প্রথম পাতা

রিফাত হত্যা মামলা

অপ্রাপ্ত বয়স্ক ১১ আসামির সাজা

বরগুনা প্রতিনিধি

২৮ অক্টোবর ২০২০, বুধবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ৬ জনের ১০ বছর, ৪ জনের ৫ বছর ও ১ জনের তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তিনজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার জেলা শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় দেন। এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে জেলা শিশু আদালতে এ রায় পড়া শুরু করেন বিচারক মো. হাফিজুর রহমান।
অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায়ের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনা শিশু আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। তিনি বলেন, এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এমন রায় প্রমাণ করে অপরাধী যেই হোক কোনো ছাড় নেই। মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো দুনিয়া জানতে পেরেছে এ ঘটনা। আসামি যেই হোক কেউই যে অপরাধ করে পার পাবে না সেটা আবারও এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হলো।
তিনি আরও বলেন, মাত্র ৬৩ কার্য দিবসে এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। মূলত সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায় বিচারের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে এবং তা হয়েছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হয়েছে।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা রায়ে সন্তুষ্ট নন। দ্রুত রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন এবং আপিল আবেদন করবেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, আমার মক্কেল ন্যায়বিচার পাননি। তাই আমরা সাত কার্যদিবসের মধ্যেই হাইকোর্টে আপিল করবো।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। তিনি বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। রায় দ্রুত কার্যকর হবে- এটাই কামনা করি।
আদালতে মামলার রায় শুনতে হাজির হন রিফাতের পরিবারের সদস্য, মামলার আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী ও আসামিদের স্বজনরা। এ উপলক্ষে আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আদালত চত্বরে ভিড় দেখা যায় উৎসুক মানুষেরও। রায় শুনতে জামিনে থাকা ৮ আসামি আদালতে উপস্থিত হন। কারাগারে আটক ৬ আসামিকেও আদালতে হাজির করা হয়। তাদের উপস্থিতিতে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণা শেষে দণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো- মো. রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী, মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, মো. আবু আবদুল্লাহ রায়হান, মো. ওলিউল্লাহ অলি, মো. নাঈম এবং তানভীর হোসেন।
এছাড়াও জয়চন্দ্র সরকার চন্দন, মো. নাজমুল হাসান, রাকিবুল হাসান নিয়ামত ও সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিব্বুল্লাহকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর প্রিন্স মোল্লাকে দেয়া হয়েছে তিন বছরের কারাদণ্ড। অপরদিকে মামলার অপর তিন আসামি মারুফ মল্লিক, রাতুল সিকদার জয় ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
গত বছরের ২৬শে জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। ওই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন বিকালেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রিফাত শরীফ। পরে গত বছরের ১লা সেপ্টেম্বর বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দু’টি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। একই সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান নিহতের স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৪ আসামিকে খালাস প্রদান করেন।
রায়ের অবজারভেশনে আদালত
শিশু আসামিদের দণ্ড বৃদ্ধি করা দরকার: হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ মিন্নি
শিশু ও কিশোর আসামিদের অপরাধ নির্মূল করার জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের দণ্ড বৃদ্ধি করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বরগুনার শিশু আদালত। আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায়ের অবজারভেশনে এ মন্তব্য করেছেন আদালত। এছাড়াও রায়ের অবজারভেশনে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও বরগুনার শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, রায়ের অবজারভেশনে আদালত বলেছেন, বাংলাদেশে কিশোর অপরাধীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরাধের তুলনায় কিশোরদের শাস্তির পরিমাণ কম হওয়ায় গডফাদাররা কিশোরদের ব্যবহার করছে। তাই আদালত বলেছেন, কিশোর অপরাধ নির্মূলের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের শাস্তির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, শিশু আসামিদের দণ্ড বৃদ্ধি করার পাশাপাশি রায়ের অবজারভেশনে আদালত মিন্নি প্রসঙ্গে বলেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মিন্নির অনৈতিক ও বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে রিফাত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এই কিশোর আসামিরা প্রাপ্তবয়স্ক দণ্ডিত আসামিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা ও মৌলিক শিক্ষার অভাবে এই কিশোররা বিপথগামী হয়েছেন। তাই এই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে দেশে কিশোর অপরাধের সংখ্যা এবং কিশোর গ্যাঙের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status