শেষের পাতা

একজন সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদিরের বিদায়

স্টাফ রিপোর্টার

২৭ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

বহু গুণে গুণান্বিত সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির। ঢাকায় থাকা সিলেটিদের ঐক্যের প্রতীক ছিলেন তিনি। যে কারও বিপদে এগিয়ে আসতেন সবার আগে। রোগ-শোক বা কোনো কারণে তার অনুপস্থিতিতে কমিউনিটির আনন্দ অনুষ্ঠানগুলোও যেন অপূর্ণ থেকে যেতো। ছোট-বড় যে কাউকে কাছে টেনে নেয়ার অন্যরকম গুণ ছিল তার। মানুষের সঙ্গে হৃদ্যতা হতো সহজেই। ব্যক্তিত্ব আর নির্মল হাসিতে তিনি মন জয় করতে পারতেন। সেটি ক্লাসরুম হোক বা সরকারি-বেসরকারি যে দায়িত্বেই হোক। সেই বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক, সরকারের সাবেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, ঢাকাস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির (৮০) আর নেই। সোমবার বিকাল ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে দুই ছেলেসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। মরহুমের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বরইউরি। অত্যন্ত সদালাপি এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদিরের বেড়ে ওঠা সিলেট শহরে। ছাত্রজীবনে (৬০-এর দশকের প্রারম্ভে) সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ এমসি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে করেছেন শিক্ষকতা। মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মে পদার্পণ করা সৈয়দ মুক্তাদির পরবর্তীতে পকিস্তান ট্যাক্সেশন সার্ভিসে চলে যান। স্বাধীনতা উত্তর টিএন্ডটি বোর্ডের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। নীতির প্রশ্নে আপসহীন, আজীবন সংগ্রামী ওই মানুষ ক্ষমতার অন্দরমহল দেখেছেন চাকরি জীবনের সূচনাতেই। কিন্তু এসব তাকে টানেনি। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তারপর থেকে সমাজসেবায়। মাঝখানে কিছুদিন পরামর্শক হিসাবে কাজ করেছেন একাধিক প্রতিষ্ঠানে। তবে সমাজসেবাকে বাদ দিয়ে নয় বরং এটাই ছিল তার জীবনের ব্রত। ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, মানুষের কাজে, মানুষের মাঝে থাকতেই তিনি যেনো আনন্দ পেতেন। আমৃত্যু তা-ই করে গেছেন। শিক্ষকতার কারণে বিভিন্ন পেশায় তার ছাত্রদের দৃপ্ত পদচারণা রয়েছে। শিক্ষাগুরু হিসাবে তিনি ছাত্রদের সেই অবস্থানে আনন্দ পেতেন। অনন্য ব্যক্তিত্বের কারণে ছাত্রদের কাছেও তাঁর মর্যাদাপূর্ণ আসন ছিল। বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী সৈয়দ মুক্তাদিরের ব্যক্তিগত আচরণ ছিল অমায়িক। জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও তিনি নিজ জেলার ঢাকাস্থ বাসিন্দাদের নিয়ে গড়া সংগঠন মৌলভীবাজার জেলা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিনি জালালাবাদ ভবন ট্রাস্টের সদস্য, ইএনটি ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ, ওসমানী স্মৃতি পরিষদের সভাপতিসহ বহু সামাজিক সংগঠনের সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান আমলে ঢাকা শহরে আসেন তিনি। পরবর্তীতে চাকরির সুবাদে বিভিন্ন স্থানে বদলি হলেও থিতু হয়েছেন ঢাকাতেই। এ জন্য ঢাকায়ই তাকে সমাহিত করা হতে পারে। ক’দিন আগে দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া তার সহধর্মিণীকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জীবনসঙ্গিনীর পাশে তার দাফনের কথা রয়েছে।  

পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনদের শোক
ঢাকাস্থ সিলেটের বাসিন্দাদের অন্যতম মুরব্বি সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদিরের মৃত্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনসহ বিশিষ্টজনরা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রেরিতে এক শোকবার্তায় মন্ত্রী মোমেন বলেন, সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির ছিলেন অত্যন্ত সদালাপি, পরোপকারী ও সজ্জন ব্যক্তিত্ব। সবার সুখে-দুঃখে তিনি সব সময় এগিয়ে আসতেন। ড. মোমেন মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

এদিকে শিক্ষাগুরুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি।

ওদিকে সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদিরের মৃত্যুতে রীতিমতো শোক সাগরে ভাসছেন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সদস্যরা। অনেকে মানবজমিন অফিসে ফোন করেছেন, কেউ কেউ শোকবার্তাও পাঠিয়েছেন। জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি ড. একে আব্দুল মুবিন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন আহমদ, জালালাবাদ ভবন ট্রাস্টের চেয়োরম্যান আব্দুল হামিদ চৌধুরী, সেক্রেটারী আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, জালালাবাদ শিক্ষা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন ও সেক্রেটারি জালাল আহমদ এক যুক্ত বিবৃতিতে সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদিরের বিদায়ে গভীর শোক প্রকাশ করা ছাড়াও তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। সেই সঙ্গে তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনাও জ্ঞাপন করেন। ব্যক্তি জীবনে সৈয়দ মুক্তাদির মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর ভাগ্নে ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status