শেষের পাতা

জার্মানি ব্যতিক্রম, অন্যরা কাজ করে উল্টো

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২৮ অক্টোবর ২০২০, বুধবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রদান প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু না করা পর্যন্ত মিয়ানমারে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ স্থগিত রাখবে জার্মানি। প্রকাশ্যে তারা এ ঘোষণা দিয়েছেন। প্রত্যাবাসনে তাদের চাপ খানিকটা ব্যতিক্রম। তবে দুনিয়ার বাকি রাষ্ট্রগুলোর প্রায় সকলেই কেবল বক্তৃতা বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছেন- এমন অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, এ-ও হচ্ছে কাজের সময় তারা উল্টো কাজ করছেন।  গতকাল সেগুনবাগিচাস্থ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে মন্ত্রী মোমেন এক প্রশ্নের জবাবে এসব অভিযোগ করেন। প্রশ্নটি ছিল ‘গত ৩ বছরে বিদেশি বন্ধুরা প্রত্যাবাসন নিয়ে সিরিজ বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপও চলছে। এর বিপরীতে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রদানে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সাড়া কতটুকু মিলেছে? আদতে কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশ প্রত্যাশিত সহযোগিতা পেয়েছে কিনা? জবাবে মন্ত্রী বলেন, “হ্যাঁ, পেয়েছি, যেমন জার্মানি। তারা তাদের যে ইনভেস্টমেন্ট যেটা মিয়ানমারে করার কথা তা আপাতত স্থগিত করেছে। বলেছে, প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত এটি বন্ধ থাকবে। আর বাকি প্রায় ক্ষেত্রেই বক্তব্য শুনি কিন্তু কাজের সময় উল্টো কাজ হয়। যেমন জাপানের রাষ্ট্রদূত সেদিন আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি জানালেন তারা আমাদের সাহায্যের জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে। জাপানের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক খুবই ভালো। মিয়ানমারে তাদের প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে। গত কয়েক বছরে সেটি অনেক গুণ বেড়েছে। ফলে তারা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা মনে করি জাপানের কথা মিয়ানমার শুনবে। এ জন্য আমরা বলেছি আপনারা তাদের সঙ্গে আলাপ করুন। জাপানের দূত বলেছেন, তারাও প্রত্যাবাসন চান। আমরা বলেছি প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান, এটা নাম্বার ওয়ান ইস্যু। রোহিঙ্গারা তাদের স্বদেশে ফেরত যাবে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে- এটা জাপানও মানে। কিন্তু কেউ এতে জোর দেয় না, এটা একটা সমস্যা। এ জন্য আমরা ইদানীং সবাইকে জোরেশোরে বলছি যে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে, এটা হতে হবে।” প্রত্যাবাসনে চীনের ভূমিকা প্রসঙ্গে মন্ত্রী  বলেন, “আমরা অনেক বেশি আশাবাদী যে চীন আমাদের এতে সাহায্য করবে। কারণ মিয়ানমারে চীনের উদ্দেশ্য সাধনের সুবিধা বা শক্তি (লেভারেজ) অনেক। চীনও বলছে তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের কথা হয়েছে। ভেরিফিকেশনের পর তারা (মিয়ানমার) রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে নেবে। সবাই বলে, কিন্তু একটা লোককেও ৩ বছরে ফেরত পাঠানো যায়নি।” সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে মন্ত্রী বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘যদিও মিয়ানমার দাবি করে কিছু লোক নাকি একা একা মিয়ানমারে ফেরত চলে গেছে!’
যুক্তরাষ্ট্র-চীন পাল্টাপাল্টিতে নিরাপদ দূরত্বে বাংলাদেশ: সম্পূরক প্রশ্নে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি প্রসঙ্গে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এটা তাদের ঝগড়াঝাটি। আমরা এর মধ্যে নেই। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে তাদের ফেরত পাঠানো। রোহিঙ্গারা যত দ্রুত যাবে, ততো বাংলাদেশের মঙ্গল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা মিয়ানমারের জন্যও মঙ্গলজনক। প্রত্যাবাসনে গোটা অঞ্চলের মঙ্গল নিহিত রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “দেখেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে ব্যস্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কারণ তাদের কোনো কাজ নেই। এখানে তারা অনেকদিন ধরে আছে। মাদকের জন্য ঝগড়াঝাটিতে (অভ্যন্তরীণ সংঘাতে) সেদিন ৮ জন মারা গেছে। এটি উত্তরোত্তর বাড়বে এবং এক সময় তারা চরমপন্থার দিকেও ঝুঁকতে পারে। কারণ বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী টার্গেট করেছে, তাদের ব্যবহারের চেষ্টা করছে। এ জন্য আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন শুরু হোক। রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে বিদেশিদের উপদেশ প্রদানে বিরক্তি প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি, আগে তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করো, তার পর জীবনমান উন্নত করতে যা প্রয়োজন তা করো। এখানে তারা অস্থায়ী আশ্রয়ে আছে। জীবন বাঁচাতে ওই আশ্রয়, তারা এর মধ্যেই থাকুক। আমরা এখানে তাদের জীবনমানের উন্নয়নে আগ্রহী নই।
ভাষানচরে স্থানান্তর প্রসঙ্গ: মন্ত্রী মোমেন বলেন, ভাষানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে সরকার অটল রয়েছে। তিনি বলেন, এটি রোহিঙ্গাদের মঙ্গলের জন্যই করা হচ্ছে। কারণ কুতুপালংয়ে অতিবৃষ্টি হয়, ভূমিধস হয়। অনেকে মারা যায়। তখন দোষ চাপে সরকারের ওপর। বলা হয়, সরকার তাদের যথাযথ সুরক্ষা দিতে পারেনি। এ জন্য আমরা তাদের একটা অংশকে ভাষানচরে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মন্ত্রী বলেন, কিন্তু কিছু সংস্থা বলছে তাদের নেয়ার আগে ভাষানচর পর্যবেক্ষণ দরকার। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে তার কথা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নির্বাহী পরিচালক জানিয়েছেন, কুতুপালংয়ে খাদ্য পৌঁছানোর যে খরচ ভাষানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের খরচে তার তেমন তফাৎ হবে না। কিন্তু এখানে ইউএনএইচসিআরসহ অনেকেই বলছে, ভাষানচরে গেলে না-কি খরচ বাড়বে। তাদের আপত্তিতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় খানিকটা দেরি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে কিছু লোককে ভাষানচরে নিয়ে যাচ্ছি। তারা ওখানে গিয়ে সরজমিনে দেখবে। যারা আগে দেখেছে তাদের পছন্দ হয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ভাষানচরে তাদের থাকা-খাওয়া অনেক উন্নত হবে। দ্বিতীয়ত, যারা সেখানে যেতে রাজি হবে তারা কৃষিকাজ, গরু, হাঁস-মুরগি পালন এবং অন্যান্য কাজের সুযোগ পাবে। যে ৩ শতাধিক লোক রয়েছে, তাদের নারী সদস্যরা এখন পার্লার চালাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ভাষানচর অনেক সুন্দর। ওখানে কোনো পানি ওঠে না। গত ৫০ বছরে চরটিতে একবারও পানি ওঠেনি। চারদিকে উঁচু করে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এ জন্য সদ্য এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া জলোচ্ছ্বাস আম্ফানেও ভাষানচরে পানি ওঠেনি, অন্যত্র উঠেছে। ঝড়ে একবারের জন্যও এখানে বাতি নেভেনি বলে দাবি করেন মন্ত্রী। তবে কবে নাগাদ ভাষানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এটি ঠিক করবে। এটা আমার কাজ নয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে আমরা (ইনফর্মাল ওয়েতে) ক্ষয়ক্ষতির কিছু তথ্য পেয়েছি। এ নিয়ে এখনো পুরোপুরি নিরীক্ষা হয়নি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে সিরিয়াস স্টাডি হওয়া উচিত এবং ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেয়া যাবে (বার্ডেন কে শেয়ার করবে) তা এখনই নির্ধারণ করতে হবে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status