মত-মতান্তর

প্রতিবার কেঁচো খুড়তেই কেন সাপ বের হয়?

শাহাদাৎ হোসেন স্বাধীন

২৯ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১:৩৫ পূর্বাহ্ন

বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, ‘কেঁচো খুড়তে সাপ।’ কিন্তু বাংলাদেশে কেঁচো খুড়তে এনাকোন্ডা বের হয়। কিন্তু সরাসরি সাপ আর এনাকোন্ডা খুঁজতে কোনদিন কোন অভিযান হয় না। দেশবাসী প্রার্থনায় থাকে কোনদিন একটি কেঁচোর খোড়ার ‘অঘটন’ ঘটবে আর বেরিয়ে আসবে দৈত্য আকৃতির এনাকোন্ডা!

হাজী সেলিম পুরান ঢাকায় যে চাঁদাবাজি আর জমি দখলের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন তা কে না জানে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রশাসন বা সরকার এতদিন কোন ব্যবস্থা নেয়নি৷ বাহুবল দেখিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল করে মার্কেট বানিয়েছেন তিনি। সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতেও বিচলিত হয়নি। বরং দখলকৃত হল উদ্ধারে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে পুলিশ।

হাজী সেলিমের পুত্র ইরফানকে অবৈধভাবে ওয়াটিকি ও মদ রাখার দায়ে এক বছরের জেল দেয়া হয়েছে। কিন্তু যদি নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফকে ইরফান ও তার সহকারিরা মারধর না করত, সে মারধরের পর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফের আকুতি-মিনতির ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে না পড়ত, তবে কি ইরফানকে ছুঁতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী? লেফটেন্যান্ট সাহেবের জায়গায় আমি, আপনি বা কোন সাধারণ মানুষ এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই উদ্যোগ দেখতে পেতাম!

মারধরের ঘটনায় এখনো বিচার হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালত যে অভিযোগে ইরফানকে শাস্তি দিয়েছে একটু গোয়েন্দা নজরদারি চালালে এমন হাজারো ইরফান ঢাকা শহরে খুঁজে পাওয়া যাবে। নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর পুত্র সাবাব বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে থেঁতলে দিয়েছিল এক গরীব পথচারীকে৷ সাবাবের কী হয়েছে?

খবরে দেখলাম, ইরফান গ্রেপ্তারের পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের দখল হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক একটি শাখা পুনরুদ্ধারে গিয়েছে ব্যাংক৷ শতবছরের কাছাকাছি পুরানো এই শাখা লকডাউনে হাজী ও হাজীপুত্র দখল করে গুড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফের ঘটনা না ঘটলে এই জমি কখনো কি উদ্ধার করার পরিস্থিতি তৈরি হতো?

আরেকটি খবর বলছে, হাজী সেলিম ও ইরফান সেলিমের সম্পদের ওপর চোখ রাখছে দুদক। কিন্তু দুদক এতদিন কোথায় ছিল? এতদিন কেন চোখে চশমা পরেছিল। অন্যের জালে আটকা পড়া বানরের গলায় শিকল ঝুলানোই কি দুদকের কাজ?

টেকনাফের আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমারের কথা ভাবুন। মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড না ঘটলে দেশবাসী কি কখনো জানতো একজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা কতবড় মাফিয়াতন্ত্র তৈরী করেছেন প্রশাসনে৷ কীভাবে জনগণকে জিম্মি করছেন বছরের পর বছর ধরে।

করোনার ভুল রিপোর্টের খবর নিয়ে তোলপাড় তৈরি না হলে সরকারি দলের ছত্রছায়ায় শাহেদ নামক এক তৃতীয় শ্রেণির রাজনীতিক জনগণকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল তার কী কোন বিচার হতো? দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যম তাকে এতদিন চিন্তক রাজনীতিক হিসাবে উপস্থাপন করেছিল। সুনামগঞ্জের তাহেরপুরের ওসি নন্দন কুমারের বিরুদ্ধে দৈনিক ৩০ লাখ টাকা আয়ের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুদক। ভাবুন তো এধরনের একজন ওসির একদিনের আয় দিয়ে একটি প্রাইমারি স্কুলে একটি ভবন নির্মাণ করা যাবে।

কিন্তু এসব এনাকোন্ডা বরাবরই কেঁচো খুড়তেই বের হয়ে আসে। এনাকোন্ডা ধরতে কোন অভিযান দেখা যায় না। গণমাধ্যমও আধমরা সাপই পেটায়। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ভবন নির্মাণের কাজ থেকে ইসমাইল সম্রাটের চাঁদাবাজির ঘটনায় সাহস করে দৈনিক মানবজমিন রিপোর্ট করেছিল। তৎকালীন মাফিয়া সম্রাট রিপোর্টারকে নানা হুমকি-ধামকি দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খাঁচায় বন্দি হতে হয়েছে সম্রাটকে। আমাদের গণমাধ্যমের সাহস দেখানো উচিত- বাকি এনাকোন্ডোদের মুখোশ উন্মোচনের। নতুবা পুরো দেশটা চলে যাবে এনাকোন্ডাদের পেটে৷


লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক   
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status