খেলা

ইংরেজির প্রফেসর নয়, শুধুই ক্রিকেটার হবেন ইরফান

ইশতিয়াক পারভেজ

২৭ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

২০১২, হঠাৎ করেই হাঁটুর ইনজুরি। এরপর ১৩ মাস মাঠের বাইরে ইরফান শুক্কুর। ফিরে এসেও ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তবে পরের দু’টি মৌসুম দারুণ কাটে। সুযোগ হয় বিসিবি হাই পাফরম্যান্স ইউনিটে (এইচপি)। কিন্তু নিজের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ২০০৯ এ তার সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা অনেকেই তখন জাতীয় দলে নিয়মিত। তাই হতাশা বাড়তে থাকে তার। ২০১৭-তে আবারো আঘাত। এবার জাতীয় ক্রিকেট লীগে খেলারই সুযোগ পেলেন না। তবে মানেননি ইরফান। তখন থেকেই শুরু তার দিন বদলের লড়াই। নিজ বিভাগ চট্টগ্রামের সন্তান টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভকে অনুপ্রেরণা মেনে ছুটতে শুরু করলেন স্বপ্নের পিছু। কিন্তু দিন যত যায় বয়স তো বাড়ে! তবে ২৭-এ পা রেখেও আত্মবিশ্বাসটা কমেনি একফোঁটা। অবশেষে বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপে ব্যাট হাতে যেন খুঁজে পেলেন নিজেকে। ৫ ম্যাচে ৭১.৩৩ গড়ে করেছেন ২১৪ রান। তার উপরে শুধু মুশফিকুর রহীম। তবে ‘ব্যাটসম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’- পুরস্কারটা উঠেছে তার হাতেই। নিজের খোলস ছেড়ে বের হওয়ার রহস্য অকপটে জানিয়েছেন  দৈনিক মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: হঠাৎ করেই অন্য এক ইরফান শুক্কুর! রহস্যটা কী!
ইরফান: অনেক দিন থেকেই ক্রিকেট খেলছি। অনূর্ধ্ব-১৯ দিয়ে শুরু, ২০১০-এ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। ১১ বছর ধরে ক্রিকেট আমার ধ্যানজ্ঞান। তবে এত লম্বা সময়ে ক্রিকেটটা নিজের জন্য খেলিনি। আমার শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল দল যেখানে খেলাবে সেখানে নামবো। আর দলের যা প্রয়োজন তা করবো। যে কারণে ক্যারিয়ারে অনেক সেঞ্চুরি, ফিফটি হাত ছাড়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টস কাপেও একই লক্ষ্য ছিল। দেখেন ফাইনালে আমার কোনো চিন্তাই ছিল না সেঞ্চুরি হবে। এমনকি ৭৫ হওয়ার পরও ভাবিনি সেঞ্চুরির জন্য খেলবো। চিন্তা ছিল দলের স্কোরটা যেন দু’শর বেশি হয়।
প্রশ্ন: ১১ বছরের ক্যারিয়ারে শুধু আসা-যাওয়া, এর কারণ কী!
ইরফান: এটা সত্যি যে, আমার ক্যারিয়ারজুড়ে শুধু আসা-যাওয়া ছিল। ২০১২-তে ইনজুরির শিকার হই। হাঁটুর ইনজুরির কারণে প্রায় ১২/১৩ মাস মাঠের বাইরে ছিলাম। এরপর ফিরেও সুবিধা করতে পারিনি। তবে পরের দু’টি মৌসুম ভালো কাটে, সুযোগ হয় এইচপিতে। সেখানে অনেক পরিশ্রম করি। কিন্তু ২০১৭-তে আবারো বাদ জাতীয় লীগ থেকে। তখন ফিটনেস ইস্যু ছিল। আসলে যখনই ভালো সুযোগ এসেছে কোনো না কিছু একটা বাধা হয়েছে। ধারাবাহিক হতে পারিনি।
প্রশ্ন: আগের ও বর্তমান ইরফানের সঙ্গে পার্থক্য কী?
ইরফান: ২০১৭-তে যখন এনসিএল খেলতে পারলাম না তখন অনেক বেশি জেদ তৈরি হয় নিজের মধ্যে। আমি আমার খাওয়া থেকে শুরু করে লাইফ স্টাইল সব বদলে ফেলি। চিন্তা ছিল নিজেকে একজন সত্যিকারের ক্রিকেটারের মতো ফিট করে তুলবো। এই করোনার সময়টাতেও অনেক সময়  পেয়েছি নিজেকে নিয়ে কাজ করার। আমি ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। যা অনেকটা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।
প্রশ্ন: সাত নম্বর পজিশনের চ্যালেঞ্জ কতটা?
ইরফান: এই টুর্নামেন্টে আমাকে খেলতে হয়েছে ৭ নম্বরে, কাজটা খুব কঠিন। এই পজিশনে ব্যাট করলে নিজেকে নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। আমি ঠিক করেছিলাম, শতভাগ দলের জন্য খেলবো। যে পরিস্থিতিতে দলের যা দরকার, সেটিই করবো। নিজেরটা একদমই ভাবিনি। দলের কথা ভেবে খেলেই নিজের কাজ হয়ে গেছে।
প্রশ্ন: বয়স ২৭, এখনো কি বিশ্বাস করেন জাতীয় দলে একদিন সুযোগ হবে?
ইরফান: কেন নয়, আমি বিশ্বাস করি ক্রিকেটারের বয়স নয় ফিটনেস হলো আসল। আমি দাবি করতে পারি নিজেকে দেশের ফিট ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে। আর এই আসরে যে পারফরম্যান্স তাতে আমি বলছি না যে জাতীয় দলে আমার সুযোগ হবেই। কিন্তু এভাবে খেলতে পারলে হতেও পারে। তবে সত্যি কথা জাতীয় দলের স্বপ্নটা অনেক দিনের হলেও এখন আর ভাবি না। নিজের কাজটা করে যেতে চাই। বিশ্বাস করি, স্বপ্নটা পূরণ হবে।
প্রশ্ন: আপনার অনুপ্রেরণা কে?
ইরফান: সাকিব, তামিম ভাইদের দেখেই ক্রিকেট খেলার জন্য নিজেকে তৈরি করেছি। আমি যে স্কুলের ছাত্র ছিলাম সেখানে তামিম ভাইও পড়েছেন। তাকে যদিও আমরা পাইনি। কিন্তু হিরো মনে করেছি। তবে আমার অনুপ্রেরণা চট্টগ্রামের আরেক সন্তান মুমিনুল হক সৌরভ। আমি আসলে সৌরভ ভাইকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে মনে করি। কারণ তার ক্রিকেটার হওয়ার যে পরিশ্রম সেটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি যখনই পিছিয়ে যাই তখনই তার পরিশ্রমগুলো থেকে আমার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাই।
প্রশ্ন: ক্রিকেটার ইরফানের জন্য পরিবারের ভূমিকা কতটা?
ইরফান: শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমার পরিবার চায় আমি ক্রিকেটার হই। হ্যাঁ, পড়ালেখা করছি, ইংরেজিতে অনার্স করছি। অনেক গ্যাপ হলেও আর একটা মাত্র সেমিস্টার বাকি। আশা করি তাও শেষ করবো। আমরা দুই ভাই এক বোন। আমার বড় ভাই এমবিবিএস চিকিৎসক। বাবা মারা গেছেন, মা গৃহিণী। সবাই চান আমি ক্রিকেটারই হই।
প্রশ্ন: ক্রিকেট ছাড়লে কি ইংরেজির প্রফেসর হবেন?
ইরফান: না, না আমি প্রফেসর হতে চাই না। শুধুই ক্রিকেটার হতে চাই।
প্রশ্ন: লক্ষ্য কী?
ইরফান: যেভাবে খেলছি সেভাবে খেলে যাওয়া। আর নিজের ব্যাটিংয়ে উন্নতি করা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status