শেষের পাতা

১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মৌলভীবাজারে সেচ পাম্প ক্রয়ে ৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে

২৭ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

সেচ পাম্প ক্রয়ে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা লোপাট। এমন খবরে হতবাক উপকারভোগীরা। স্থানীয়রা বলছেন, ওই লোপাটের টাকা দিয়ে সম্ভব ছিল জরাজীর্ণ পুরো মনু প্রকল্পের উন্নয়ন। লোপাটের এমন খবর চাউর হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপকারভোগীসহ এ জেলার সর্বস্তরের মানুষ। নড়েচড়ে বসে দুদকও। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর ওই লুটপাটের বিরুদ্ধে দুদক বাদী হয়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এমন পুকুর চুরি দুর্নীতির ঘটনায় কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের বাসিন্দারা ক্ষোভের সঙ্গে অভিযোগ করে জানালেন, শুধু ওই লোপাটের টাকা দিয়েই পুরো মনু প্রকল্পের বয়ে চলা নানা সমস্যার সমাধান হয়েও টাকা বাঁচতো। আর স্থায়ী লাঘব হতো তাদের কৃষিজমি চাষাবাদের দীর্ঘদিনের বয়ে চলা দুর্ভোগ। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওর এলাকার কাশিমপুর পাম্প হাউজ। ১৯৭৫-৭৬ সালে ২৪ হাজার ১৭৮ হেক্টর এলাকার ১৯ হাজার ২২৮ হেক্টর চাষযোগ্য জমির বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ ব্যবস্থা করাই ছিল প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার হাওরের কৃষি জমিতে চাষাবাদ ওই পাম্প হাউজের সেচের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় কাশিমপুর পাম্প হাউজ আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। টেন্ডার প্রক্রিয়ার পর ১৯শে জুন ২০১৬ সাল থেকে কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০শে জুন ২০১৮।  চলতি মৌসুমে কাশিমপুর পাম্প হাউজে স্থাপন করা ৮টি নতুন সেচ পাম্পের কারণে এলাকার কৃষকেরা তাদের অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনেন। নতুন মেশিন স্থাপন করায় স্থানীয় উপকারভোগী কৃষক বেজায় খুশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সেচ ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়ায় এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ১ লাখ ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষাবাদ হয়েছে। আর শুধু কাশিপুর পাম্প হাউজের আওতায় কাউয়াদীঘি ও তৎসংলগ্ন মনু প্রকল্পে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষাবাদ হয়েছে। এবার সেচসহ অন্যান্য সুবিধা থাকায় প্রায় ৬৫০ হেক্টর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। যাতে প্রায় ৫৫ হাজার মে. টন ধান বাড়তি উৎপাদন হবে।  কাউয়াদীঘি হাওর পাড়ের কৃষকদের দীর্ঘ প্রত্যাশিত এই প্রকল্পে কাজ শেষ হওয়াতে এমন চমকপ্রদ সুফল পেলেও বাস্তবায়িত হওয়া ওই প্রকল্পে হয়েছে বড় ধরনের দুর্নীতি। প্রকল্পে ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকার পাম্প কেনায় দেখানো হয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। মনু নদী সেচ প্রকল্পের অধীনে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরের ২৪ হাজার ১৭৮ হেক্টর এলাকার ১৯ হাজার ২২৮ হেক্টর চাষযোগ্য জমির বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ ব্যবস্থা প্রদান করার লক্ষ্য নিয়ে কাউয়াদীঘি হাওরের কাশিমপুর পাম্প হাউজে দ্বিতীয়বারের মতো স্থাপন করা হয় নতুন পাম্প মেশিন। এই প্রকল্পে ৮টি পাম্পের মূল্য দেখানো হয় ৫৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তদন্তে যার প্রকৃত মূল্য পাওয়া যায় ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এই ৩৪ কোটি ৪২ লাখ ১৭ হাজার ১০৬ টাকা ২০ পয়সা দুর্নীতির অভিযোগে ১১ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন- ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিগমা ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেডের এমডি প্রকৌশলী  সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সৈয়দ আরশেদ রেজা, জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী আব্দুস সালাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক (পাউবো, মৌলভীবাজার) এস.এম.শহীদুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী যান্ত্রিক (পাউবো) মৌলভীবাজার, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পাউবো কেন্দ্রীয় মেরামত বিভাগ ঢাকা, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পাউবো পাম্প হাউজ নারায়ণগঞ্জ, নির্বাহী প্রকৌশলী পাউবো ঢাকা  মো. আব্বাস আলী, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ডিজাইন সার্কেল-৬ পাউবো ঢাকা, সাবেক উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পাউবো বিদ্যুৎ বিভাগ (চাঁদপুর), তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পূর্ব সার্কেল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তেজগাঁও ঢাকাসহ ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। দুদকের হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান মুঠোফোনে বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন। দুদক হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে জানা যায়, দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। ‘মনু নদীর সেচ প্রকল্পের আওতাধীন কাশিমপুর পাম্প হাউজ পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় পাম্প কেনায় প্রাথমিক তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার অভিযোগে এই মামলা করে দুদক। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে কাশিমপুর পাম্প হাউজ পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য প্রকৃত দরের চাইতে বেশি দরে পাম্প কিনেছেন। অনুসন্ধানে ৮টি পাম্পের প্রকৃত মূল্য পাওয়া যায় ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অথচ বিল হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরকার থেকে আদায় করেছে ৫৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এতে সরকারের ৩৪ কোটি ৪২ লাখ সতেরো হাজার একশ’ ছয় টাকা বিশ পয়সা ক্ষতি হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status