শেষের পাতা

ক্যাসিনো কাণ্ড

২২ মামলার চার্জশিট শিগগিরই

মারুফ কিবরিয়া

২৮ অক্টোবর ২০২০, বুধবার, ৯:২৬ পূর্বাহ্ন

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানে বেরিয়ে আসে ক্যাসিনোসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক ব্যক্তির কোটিপতি হওয়ার খবর। আলোচনায় আসে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নাম। একের পর এক অভিযানে ধরাও পড়ে রাঘব বোয়ালরা। এরই সূত্র ধরে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্য সংস্থাগুলোর মতো দুদকও মামলা করে ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে। সংস্থাটির তদন্তকারী কর্মকর্তারা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে এক এক করে ২২টি মামলা করে। এসব মামলায় আসামি করা হয় ২৪ ব্যক্তিকে। তদন্ত ও যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছে দুদক।
দুদকের একটি সূত্র জানায়, আসামিদের মধ্যে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট, আনিছুর রহমান, সেলিম প্রধান, জিকে শামীমের বিরুদ্ধে চলতি মাসেই চার্জশিট দেয়া হবে। বাকিদের বিরুদ্ধেও নভেম্বরের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হবে। সূত্র আরো জানায়, এরইমধ্যে অনুসন্ধানে মামলার আসামিদের ৫৮২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। যা আদালতের নির্দেশনায় জব্দ করেছে দুদক।
ক্যাসিনো কাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের (বর্তমানে বহিষ্কৃত) সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১২ই নভেম্বর মামলায় দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। একই দিন যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দুই কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ২১শে অক্টোবর যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ও কথিত যুবলীগ নেতা ওরফে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। জি কে শামীমের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগদখল করার অভিযোগ আনা হয় সেখানে। আর খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ আনা হয়। ওই বছরের ২৩শে অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ২৭শে অক্টোবর ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমানে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও তার স্ত্রী সুমি রহমানের ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ ২৯শে অক্টোবর মামলা করে দুদক। ক্যাসিনো কাণ্ডে গত ৬ই নভেম্বর কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজিবের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের নামে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্যের ভিত্তিতে ১৩ই নভেম্বর দুদক মামলা করে।
এদিকে ক্যাসিনো কাণ্ডে দায়েরকৃত মামলায় যাদের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে তারা হলেন- জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তার, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রূপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবে সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান (পাগলা মিজান), কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান, যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী, কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, ব্যবসায়ী মো. সাহেদুল হক, এনআর গ্লোবালের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, গণপূর্তের সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. মুমিতুর রহমান ও তার স্ত্রী মোছাঃ জেসমীন পারভীন এবং গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও তার স্ত্রী গোপা দে। দুদক কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দায়ের করা ২২ মামলার চার্জশিট নভেম্বর মাসের মধ্যে দাখিল করা হবে। আসামিদের দখলে থাকা এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৮২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status