প্রথম পাতা

দেশজুড়ে আইপিএল জুয়ার থাবা

শুভ্র দেব

৩০ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) সাতচল্লিশতম ম্যাচ। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল সানরাইজ হায়দরাবাদ ও দিল্লি ক্যাপিটাল। ইনিংসে ১০তম ওভারের খেলা চলছিল। ব্যাট হাতে প্রস্তুত টিম হায়দরাবাদের মারমুখী ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার। অপরদিকে বল হাতে প্রস্তুত দিল্লি ক্যাপিটালের বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ওভারের তিন নম্বর বলে বাউন্ডারি হাঁকান ওয়ার্নার। দলীয় রান ১০৭। ওয়ার্নার তখন ব্যক্তিগত ৬৬ রান সংগ্রহ করেছেন। ঠিক তখনই ঢাকার বাসাবো এলাকার একটি চায়ের দোকানে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। দেওয়ালে লাগানো টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে আছে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত ২০জন মানুষের চোখ। তাদের মধ্যে মো. আলম ও সোহেল মিয়া নামের দুইজন সিএনজিচালকও ছিলেন। আলম তখন সোহেলকে বলেন- পরের বলে ওয়ার্নার বাউন্ডারি হাঁকাবেন। সোহেল সেটিতে আপত্তি জানিয়ে বলেন পরের বলে ওয়ার্নার আউট হবেন। আলম তখন সোহেলের সাথে ১ হাজার টাকার বাজি ধরেন। চার নম্বর ওভারে অশ্বিনের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ওয়ার্নার ক্যাচ আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। বাজিতে হেরে আলম ১ হাজার টাকা তুলে দেন সোহেলের হাতে।
আইপিএল খেলাকে ঘিরে দেশজুড়ে এভাবেই চলছে রমরমা জুয়ার আসর। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, চাকরিজীবী, শ্রমিক, চালক, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এখন আইপিএল জুয়ায় বুঁদ। সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের অলিগলিতে বসছে জুয়ার আসর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীর মধ্যেও গোপনে চলছে অবৈধ এই কারবার। জুয়ায় হেরে নিঃস্ব হওয়ার ঘটনা অহরহ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গত এক মাসে সারা দেশ থেকে অন্তত দুই শতাধিক জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করেছেন। কিছু স্থানে খেলা চলাকালীন সময় ক্যাবল অপারেটর সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।
আইপিএল জুয়া হলো কোন ওভারে কত রান হবে, কয়টি বাউন্ডারি হবে, পরের বল কী হবে, সেটি চার না ছয় নাকি আউট। বোলার এই ওভারে কয়টি উইকেট পাবে নাকি পাবে না। ইনিংসে মোট দলীয় কত রান হবে। কোন দল জয়ী হবে। এসব টার্ম নিয়েই জুয়াড়িরা বাজি ধরে। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে জুয়াড়ির ধরন অনুসারে লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা হয়। পাড়া-মহল্লায় কখনও গ্রুপ হয়ে আবার কখনও ওয়ান টু ওয়ান বাজি ধরা হয়। এছাড়া পেশাদার বাজিকররা বিভিন্ন বিদেশি সাইটে বাজি ধরেন। সেখানে ডলারে বাজি ধরা হয়। বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে বিদেশি বেটিং অনেক সাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নতুন করে আরো বেশকিছু সাইট সিলেক্ট করেছেন। এসব সাইট বন্ধ করে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পাড়া-মহল্লার জুয়া খেলা নিয়ে বেশ চিন্তিত। ক্যাসিনো-হাউজির মতো জুয়া খেলা নির্দিষ্ট স্থানে হয়ে থাকে। তাই চাইলে সহজেই অভিযান চালিয়ে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া যায়। তবে পাড়া-মহল্লায় এবং বাসা বাড়িতে আইপিএল-কে ঘিরে যেসব জুয়ার আসর বসছে সেগুলো গোপনে হচ্ছে। এছাড়া বিদেশি বেটিং সাইটের অ্যাপস জুয়াড়ির স্মার্টফোনে আছে। তাই কার মোবাইলে অ্যাপস আছে বা কোন মহল্লার কোন স্থানে জুয়ার আসর বসেছে সেগুলো শনাক্ত করা কঠিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে ‘বেট৩৬৫ ডটকম’ নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়েবসাইটে সব ধরনের খেলার আপডেটের পাশাপাশি বাজি ধরার সুযোগ রয়েছে। সেখানেও আইপিএলকেন্দ্রিক বাজি ধরা হচ্ছে। ‘বেট৩৬৫ লাইভ’ নামে এসেছে মোবাইল ফোনের অ্যাপ ভার্সন, যেখানে তরুণ-তরুণীরা আইপিএল নিয়ে দেদারসে জুয়া খেলছে। আরো কিছু অনলাইন জুয়ার সাইটে আইপিএলকেন্দ্রিক গেমিং চলছে। এর আগে বিটিআরসি অনলাইন বেটিংয়ের বেশকিছু সাইট বন্ধ করে দিয়েছিল।
র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল  আশিক বিল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, ক্যাসিনো বা হাউজি’র মতো জুয়া একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে খেলতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে  দেশব্যাপী আইপিএল জুয়া চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে দর্শক মাঠে যেতে পারছে না তাই তারা একটা রমরমা জুয়ার আসরের ব্যবস্থা করে ফেলছে। পাড়া-মহল্লার খেলা দেখার সুযোগ থাকলেই একজন আরেকজনকে নিয়ে বাজি ধরছে। এ ধরনের জুয়ায় বিষয়ে আমরা বেশকিছু তথ্য পেয়েছি। তাই আমাদের নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশের ব্যাটালিয়নরা জুয়া নিয়ে কাজ করছে। কিছুদিন আগেও আমরা ৬১ জন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করেছি।
বিভিন্ন বেটিং সাইট নিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন বেটিং সাইটে জুয়া চলছে এ বিষয়টিও আমাদের নজরে এসেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status