বিশ্বজমিন

হার্ড ইমিউনিটির আশা আরও কমলো

মানবজমিন ডেস্ক

২৯ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে হার্ড-ইমিউনিটি অর্জনের আশা প্রায় নস্যাৎ করে দিয়েছে বৃটিশ এক গবেষণার ফলাফল। ওই গবেষণা অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তির দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা সুস্থ হওয়ার পর বেশ দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। এ খবর দিয়েছে স্কাই নিউজ।

করোনা মহামারি পুরো বিশ্বকে প্রায় অচল করে দিয়েছে। দেশে দেশে জারি হয়েছে লকডাউন। অনেকে লকডাউনের বিকল্প হিসেবে হার্ড-ইমিউনিটি অর্জনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর জন্য কোনো জনসংখ্যার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বাসিন্দার মধ্যে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরি হতে হবে। এখনো করোনার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত না হওয়ায়, এই হার্ড-ইমিউনিটি অর্জনের একমাত্র পথ হচ্ছে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠা।
কোনো ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হলে, তার দেহে সাময়িকভাবে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এভাবে যদি জনসংখ্যার অর্ধেক বা তারও বেশি মানুষের শরীরে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তাহলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন সম্ভব। এভাবেই ধীরে ধীরে এই রোগের বিলোপ ঘটবে।

কিন্তু বৃটেনের বিখ্যাত ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গত গ্রীষ্মে দেশটিতে লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকে করোনার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডিসম্পন্ন ব্যক্তিদের দেহে অ্যান্টিবডির পরিমাণ ২৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকরা গত জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩ লাখ ৬৫ হাজার মানুষকে তিন দফা পরীক্ষা শেষে  ফলাফল বিশ্লেষণ করে এই অনুসিদ্ধান্ত পৌঁছেছেন।  

রিয়েক্ট-২ শীর্ষক গবেষণাটিতে দেখা গেছে, লকডাউন শিথিলের সময়, গত জুনের শেষ ও জুলাইয়ের শুরুর দিকে পরীক্ষিতদের ৬ শতাংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি ছিল। কিন্তু গত মাসে বৃটেনে করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ শুরুর সময় অ্যান্টিবডিসম্পন্ন ব্যক্তিদের হার ৪.৪ শতাংশে নেমে আসে।
এ গবেষণার এক গবেষক, অধ্যাপক হেলেন ওয়ার্ড বলেন, নতুন এ ফলাফল কিন্তু জোরালো প্রমাণ যে, হার্ড-ইমিউনিটি অর্জন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ১০০ থেকে ৯৫ জন মানুষই সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা মানে হলো, আমরা পুরো জনসংখ্যাকে সুরক্ষিত রাখার আশপাশ থেকেও বহু দূরে আছি।

স্কাই নিউজ অনুসারে, ঠাণ্ডাজ্বরের জন্য দায়ী করোনাভাইরাসে মানুষ যেভাবে বারবার আক্রান্ত হয়, কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসেও মানুষজন একইভাবে বারবার আক্রান্ত হতে পারে।
গবেষণাটির অপর এক গবেষক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ওয়েন্ডি বারক্লে বলেন, ফলাফল অনুসারে, সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দেওয়ার তিন থেকে চার সপ্তাহ পর দেহে অ্যান্টিবডির পরিমাণ সর্বোচ্চ থাকে। এরপর আচমকাই কমতে থাকে। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ভাইরাসের ক্ষেত্রেও একইরকম দেখা যায়। তিনি বলেন, এমনটা হতে পারে যে, এ করোনা ভাইরাস প্রতি শীতে ফিরে আসবে। এর সংক্রমণে সাধারণ সর্দি-কাশি হতে পারে। উল্লেখ্য, এখন অবধি মানুষের দ্বিতীয়বার সংক্রমণের ঘটনা খুব বেশি দেখা যায়নি।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষণাটি জরুরী বিবেচনায় পিয়ার রিভিউ ছাড়াই প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটিতে কেবল অংশগ্রহণকারীদের অ্যান্টিবডির পরিমাণ মাপা হয়েছে। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতার অপর উৎস টি-সেল নিয়ে কোনো উপাত্ত জানা যায়নি। এমনটা সম্ভব যে, অ্যান্টিবডির পরিমাণ কমলেও টি-সেল সক্রিয় থাকে। তবে এখন অবধি তা নিশ্চিত করার মতো কোনো পরীক্ষা হয়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status