরতা আসে। এখনো সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের কিছু অংশ বাকি আছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ করে নরসিংদীসহ পুরো দেশবাসীকে নান্দনিক এই ঐতিহাসিক শিল্পকর্মটি উপহার দিতে পারবো । এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার দা সুর্যসেন এর আবক্ষ ভাস্কর্য, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদীর শেষ সীমানায় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ম্যুরাল বাংলার ঈগল, নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেবা বৃত্ত, জাগ্রত জাতিসত্তা, লৌহজং উপজেলা কার্যালয়ের সামনে হিমালয়, রায়পুরা কলেজে মহানায়ক নামক শিল্পকর্ম নির্মাণ করে দারুণ প্রশংসিত হন এই তরুণ ভাস্কর। তর্জনী ভাস্কর্যটির সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো সাড়ে ৪২ লক্ষ টাকা। এখানে উল্লেখ্য যে পৃথিবীর ইতিহাসে হাত নিয়ে যত শিল্পকর্ম হয়েছে উচ্চতার দিক দিয়ে এটি তিনটির একটি। আর শুধু মাত্র একটি তর্জনীকে প্রতিপাদ্য করে নির্মাণ করা ভাস্কর্যের মধ্যে এটি সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য বলে দাবি করছেন ভাস্কর অলি মাহমুদ
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status