বিশ্বজমিন

এএফপির প্রতিবেদন

খামেনির প্রশ্ন- বাকস্বাধীনতা আর নবী (স.)-এর অবমাননা কি সমান?

মানবজমিন ডেস্ক

২৯ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্রে সমর্থন দেয়ায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইরানের ধর্মীয় সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনি। ফরাসি যুবসমাজের উদ্দেশে নিজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক বার্তায় তিনি ম্যাক্রনের কর্মকান্ডকে ‘স্টুপিড এক্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ফরাসি যুব সমাজের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আপনাদের প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করুন বাক স্বাধীনতার নামে কেন তিনি আল্লাহর রাসুলের অবমাননাকে সমর্থন করেন। বাক স্বাধীনতা আর আল্লাহর প্রেরিত একজন পবিত্র রাসুলের অবমাননা কি এক সমান? এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্টকে যারা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছেন এই কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি সেইসব ভোটারদেরকে অবমাননা করেছেন বলে দাবি করেন খামেনি।  তিনি প্রশ্ন করেন, যেসব মানুষ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন, তিনি এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কি তাদেরকে অবমাননা করছেন না?
উল্লেখ্য, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করে প্যারিসের একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছিলেন একজন শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি। এ জন্য প্রকাশ্যে দিনের বেলা তার শিরñেদ করে এক চেচেন যুবক। পরে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহারের পক্ষে অনুমোদন দেন এবং ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসকে জড়িয়ে বক্তব্য রাখেন। তার এমন আচরণে সারা মুসলিম জাহানে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তারই প্রেক্ষিতে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ওই মন্তব্য করেন। তিনি ফরাসি যুবসমাজের প্রতি আরো প্রশ্ন রেখেছেন। জানতে চেয়েছেন, তারপরের প্রশ্ন হলো, প্রেসিডেন্টের কাছে জানতে চান কেন হলোকাস্ট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা একটি অপরাধ হবে? যখন মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)’কে অবমাননাকে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে, তখন কেন কোনো মানুষ হলোকাস্ট নিয়ে সংশয়ের কোনো কিছু লিখলে তাকে জেলে যেতে হবে?
ইসলাম ও নবী (স.)-কে নিয়ে ইমানুয়েল ম্যাক্রন বক্তব্য দেয়ার পর বিশ্বজুড়ে ইসলামিক চিন্তাবিদ, ধার্মিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ম্যাক্রনের মানসিক রোগের চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান। নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি ইসলামের অবমাননা হয় এমন কনটেন্ট ফেসবুক থেকে মুছে দিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। ইরানের অন্য রাজনীতিকরাও কড়া সমালোচনা করেছেন ম্যাক্রনের। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি থেকে শুরু করে সব শ্রেণির নেতারা এর নিন্দা জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট রুহানি বুধবার সতর্ক করেছেন এই বলে যে, মহানবী (স.)-এর অবমাননা অনৈতিক ও এর ফলে সহিংসতা, রক্তপাতকে উৎসাহিত করা হতে পারে।  তিনি আরো বলেন, পশ্চিমাদের বোঝা উচিত যে, মহানবী (স.)কে অবমাননা মানে সব মুসলিমকে, সব নবীকে, সব মানবিক মূল্যবোধকে অবমাননা ও সব নীতিকে পিষ্ট করার সমান। মহানবী ছিলেন মানবতাবাদের শিক্ষক, এ জন্য নবী (স.)-এর প্রতি প্রতিটি ইউরোপীয়ানের ঋণী থাকা উচিত।  
ওদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বুধবার তেহরানে অবস্থিত ফরাসি দূতাবাসের উদ্দেশে বিক্ষোভ করেন কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় অনেক বিক্ষোভকারীর হাতে ব্যানারে লেখা ছিল ‘শেম অন ইউ ম্যাক্রন’। অন্যদের হাতে ছিল ফরাসি নেতার পোড়া ছবি। বিক্ষোভকারীদের একজন জয়নব ইয়েগানেহ। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, নবীজির (স.)এর ব্যঙ্গচিত্রে সমর্থন দিয়ে ম্যাক্রন তার হীনমন্যতা প্রদর্শন করেছেন। সরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ তাহেরজাদেহ বলেছেন, আমরা এই বিক্ষোভ করছি। এর কারণ হলো, সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে আমাদের। তাই মহানবী (স.)কে অবমাননার কোনোই অধিকার নেই তার (ম্যাক্রনের)।
ওদিকে এর আগেরদিন মঙ্গলবার তেহরানে নিযুক্ত ফরাসি দূতাবাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে তলব করে ইরান। তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়, ফরাসি কর্তৃপক্ষের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। ওদিকে বুধবার লেবাননের যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ একই ইস্যুতে সতর্কতা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, যেসব গ্রুপ, রাষ্ট্র, নেতারা বর্তমানে নৈতিক ও জাতিগতভাবে খেলাপি হয়ে পড়েছেন তাদের বিরুদ্ধে নিন্দা জানায় তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status